আনারকলি - পৈশাচিক যৌনতার নিষ্ঠুর বলির শিকার

আনারকলি


 শরিফাতুন্নেসা বা আনারকলি ছিল বাদশাহ আকবরের হেরেমের পাঁচ হাজার যৌনদাসীর মধ্যে, সবচেয়ে সুন্দরী নারী! 



সুতরাং সম্রাট পিতার একজন সামান্য 'বাইজি'র সাথে, ভবিষৎ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী, শাহজাদা জাহাঙ্গীর প্রেম করে ফেলবে, এটা আকবরের পক্ষে 'হজম' করা মোটেই সম্ভব ছিলোনা!


কিন্তু শাহজাদা সেলিম (জাহাঙ্গীর) যদি আনারকলির সাথে 'প্রেম' না করে, শুধুমাত্র জৈবিক সম্পর্ক বজায় রাখতো! এতে অবশ্য বাদশাহ আকবর মোটেই 'মাইন্ড' করতেন না! কিন্তু আনারকলিকে মরতে হলো, শুধু এই একটি কারণ যে, সে নিজেও শাহজাদা'র প্রতি প্রেমিকা রূপে 'দুর্বল' হয়ে পড়েছিল! 



কিন্তু ইতিহাস থেকে আমরা জানি; শরিফাতুন্নেসা নামক ১৫ বছরের একটি 'ভয়ংকর সুন্দরী' বালিকা ইরানের এক বড়ো সওদাগরের কন্যা ছিল! সে তার পিতার সাথে বাণিজ্য সফরের সময়, জলদস্যুরা তার পিতাকে হত্যা করে, তাকে লুট করে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের দাস বাজারে বিক্রি করে দেয়! 


অতঃপর একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী লোক, শরিফাতুন্নেসাকে ক্রয় করে, তুরস্কের সুলতানকে 'গিফট' হিসাবে দিয়ে দেয়! এরপর তুরস্করের অটোম্যান সুলতান তার 'বন্ধুবর' মোঘল সম্রাট আকবরের কাছে মেয়েটিকে 'উপঢৌকন' স্বরূপ পাঠিয়ে দেন! 


সম্রাট আকবর কিশোরী শরিফাতুন্নেসা কে দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়ে পড়েন যে; আকবর তার জীবনীতে লিখেছেন, "মেয়েটি ছিল পাকা আনার বা ডালিমের ডানার মতো রক্তিম! আর যৌবন, সে তো রক্তজবার কলির মতো ছিল! তাই আমি তাকে নাম দিলাম, আনারকলি!" 


উল্লেখ্য, আনারকলিকে 'পিশাচ' আকবর জীবন্ত কবর দেওয়ার ফরমান জারির পরে! 'প্রেমিক' শাহজাদা জাহাঙ্গীর তার দাদিকে অনুরোধ করে, আনারকলির জন্য লুকিয়ে বিষ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল! যাতে আনারকলি কবরের ভয়ানক কষ্ট সহ্য না করে, বিষ খেয়ে তাড়াতাড়ি সহজে মারা যেতে পারে! অবশ্য এই তথ্যটি ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত নয়, এটি একটি মিথ বলা যায়!



কিন্তু আনারকলির সাথে শাহজাদা সেলিমের যে একটি সত্যিকার 'প্রেম' ছিল! এটার প্রমান পাওয়া যায়, শরিফাতুন্নেসার কবরের উপরের এই আশ্চর্য্য সুন্দর মোঘল স্থাপত্যের মিনারটি দেখে! কারণ এই মিনারটি আকবর পুত্র 'জাহাঙ্গীর' মোঘল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরেই নির্মাণ করেছিলেন!!..


লেখক: কায়সার আহমেদ (Kaiser Ahmed)

            (যুক্তরাজ্য প্রবাসী)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url