বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ (পর্ব-২৮)-মিশর
ফরিদা এল চৌবাচি
মিশরের ডিপুটি স্পীকার ফরিদা এল চৌবাচি |
ফরিদা এল চৌবাচিঃ ছিলেন মিশরীয় পার্লামেন্টারিয়ান এবং ডিপুটি স্পীকার। তিনি একটি খৃষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন।
৮৩ বছর বয়সী ফরিদা এল
চৌবাচি ২০২০ সালে যখন মিশরে পার্লামেন্টের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তখন তিনি
জয়ের আশা করেননি। নির্বাচিত হয়ে ৪২ বছরের মধ্যে প্রথম মহিলা হিসেবে তিনি পার্লামেন্টের
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। পার্লামেন্টে তার বক্তৃতা মিশরে ইতিহাস তৈরি করেছে।
২০২০ সালের সংসদীয় নির্বাচনে
রেকর্ড সংখ্যক মহিলা আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হওয়ার পরে এর ৫৯৬ সদস্যের এক চতুর্থাংশেরও
বেশি মহিলা ছিলেন। মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল
ফাত্তাহ আল-সিসি নির্বাচিত সদস্য ছাড়াও আরও ১৪ জন মহিলা আইন প্রণেতা নিয়োগ করেন।
ফলে আইনসভায় মোট মহিলার সংখ্যা ১৬২ হয়। আগের আইনসভায় মাত্র ৮৯ জন মহিলা ছিল।
ফরিদা এল চৌবাচি বলেন; “এটি
একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল। আমি কখনই এটা আশা করিনি, কিন্তু এটা প্রমাণ করেছে, কিভাবে
রাজনৈতিক ও সংসদীয় জীবনে নারীর ভূমিকা পরিবর্তিত হচ্ছে”।
"এখন নারীরা সব জায়গায় ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে - সংসদে,
মন্ত্রিসভায় - এবং এটি নারীদের প্রতি রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি পরিবর্তনের
ইঙ্গিত দেয়।"
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন লিখেছিলো, “চৌবাচি একজন সুপরিচিত সাংবাদিক
ও রাজনৈতিক লেখক”।
২০১৭ সালের একটি জরিপে কায়রোকে মহিলাদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক মেগাসিটি
হিসাবে দেখা গেছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সাক্ষাত্কারে মিশরের ৯৯% মহিলা যৌন হয়রানির
অভিযোগ করেছে৷
সামাজিকভাবে রক্ষণশীল, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে নারীরা আরও সাহসী
হয়ে উঠছে। নির্যাতনের শিকার শত শত নারী সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌন নিপীড়নের নিন্দা এবং
বিগত বছরের #MeToo আন্দোলনে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে বিতর্ক করেছে।
যে দেশে নারীরা দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাবঞ্চিত বোধ করে আসছে, সেখানে সংসদে
১৪৮ জন নারী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় ইঙ্গিত দেয় যে, গভীরভাবে প্রোথিত পুরুষতান্ত্রিক
মনোভাব পরিবর্তন হচ্ছে।
চলতি সংসদে তাদের সংখ্যা বেড়ে ১৬২ হয়েছে। তাদের মধ্যে ‘ডোরিয়া শরফ’ আল-দিন একজন বিখ্যাত টিভি
উপস্থাপক যিনি ২০১৩ সালে মিশরের প্রথম মহিলা তথ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।
'নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ক্ষতিকারক অভ্যাস সম্পর্কিত এনজিও ইউনিয়নে'র প্রধান রান্ডা ফখর এল দীন বলেন, "আশা করা যাচ্ছে, রেকর্ড সংখ্যক মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় মহিলাদের সামাজিক মর্জাদা আরও বৃদ্ধি করবে, বিশেষ করে সমাজের সাম্প্রতিক ওবস্থায়"।
তিনি আরও বলেন, বিপুল
সংখ্যক নারী অধিকার বিল পার্লামেন্টে রয়েছে যা সংসদীয় বিতর্কের অপেক্ষায় আছে।
ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ
এল চৌবাচিকে যখন প্রবীণ সদস্য হিসাবে পার্লামেন্টের-এর প্রথম বৈঠকে
সভাপতিত্ব করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তিনি তার স্বভাবব্জাত নম্র্তা সম্পর্কে
কথা বলেছিলেন।
“আমি অভিজাত পরিবারের নই। আমি একজন শ্রমিকের মেয়ে এবং আমি নয় বছর
বয়স থেকে কাজ করছি”। তিনি বলেন, “তার বাবা ব্যবসায় প্রচুর অর্থ হারানোর পরে কীভাবে
তিনি তার পরিবারকে সমর্থন করার জন্য ফরাসি ভাষা শেখা শুরু করেছিলেন”।
সংসদের ডেপুটি স্পিকারদের একজন হিসাবে তার প্রার্থীতা ঘোষণা করার আগে
তিনি বলেছিলেন, "আমি সবসময় নিজের দ্বারা অর্থ উপার্জন করতে চেয়েছি”।
চৌবাচি কয়েক দশক ধরে সংবাদপত্রের কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন এবং সরকারি মালিকানাধীন নীল নিউজ চ্যানেলে ‘ওয়ান্টেড ফর কমেন্টস’ নামে একটি কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স শো হোস্ট করেছেন।
তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের
কঠোর সমালোচক ছিলেন। ব্রাদারহুড পার্টি ২০১১ সালের বিদ্রোহের পরে রাষ্ট্রপতি হোসনি
মোবারককে উৎখাত করার পর মিশরের প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল।
পরে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ২০১৩ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান সিসি কর্তৃক মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং এর পরেই তা বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
মুসলিম ব্রাদারহুডের শাসনামলে কট্টরপন্থী পণ্ডিতদের মন্তব্য উল্লেখ
করে চৌবাচি বলেন, "এই যুগে নারীরা রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করতে পারে না বা তাদের
কণ্ঠস্বর শোনা উচিত নয়, - এমন কথা বলার কোনো সুযোগ নেই”।
এনজিও সংগঠন ‘কায়রো ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ল’-এর পরিচালক
এন্টেসার এল সাইদ বলেন, “যেসব নারীরা রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান তারা এখনও ভয়ঙ্কর
চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। মহিলা রাজনীতিবিদ বা সংসদ সদস্যদের সামাজিক স্টেরিওটাইপ
এবং উপলব্ধি এখনও অনেক নারীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেয়”। তিনি
আরও বলেন, “এটি নারীদের জন্য সাহস জোগায়, যারা রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করে - যা সত্যিই
পরিবর্তন আনছে”।
একজন আইনপ্রণেতা হিসেবে, চৌবাচি বলেন, তিনি সমস্ত মিশরীয়দের জন্য মানবাধিকারের উন্নতি করতে চাইবেন।
তিনি বলেন, "আমি
নাগরিকদের জন্য কাজ করবো, পুরুষ বা মহিলা যাই হোক না কেন এবং আমি আশা করি তারা উভয়েই
তাদের বৈধ অধিকার পাবে”।
সূত্রঃ ইন্টারনেট