বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ (পর্ব-৩৮) – মরক্কো

 

লতিফা জবাদি

লতিফা জবাদি


লতিফা জব্বাদি (জন্ম ১৯৫৫): একজন মরক্কোর নারীবাদী কর্মী এবং লেখিকা। তিনি পারিবারিক জীবন পরিচালনাকারী মরক্কোর আইনি কোড “মুদাওয়ানা” সংস্কারের মাধ্যমে নারীদের অধিকারের উন্নতিতে সাহায্য করার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন


লতিফা জব্বাদি ১৯৫৫ সালে দক্ষিণ মরক্কোর তিজনিত শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার নিজ শহরে এবং পরে আগদিরে তার শিক্ষা সমাপ্ত করেন। একজন ছাত্র হিসাবে তিনি সেই সময়ের যুব কর্মী আন্দোলনের অংশ হতে উত্সাহী হয়েছিলেন। তিনি একটি গোপন কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগদান করেন, যার নাম "মার্চ ২৩" ২৩ মার্চ ১৯৬৫-এর পরে ক্যাসাব্লাঙ্কায় ছাত্র বিক্ষোভ হয়। লক্ষ্য ছিলো সহিংস উপায়ে সরকার পতন।

 

১৯৭২ সালে জবাদি অল্প সময়ের জন্য গ্রেফতার হন। ১৯৭৭ সালে দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন। তাকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিপন্ন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় এবং বিনা বিচারে ৩ বছর আটক রাখা হয়। তাকে ক্যাসাব্লাঙ্কার একটি নির্যাতন কেন্দ্রে রাখা হয়। তিনি পরে বর্ণনা করেন যে, নির্যাতনকেন্দ্রে ভিন্ন লিঙ্গের মানুষের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হতো। সেখানে নারী রাজনৈতিক বন্দীদেরও পুরুষদের মতো নির্যাতন করা হতো। কারাগার থেকে মুক্ত হলে সুস্থ্য হওয়ার পর তিনি তার পূর্বের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পূনরায় শুরু করেন।


কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর জাবাদি ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে ‘মরক্কো অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটসে’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন ছিলেন।

 


তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মরক্কোর প্রথম নারীবাদী ম্যাগাজিন “৮ মার্স”-এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। “৮ মার্স” ("৮ ই মার্চ" আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে) ৮ ই মার্চ আন্দোলনে বিকশিত হয়েছিল, যা ১৯৮৭সালে “ইউনিয়ন ডি ল'অ্যাকশন ফেমিনিন (দ্য ইউনিয়ন অব উইমেনস অ্যাকশন, বা ইউএএফ) নামকরণ করা হয়। জব্বাদি সেই সংস্থাটিকে সহায়তা করেন এবং এর সভাপতি হন।

 

এর মাধ্যমেই তিনি ১৯৯২ সালে ১ মিলিয়ন স্বাক্ষর সহ একটি পিটিশনের সাথে জড়িত হয়েছিলেন, যাতে কর্তৃপক্ষের কাছে মরক্কোর পারিবারিক জীবন পরিচালনাকারী আইনি কোড “মুদাওয়ানা”র সংস্কারের দাবি করা হয়েছিল। পিটিশনের সফল সমাপ্তির পরের বছর কোডে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন আসে। কিন্তু আরও তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল হলো যে, নারীদের সমস্যাগুলি আরও বিস্তৃতভাবে দেশের রাজনৈতিক আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।

 

১৯৯৮ সালে যখন একটি সমাজতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে তখন জব্বাদি একটি “ইউএএফ” প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবদেররহমান ইউসুফি’র সাথে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রধান দাবিগুলি নোট করেন।

 

যাইহোক, ইসলামী দলগুলির চাপের কারণে, পরিবর্তনগুলি চূড়ান্ত করার জন্য রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। অবশেষে ২০০৪ সালে একটি নতুন “মুদাওয়ানা” গৃহীত হয়, যা বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং অন্যান্য পারিবারিক বিষয়ে নারীদের অধিকারকে উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত করে।

 

জব্বাদি তখন ইক্যুইটি অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের সদস্য হন। তিনিই কমিটির একমাত্র মহিলা যিনি মরক্কোতে কয়েক দশকের রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও দমন-পীড়নের পরের পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন।

 

২০০৫ সালে তিনি মরক্কোতে মহিলাদের অধিকারের উন্নতিতে অবদানের জন্য আমেরিকান এনজিও ভাইটাল ভয়েসেস দ্বারা “গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডে” সম্মানিত হন।


রাজনৈতিক জীবন




নতুন “মুদাওয়ানা” বাস্তবায়নের পর জবাদি আইন প্রণয়নে আরও সরাসরি জড়িত হয়ে পড়েন। ২০০৭ সালে সংসদ নির্বাচনের জন্য কমপক্ষে ১০% নারীর কোটা গৃহীত হয়েছিল। “সোশ্যালিস্ট ইউনিয়ন অফ পপুলার ফোর্সেস” পার্টির সমর্থনে তিনি সেই বছর প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রাবাত-ওশান জেলার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

 

মরোক্কান হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে তার প্রবেশ তাকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বৃত্তায়ন সম্পর্কে আরও স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। হাউসের ব্যুরোতে কোনও মহিলা ছিলেন না এবং কোনও মহিলার নেতৃত্বে কোনও সংসদীয় কমিটি ছিল না। মহিলাদের সমস্যাগুলি সামনে আনার জন্য কারো কোন উদ্যোগ ছিল না।

 

নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধিরা একসাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তারা "সংসদীয় নারী ফোরাম" গঠন করেন। তারা ২০০৮ সালের পৌরসভা নির্বাচনের জন্য ১২% নারী কোটা প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছিলো।

২০১১ সালে লতিফা জবাদি রাজনীতি ছেড়ে দেন।

 

 সূত্রঃ ইন্টারনেট

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url