বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ (পর্ব-৩৯) – পাকিস্তান
ফাতেমা
জিন্নাহ
ফাতেমা জিন্নাহ |
ফাতেমা
জিন্নাহ (৩১ জুলাই ১৮৯৩ - ৯ জুলাই ১৯৬৭): ছিলেন একজন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গভর্নর-জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছোট বোন। তিনি
১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।
১৯২৩
সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেন্টাল ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি অবিভক্ত ভারতের প্রথম
মহিলা দন্তচিকিৎসক হন। তিনি তার বড় ভাই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং উপদেষ্টা
হয়েছিলেন। মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ পরে পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন। পাকিস্তানের
স্বাধীনতার পর ফাতেমা জিন্নাহ পাকিস্তান মহিলা সমিতির সহ-প্রতিষ্ঠা করেন যা নবগঠিত
দেশে নারী অভিবাসীদের বসতি স্থাপনে অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে। তিনি তার ভাইয়ের মৃত্যুর
আগ পর্যন্ত তার নিকটতম আস্থাভাজন ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ফাতিমাকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত
জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জাতির উদ্দেশ্যে তার ১৯৫১ সালের
রেডিও ভাষণ লিয়াকত প্রশাসন দ্বারা ব্যাপকভাবে সেন্সর করা হয়েছিল।
ফাতেমা
জিন্নাহ ১৯৫৫ সালে “মাই ব্রাদার” শিরোনামে একটি বই লিখেছিলেন। কিন্তু এটি সেন্সরশীপের
কারণে ৩২ বছর পরে ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয়। লিয়াকত আলি সরকার ফাতিমাকে "জাতীয়তাবিরোধী
উপাদান" হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল। এমনকি বইটির প্রকাশিত হওয়ার সময় পাণ্ডুলিপি
থেকে বেশ কিছু পৃষ্ঠা বাদ দেয়া হয়েছিল।
ফাতেমা
১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণের
জন্য তার স্ব-আরোপিত রাজনৈতিক অবসর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনি জনপ্রিয় ভোটে জয়ী
হলেও ইলেক্টোরাল কলেজে আইয়ুব খানের কাছে হেরে যান।
ফাতেমা
৯ জুলাই ১৯৬৭ তারিখে করাচিতে মারা যান। তার মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কিছু রিপোর্টে
অভিযোগ করা হয়েছে যে তিনি অস্বাভাবিক কারণে মারা গেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা তদন্ত
দাবি করেছিল। তবে সরকার তাদের অনুরোধে বাধা দেয়। তিনি পাকিস্তানের সবচেয়ে সম্মানিত
নেতাদের একজন। করাচিতে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রায় ৫ লক্ষ লোক উপস্থিত ছিলো।
তিনি
“মাদার-ই-মিল্লাত ("মাদার অফ দ্য নেশন")” এবং “খাতুন-ই-পাকিস্তান
("পাকিস্তানের লেডি")” নামে পরিচিত। তার সম্মানে পাকিস্তানের অনেক প্রতিষ্ঠান
এবং পাবলিক স্পেসের নামকরণ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ ভারতের বোম্বে প্রেসিডেন্সির সময় গুজরাটের কাথিয়াওয়ারে ‘জিন্নাভাই পুঞ্জা’ এবং তার স্ত্রী মিথিবাইয়ের সাত সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ফাতিমা ৩১ জুলাই ১৮৯৩ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। ফাতেমার পারিবারিক ইতিহাস বিভিন্ন সূত্রের মধ্যে বিতর্কিত। ফাতিমার ছয় ভাইবোন ছিল: মোহাম্মদ আলী, আহমদ আলী, বুন্দে আলী, রহমত আলী, মরিয়ম এবং শিরিন জিন্নাহ। তার ভাইবোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নিকটতম যিনি ১৯০১ সালে তাদের পিতার মৃত্যুর পর তার অভিভাবক হয়েছিলেন।
তিনি ১৯০২ সালে বোম্বেতে বান্দ্রা কনভেন্টে
যোগদান করেন। ১৯১৯ সালে তিনি কলকাতার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
হন। সেখানে তিনি ড. আর. আহমেদ ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। তিনি স্নাতক হওয়ার পর ১৯২৩
সালে বোম্বেতে একটি ডেন্টাল ক্লিনিক খোলেন।
ফাতেমা ১৯১৮ সাল পর্যন্ত তার ভাই জিন্নাহর
সাথে থাকতেন। জিন্নাহ তখন রতনবাই পেটিটকে বিয়ে করেছিলেন। ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে
রতনবাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি তার ক্লিনিক বন্ধ করে দেন। তিনি তার ভাই মুহম্মদ আলী জিন্নাহর
বাংলোতে তার ভাইঝি দিনা জিন্নাহর দেখাশোনার জন্য চলে যান এবং তার বাড়ির দায়িত্ব নেন।
এই পরিবর্তনটি আজীবন সাহচর্য্যের দ্বার খুলে দেয় যা ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮-এ তার ভাইয়ের
মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
ইসলামাবাদে পাকিস্তান মনুমেন্টে ফাতেমা জিন্নাহ ও তার ভাই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মূর্তি |
ফাতেমা তার ভাইয়ের সাথে তার প্রতিটি জন সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন।
তিনি ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি ভাষা শিক্ষ করেন। ফাতেমা
সেখানে ৮ বছর বসবাস করেন। মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ভারতে ফিরে আসার পর ভারতীয়
মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করতে প্রচেষ্টা শুরু করেন।
১৯৪৭ সালে বৃটিশ কর্তৃক ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ফাতেমা মহিলা
ত্রাণ কমিটি গঠন করেন। পরবর্তীতে সেটি রানা লিয়াকত আলী খান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত “অল
পাকিস্তান উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন (APWA)”তে পরিণত হয়। ফাতিমা পাকিস্তানের নতুন
রাষ্ট্রে মুহাজিরদের পূনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯৬৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
১৯৫৪ সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে তার সংক্ষিপ্ত সফর ব্যাতীত
পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর থেকে তিনি রাজনীতিতে অনুপস্থিত ছিলেন। আইউব খান কর্তৃক
সামরিক আইন জারির পর তিনি একবার তাদের মঙ্গল কামনা করেছিলন। তবে সামরিক আইন
প্রত্যাহার করার পর তিনি বিরোধীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। কারণ, তিনি
গণতান্ত্রিক আদর্শের পক্ষে ছিলেন।
তার প্রিয় ভাইয়ের কারণে তাকে উচ্চ মর্যাদা দেয়া হতো এবং জনগণের
আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে দেখা হতো।
১৯৬০-এর দশকে ফাতেমা রাজনীতির সন্মুখভাগে আসেন। তিনি পাকিস্তানের
সম্মিলিত বিরোধীদলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি তার
প্রতিপক্ষ আইউব খানকে স্বৈরশাসক হিসেবে বর্ণনা করেন। তার প্রথম মিছিলে প্রায়
২৫০,০০০ লোক তাকে দেখতে ঢাকায় ভিড় করেছিলো। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে প্রায়
১০ লক্ষ লোক বিভিন্ন রেল স্টেশনে জমায়েত হয়েছিলো। তার ট্রেন “ফ্রিডম স্পেশাল” ২২
ঘন্টা দেরিতে চট্টগ্রাম পৌঁছেছিলো, কারণ প্রত্যেক স্টেশনে তাকে নেমে কিছু বলার
জন্য অপেক্ষমান জনতা অনুরোধ করেছিলো। জনতা তাকে “মাদার-ই-মিল্লাত” বলে অভিনন্দন
জানায়। পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকার জন্য ফাতেমা “মাদার-ই-মিল্লাত
অর্থাৎ জাতির মা হিসেবে আখ্যা পেয়েছিলেন।
৭১ বছর বয়সে তিনি ১৯৬৫ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার
বক্তৃতায় তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, সিন্ধু নদীর পানি বিরোধে ভারতের সাথে চুক্তিতে
এসে আইউব খান নদীগুলির নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।
নির্বাচনে কিছু প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও অল্পের জন্য হেরে যান
ফাতিমা। নির্বাচনে জনগণের সরাসরি ভোট দেয়ার প্রক্রিয়া ছিলো না। সাংবাদিক এবং
ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন, যদি সরাসরি নির্বাচন হতো তাহলে তিনি জয়ী হতে পারতেন।
১৯৬৫ সালে ফাতেমা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত
নিলে নির্বাচনী দৃশ্যপট পাল্টে যায়। তিনি স্বৈরশাসক এবং স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট আইউব
খানের “পরোক্ষ নির্বাচনে”র চ্যালেঞ্জ করেন।
১৯৬৫ সালে ভোটের জন্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ভোট শুরু হওয়ার আগে “মৌলিক
গণতন্ত্র” ঘোষণা করা হয়েছিলো, যাতে প্রেসিডেন্ট এবং বিধানসভা নির্বাচনের জন্য
ইলেক্টোরাল কলেজ গঠন করা হয়েছিলো। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল অংশগ্রহণ করেছিলো,
“কনভেনশন মুসলিম লীগ” এবং সম্মিলিত বিরোধী দল। সম্মিলিত বিরোহী দল ৫ টি প্রধান দল
নিয়ে গঠিত হয়েছিলো। এদের ৯ দফা কর্মসূচী ছিলো, যার মধ্যে ছিলো সরাসরি নির্বাচন,
প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার পূনরুদ্ধার এবং ১৯৬২ সালের সংবিধানকে অনুসরণ করা।
সম্মিলিত বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ ছিলো না। তারা নিজেদের মধ্য থেকে প্রেসিডেন্ট
পদপ্রার্থী মনোনীত করতে না পারায় ফাতেনা জিন্নাকে বেছে নেয়।
০২ জানুয়ারি ১৯৬৫ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রার্থী হিলেন
৪ জন আইউব খান, ফাতিমা জিন্নাহ ও দুইজন অখ্যাত ব্যাক্তি, যাদের কোনো দলের সাথে
সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। প্রচারণার সময় ছিলো মাত্র ১ মাস। ফাতিমার জনসভাগুলিতে যোগ
দিতে জনগণকে বাধা প্রদান করা হতো।
আইউব খান অত্যন্ত নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন। সংবিধানের দ্বিত্য
সংশোধনী তাকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পথ সুগম করে দিয়েছিলো। দ্বিতীয়
সংশোধনীতে প্রেসিডেন্টকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেয়া হয়, যা তিনি তখন ভোগ করছিলেন।
নির্বাচনের সময় সরকারি সংস্থাগুলি সম্পূর্ণ তার নিয়ন্ত্রণে ছিলো। নির্বাচনের সময়
তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করছিলেন। সামরিক অভ্যুত্থানের
মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি নিজের দল “কনভেনশন মুসলিম লীগ” গঠন করেন এবং
সেই দলের ব্যানারে নির্বাচন করেন। ক্ষমতায় থেকেই তিনি নির্বাচনে জেতার উপযোগী আইন
জারী করেছন (অবিকল জেজি’র মতো)। তিনি মোল্লাদের দ্বারা জারি করেন যে, “ইসলাম একজন
মহিলাকে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান হওয়ার অনুমতি দেয় না”!
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব জর্জরিত পাকিস্তানে
ফাতিমা নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নেন। বড় বড় শহরের রাস্তায়, এমনকি একটি
মুসলিম দেশের গ্রামীণ এলাকায় তার চলাফেরা করার দৃশ্য তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি
করেছিলো। তিনি আইয়ুব খানকে স্বৈরশাসক বলে ঘোষণা করেছিলেন। সিন্ধু নদীর পানি
বিরোধে ভারতের সাথে আইউবের চুক্তির বিরোধী প্রচারণা জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ
উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্ত শহরে প্রচুর জনসমাবেশ
ঘটাতে পেরেছিলন। প্রচারাভিযান অবশ্য বেশ কিছু ত্রুটির সম্মুখীন হয়েছিল। একটি
অন্যায্য ও অসম নির্বাচনী প্রচারণা, দুর্বল অর্থব্যবস্থা এবং মৌলিক গণতন্ত্র
ব্যবস্থার মাধ্যমে পরোক্ষ নির্বাচন ছিল তার কিছু মৌলিক সমস্যা। তিনি রাজনৈতিক
দলগুলির একটি কনসোর্টিয়াম দ্বারা সমর্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের দুটি বৃহত্তম শহর
করাচি এবং ঢাকায় তিনি জিতেছিলেন।
মার্কিন সাময়িকী “টাইম” ১৯৬৫ সালের নির্বাচনী প্রচারণার প্রতিবেদন
করার সময় লিখেছিল, “জিন্নাহ তার বিনয় এবং দেশপ্রেমের উপর আইয়ুব খান এবং তার
সহযোগীদের দ্বারা আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছিলেন।“
১৯৬৫ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফাতিমা জনপ্রিয় ভোটে জয়ী হন।
তবে নির্বাচন-পরবর্তী কারচুপি, জবরদস্তি এবং ইলেক্টোরাল কলেজের কারসাজির মাধ্যমে
আইয়ুব খান নিজেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,
সরাসরি ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি জয়ী হতেন। ইলেক্টোরাল কলেজে
মাত্র ৮০ হাজার “বেসিক ডেমোক্র্যাট” ছিল, যাদের সহজেই বাগে নিতে পেরেছিল আইউব।
দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে একজন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার
কারণেই এই নির্বাচনের গুরুত্ব ছিল। মাওলানা মওদুদীর নেতৃত্বাধীন জামায়াত-ই-ইসলামী
সহ গোঁড়া ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলি, যারা বারবার ঘোষণা করেছিল যে, “একজন মহিলা
মুসলিম দেশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে না” - তারাও তাদের অবস্থান পরিবর্তন
করে ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করেছিলো। ১৯৬৫-এর নির্বাচন দেখিয়েছিল যে, উচ্চ পদে
অধিষ্ঠিত মহিলাদের বিরুদ্ধে জনগণের কোনো পক্ষপাত ছিলো না এবং দেশের রাজনীতিতে
মহিলারাও মূল ভূমিকায় থাকতে পারে।
একটি মামলা চলাকালীন মাতলুবুল হাসান সৈয়দ সাক্ষ্য দেন যে জেনারেল
আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ফাতিমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারণার সময় কিছু স্থানীয়
শিয়া নেতারা যখন তাকে বলেছিলেন, তারা আইয়ুবকে ভোট দেবেন,- তিনি দাবি করেছিলেন যে
তিনি শিয়া হওয়ায় তিনি তাদের আরও ভালো প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।
লিয়াকত এইচ. মার্চেন্টের মতে "আদালত কায়েদ এবং তার বোন
ফাতিমার স্বীকৃত অ-সাম্প্রদায়িক পাবলিক অবস্থানে আরো আস্থা রাখতে আগ্রহী
ছিল"। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তার বোন উভয়ই “সতর্কতার সাথে সাম্প্রদায়িক বিষয়
এড়িয়ে গেছেন।"
লন্ডনে ফাতেমা জিন্নাহ ও তার ভাই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মোমের মূর্তি |
ফাতিমা জিন্নাহ লিখিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র অসমাপ্ত জীবনী “মাই
ব্রাদার” ১৯৮৭ সালে কায়েদ-ই-আজম একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত হয়।
মৃত্যু
ফাতেমা জিন্নাহর সমাধি |
ফাতিমা জিন্নাহ ১৯৬৭ সালের ০৯ জুলাই করাচিতে মারা যান। মৃত্যুর
আনুষ্ঠানিক কারণ ছিল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ। কিন্তু গুজব রয়ে গেছে যে, লিয়াকত
আলী খানকে হত্যাকারী একই দল তাকে তার বাড়িতে হত্যা করেছিল। ২০০৩ সালে, তার
ভাগ্নে, আকবর পীরভাই, তাকে হত্যা করার পরামর্শ দিয়ে বিতর্কের পুনঃপ্রবর্তন করেন। ১৯৬৭
সালে ফাতিমা জিন্নাহ মারা গেলে তার ব্যক্তিগত শেষকৃত্য শিয়া রীতি অনুযায়ী সম্পন্ন
হয় এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দাফন করা হয়। তাকে করাচির মাজার-ই-কায়েদে তার
ভাই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাশে সমাহিত করা হয়।
সম্মান এবং উত্তরাধিকার
ফাতেমা জিন্নাহ পার্কে ফাতেমার একটি স্মৃতিস্তম্ভ |
ফাতিমা জিন্নাহ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এবং পাকিস্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ
নারী ব্যক্তিত্বদের একজন হিসেবে বিবেচিত হন। ফাতিমা জিন্নাহকে নারী অধিকার জাগরণের
উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়।
টাকার বিপরীতে ২০২২ সালে পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংক কর্তৃক জারি করা
৭৫ রূপির স্মারক নোট যাতে সৈয়দ আহমেদ খান, ফাতিমা জিন্নাহ, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং মুহাম্মদ
ইকবালের ছবি প্রদর্শন করে (বাঁ থেকে ডানে)।
ফাতিমা পাকিস্তানের জাতীয় প্রতীক হয়ে দাঁড়ান। আইয়ুব খানের বিপরীতে থেকেও তিনি তার মৃত্যুর পরে সমাজ থেকে অসাধারণ সম্মান পেয়েছেন, অথচ আইউব খানকে এখনও কোনো সম্মান দেয়া হয়নি।
জিন্নাহভাই পুঞ্জা-পিতা |
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ-ভাই |