সাড়ে ৩২ বছর কারাদন্ডপ্রাপ্ত নোবেল বিজয়ী মানবাধিকার নেত্রী নার্গেস মোহাম্মদী
নার্গেস মোহাম্মদী
নার্গেস মোহাম্মদী |
নোবেল বিজয়ী নার্গেস মোহাম্মদীকে
অতিরিক্ত আরো ১৫ মাসের কারাদণ্ড দিলো ইরান। গত বছর তাকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
গত বছর (২০২৩) শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইরানের খ্যাতিমান মানবাধিকারকর্মী
নার্গেস মোহাম্মদী। দেশটিতে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে
এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। নোবেল কমিটির প্রধান তাকে একজন ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত
করেছেন।
২০১০ সাল থেকে কারাগারেই কাটছে নার্গেসের জীবন। বন্দীদশা থেকেই তিনি
নারীদের ওপর নিপীড়নের বিষয়টি সামনে আনার লড়াই চালিয়ে গেছেন। তিনি ২০০৩ সালে শান্তিতে
নোবেলজয়ী আরেক ইরানি নারী শিরিন এবাদির গড়া মানবাধিকার সংস্থা “ডিফেন্ডারস অব হিউম্যান
রাইটস সেন্টারের” ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে
রয়েছেন।
শিরীন এবাদি |
মানবাধিকারকর্মী নার্গেসের স্বামী রাহমানিও একজন রাজনৈতিক অধিকারকর্মী। তিনিও ১৪
বছর কারাভোগের পর দুই সন্তান নিয়ে জার্মানে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।
৫১ বছর বয়সী নার্গিস এখন পর্যন্ত ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন। পাঁচবার
দোষী সাব্যস্ত হওয়া এই মানবাধিকারকর্মীকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে
তিনি ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের’ দায়ে কারাভোগ করছেন। এরমধ্যেই অতিরিক্ত আরো দেড় বছরের
কারাদন্ড দেয়া হলো তাকে।
তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে আছেন নার্গেস। গত বছর সেখান থেকে পাঠানো
এক চিঠিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের ঘটনায় আটক নারীরা কীভাবে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের
শিকার হচ্ছেন, তার বিস্তারিত তুলে ধরেছিলেন তিনি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কঠোর ‘পোশাকবিধি’ না মানার অভিযোগে রাজধানী তেহরানে
কুর্দি তরুণী মাসা আমিনিকে আটক করেছিল নীতি পুলিশ। এরপর তাদের হেফাজতে মাসার মৃত্যু
হলে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময় নোবেল কমিটির প্রধান বেরিত রেইস-অ্যান্ডারসেন
বলেন, “নারীদের প্রতি বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তিনি (নার্গিস)। আমি
যখন এই পুরস্কার ঘোষণা করছি, তখন তিনি কারাগারেই আছেন।“
নার্গিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শিরীন এবাদি। গতকাল ইরানের এই নোবেলজয়ী
বলেন, “নার্গিসকে চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করায় ইরানের নারীরা গণতান্ত্রিক
ও সমানাধিকার পাবেন বলে আশা করছি। এই পুরস্কারের জন্য নার্গিস মোহাম্মদী ও সব ইরানী
নারীকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই পুরস্কার ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানে সংঘটিত নারী
অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিকে সামনে আনবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে এই ব্যবস্থার
সংস্কার করা যাবে না।“
কে এই নার্গেস মোহাম্মদী?
নার্গেস সাফিয়ে মোহাম্মাদি (জন্ম
২১শে এপ্রিল ১৯৭২): একজন
ইরানী মানবাধিকার আন্দোলন কর্মী ও ডিফেন্ডার্স অভ দ্য হিউম্যান রাইটস সেন্টার সংস্থার
উপপ্রধান। সংস্থাটির প্রধান আরেক নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শিরীন এবাদি।
নার্গেস ২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল
পুরস্কার লাভ করেন। "ইরানে নারীদের উপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও সবার জন্য
মানবাধিকার ও মুক্তির সমর্থনে কাজ করার জন্য" তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১৬
সালের মে মাসে তাকে তেহরানে ১৬ বছরের জন্য কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। "মৃত্যদণ্ড
রদ করার পক্ষে একটি মানবাধিকার আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য প্রচারাভিযান চালানো"র
জন্য তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়। ২০২২ সালে তিনি বিবিসি-র
জরিপে ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পান।
পরিচয়
নার্গেস মোহাম্মাদি ২১ এপ্রিল ১৯৭২ সালে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইরানের জাঞ্জানে, কোরভেহ, কারাজ ও ওশনাভিয়েহ শহরে বেড়ে ওঠেন। তিনি ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করে একজন পেশাদার প্রকৌশলী হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তিনি শিক্ষার্থীদের সংবাদপত্রে নারীর অধিকার সমর্থনকারী নিবন্ধ লিখেছিলেন। তিনি রাজনৈতিক ছাত্র গোষ্ঠী তাশাক্কোল দানেশজুয়ি রোশানগারান ("আলোকিত ছাত্র গোষ্ঠী") এর দুটি সভায় গ্রেপ্তার হন। তিনি একটি পর্বতারোহণ গোষ্ঠীতেও সক্রিয় ছিলেন, কিন্তু পরে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে পর্বতারোহণে যোগদান তার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
নার্গেস মোহাম্মাদী বেশ কয়েকটি সংস্কারপন্থী সংবাদপত্রের সাংবাদিক
হিসেবে কাজ করেন। “দ্য রিফর্মস”, “দ্য স্ট্র্যাটেজি এন্ড দ্য ট্যাক্টিস” নামে
রাজনৈতিক প্রবন্ধের একটি বই প্রকাশ করেন। ২০০৩ সালে তিনি নোবেল শান্তি
পুরস্কার বিজয়ী শিরীন এবাদির নেতৃত্বে মানবাধিকার কেন্দ্র “ডিএইচআরসি”তে যোগদান
করেন। পরে তিনি সংগঠনটির সহ-সভাপতি হন।
১৯৯৯ সালে তিনি সহকর্মী সংস্কারপন্থী সাংবাদিক তাগি রাহমানিকে বিয়ে
করেন। তিনিও প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হন। রহমানি ১৪ বছরের কারাদণ্ড ভোগ
করার পর ২০১২ সালে ফ্রান্সে চলে যান এবং নার্গেস তার মানবাধিকারের কাজ চালিয়ে যান।
নার্গেস মোহাম্মাদি ও রাহমানির যমজ দুটি সন্তান রয়েছে।