কাফের অর্থ কি?
কাফির বা কাফের (['كافِر - কাফির] একটি আরবী শব্দ যার শাব্দিক অর্থ ঢেকে রাখা, লুকিয়ে রাখা এবং ব্যবহারিক অর্থ হল অবাধ্যতা, অকৃতজ্ঞতা, অস্বীকার করা।
ধর্মীয় পরিভাষায় যাকে আমরা অবিশ্বাসী, বিধর্মী বা নাস্তিক, অর্থাৎ যিনি ধর্মে বিশ্বাস করেন না বা নিজ ধর্ম সঠিকভাবে মেনে চলেন না, তাদেরকে আমরা কাফের বলে জানি'।
অপরদিকে এটাও দেখা জয় যে, এক তরীকার না হলে কিংবা মতের অমিল হলে আমাদের হুজুররা একেক সময় একেক জনকে কাফের বলে ফতোয়া দেয়। তার মতো আরেক হুজুরকেও কাফের আখ্যা দেয়।
তাহলে কাফের কারা?
এ ব্যাপারে আহসানুল হক অল্পবিস্তর লিখেছে। নিচে তার লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
===============
"কাফের কারা তা বোঝা মুশকিল!!
নবী মুহম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর ইসলাম অবমাননার অভিযোগ ওঠেনি বা ইসলাম বিরোধী খেতাব পাননি এমন ইসলামিক আইকন বা স্কলার খুব কমই আছেন।
হযরত উসমান (রাঃ) থেকে শুরু। মিশর, কুফা, বসরা থেকে আসা লাখ লাখ বিদ্রোহী মুসলমানের ভাষ্য ছিলো উসমান ইসলামের দুশমন। এই বিদ্রোহীদের অন্যতম নেতৃত্বে ছিল স্বয়ং হজরত আবু বক্বরের (রাঃ) পুত্র । করুনভাবে কুপিয়েছিলো তারা কোরান পাঠরত অশিতীপর বৃদ্ধ খলিফাকে। টেনে টেনে দাড়ি ছিঁড়েছিল। তারপর ড্রেনে ফেলে রেখেছিলো খলিফার লাশ টানা দুই দিন।
হযরত আলীও (রাঃ) মারা গেছেন একই অভিযোগে৷ আলীর অনুসারীদের একাংশ সিফফিনের সন্ধির পর খেপে গেলেন তার উপর। তাদের নাম দেওয়া হলো খারেজি। খারেজিদের ভাষ্যমতে আলী (রাঃ) এবং মুয়াবিয়া (রাঃ) দুজনই ইসলামের শত্রু। সেই সাথে প্রখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আসও (রাঃ)৷ এই তিনজনকে হত্যা না করলে তৎকালীন ইসলামী বিশ্বে শান্তি আসবেনা বলে তারা মনে করেছিলো। শেষে শুধু আলীকেই হত্যা করতে পেরেছিল তারা৷ হযরত আলীর লাশটা পর্যন্ত নিরুদ্দেশ করা হয়েছিলো।
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত যুবায়েরের (রাঃ) পুত্র এবং হজরত আবু বক্করের (রাঃ) মেয়ের ঘরের নাতি, উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশার (রাঃ) ভাগ্নে আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের (রাঃ) নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন উমাইয়াদের সিপাহশালার হাজ্জাজ বিন ইউসুফের হাতে৷ উমাইয়াদের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করেনি আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের৷ মূল অপরাধ ছিল এটা। তবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভাষ্য ছিলো "আব্দুল্লাহ আল্লাহর শত্রু, ইসলাম বিরোধী, শয়তান"। আব্দুল্লাহ হত্যা এড়াতে ক্বাবা ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। লাভ হয়নি। মিনজানিক দিয়ে ক্বাবা ঘরের অর্ধেকটাই উড়িয়ে দিয়েছিল হাজ্জাজের বাহিনী। এরপর আব্দুল্লাহকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মুসলাহ মানে কেটে কেটে তার অংগ প্রত্যংগ টুকরা টুকরা করা হয় তারই মা আসমা বিনতে আবু বক্করের সামনে।
এই হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কিন্তু সেই ব্যক্তি যিনি কুরআনে জের, জবর, পেশ তথা নুকতা যুক্ত করেন।
ইমাম বুখারিকেও ইসলাম বিরোধী তকমা নিতে হয়েছিলো। ইমাম শাফেয়ী মারা যান ইমাম মালেকীর অনুসারীদের গণপিটুনিতে। কারণ ধর্মীয় ইস্যুতে ইমাম শাফেয়ীর ব্যাখ্যা পছন্দ হয়নি মালেকীর অনুসারীদের। মালেকীর অনুসারিদের কাছে ইমাম শাফেয়ী একজন ইসলাম বিরোধী এবং কুরআনের অবমাননাকারী।
তালিকা লম্বা হয়ে যাবে। আপাতত এখানেই থামছি। প্রিয় ধর্মভীরু ভাই ও বোনেরা, যে উগ্রতার আগুনে ফু দিয়ে ওম নিচ্ছেন তার আগুন আপনাকেও পোড়াতে পারে একদিন। আপনি আস্তিক নাকি নাস্তিক, মাওলানা নাকি মুফতি, বাম নাকি ডান আগুন সেটা বুঝবেনা কিন্তু!!😤"
লেখক: Ahasanul Haque