বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে
“ফরিদপুর
জেলে ফিরে এলাম। দেখি চন্দ্র বাবু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, অবস্থা খুবই খারাপ। তার
হার্নিয়ার ব্যারাম ছিল। পেটে চাপ দিয়েছিল, হঠাৎ নাড়ি উলটে গেছে। ফলে গলা দিয়ে মল
পড়তে শুরু করেছে। যে কোন সময় মারা যেতে পারেন। সিভিল সার্জন সাহেব খুব ভাল
ডাক্তার। তিনি অপারেশান করতে চাইলেন, কারন মারা যখন যাবেনই তখন শেষ চেষ্টা করে
দেখতে চান। আত্মীয়স্বজন বলতে কেউ নাই যে, তার পক্ষ থেকে অনুমতিপত্র লিখে দিবে।
চন্দ্র ঘোষ নিজের লিখে দিতে রাজি হলেন। বললেন, "কেউ যখন নাই তখন আর কি করা
যাবে।"
সিভিল
সার্জন সাহেব বাইরের হাসপাতালে নিতে হুকুম দিলেন। চন্দ্র ঘোষ তাকে বললেন,
"আমাকে বাইরের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার তো কেউ নাই। আমি শেখ মুজিবুর
রাহমানকে একবার দেখতে চাই, সে আমার ভাইয়ের মত। জীবনে তো আর দেখা হবে না।
"সিভিল
সার্জন এবং জেলের সুপারিন্টেনডেন্ট, তাদের নির্দেশে আমাকে জেলগেটে নিয়ে যাওয়া হল।
চন্দ্র ঘোষ স্ট্রেচারে শুয়ে আছেন। দেখে মনে হল আর বাঁচবেন না, আমাকে দেখে কেঁদে
ফেললেন এবং বললেন, "ভাই, এরা আমাকে "সাম্প্রদায়িক" বলে বদনাম দিল;
শুধু এই আমার দুঃখ মরার সময়। কোনোদিন হিন্দু মুসলমানকে দুই চোখে দেখি নাই। সকলকে
আমায় ক্ষমা করে দিতে বোলো। আর তোমার কাছে আমার অনুরোধ রইল, মানুষকে মানুষ হিসেবে
দেখো। মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য ভগবান ও করেন নাই। আমার তো কেউ নাই, আপন ভেবে
তোমাকেই শেষ দেখা দেখে নিলাম। ভগবান তোমার মঙ্গল করুক।"
এমনভাবে
কথাগুলো বললেন যে সুপারিন্টেনডেন্ট, জেলার সাহেব, ডিপুটি জেলার, ডাক্তার ও
গোয়েন্দা কর্মচারী সকলের চোখেই পানি এসে গিয়েছিল। আর আমার চোখেও পানি এসে গিয়েছিল।
বললাম, "চিন্তা করবেন না, আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। রাজনীতিতে আমার
কাছে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান বলে কিছু নাই। সকলেই মানুষ।" আর কথা বলার
শক্তি আমার ছিল না। শেষ বারের মত বললাম। "আল্লাহ করলে আপনি ভাল হয়ে যেতে
পারেন। " তাকে তারপর নিয়ে গেল।