জামাত বিএনপির দুঃশাসনের দিনগুলি!

 



“তখন বিএনপির দ্বিতীয় শাসন আমল। কারো মুখ খুলবার উপায় নাই। ক্রসফায়ারে মারা যাচ্ছে মানুষ - কেউ মুখ খুলতে পারেনা। বিদ্যুত নাই - মুখ খুলবার উপায় নাই।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর চলছে অত্যাচার। পূর্নিমার কান্নার হাহাকার ভেসে যায় যমুনার জলে। পিতারা বলেন - বাবারা, একজন একজন করে আসো... আমার মেয়ে ছোটো!

কিছু ছেলে, প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অকুতোভয় ছেলে আয়োজন করে এক কনসার্টের। ছেলেগুলি গেঞ্জি প্রিন্ট করে। নাম দেয় কনসার্ট ফর ফাইটার্স। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে, হৃৎপিন্ডস্বরূপ রাজু ভাস্কর্যে। কোনো স্পন্সর নেই। ছেলেরা নিজেরাই টাকা তুলে আয়োজন করে। পুলিশি হুমকি কনসার্ট বন্ধ করে দেবার। কো্নো গায়ক রাজি হন না গান গাইতে।

এগিয়ে এলেন একজন মানুষ। একজন গায়ক। সঞ্জীব চৌধুরী তার নাম। ঝাঁকড়া বাবরি দোলানো চুলে তিনি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে দাঁড়ান; শুরু করেন গান। চারদিকে পুলিশ ঘিরে রয়েছে। বিএনপি সরকারের পুলিশ।

গান শুরু হলো। চলছে গিটার, চলছে তবলা। আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই... জড়ো হয় মানুষ, জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। ভরে ওঠে চত্বর।

সঞ্জীব চৌধুরী বলে ওঠেন, 'এবার আমি বক্তৃতা দেবো। চলছে গিটার, চলছে তবলা। সঞ্জীব চৌধুরী বলেনঃ

"বাংলা ভাই হাঁটে। বাংলা ভাইকে কেউ ধরে না। আমি যখন বলি, তখন আমাকে ধরে। আমি বলতে চেয়েছিলাম সেই সমস্ত কথা। আমার দিকে এগিয়ে আসে উদ্যত রাইফেল, আমার দিকে এগিয়ে আসে উদ্যত বেয়নেট!

আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই, আমার অন্তরের কথা বলতে চাই...

অন্ধকার নেমে আসে, অন্ধকার নেমে আসে সারা বাংলাদেশ জুড়ে। আর সেই অন্ধকারের ভেতর একজন তাজুল ইসলামকে খুন করা হয়। জানেন, তাজুল ইসলাম কে? ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইকোনোমিক্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কখনো চাকরী নেন নাই। তিনি ছিলেন আদমজীতে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। উপপ্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন? আপনাদের কি মনে আছে? নাম বলেন!

মওদুদ আহমেদ! তিনি এখন আইনমন্ত্রী। ঐ ভালো আইন জানেন। জসীমউদ্দীনের মেয়ের জামাই। ভুলে গেছেন সবকিছু? সেই মউদুদ আহমেদ আমাদের আইন শেখায়। আপনারা এখানে বসে বসে আইন শিখবেন। একজন তাজুল ইসলামকে পিটিয়ে মারা হয়, খুন করা হয়। সাক্ষী আদমজী। একজন ভালো মানুষ মাঝরাতে বাড়ি ফিরে এলোনা।

আমি বলতে চেয়েছিলাম সে সমস্ত কথা। তখনই আমার দিকে এগিয়ে আসে উদ্যত রাইফেল। কোথায় আমার বন্ধুরা?

আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই...

আমাদের আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে শান্তি রক্ষিত হোক। বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীকে ধরিয়ে দিন’! আমাকে চুপ করতে হয়, আমাকে চুপ করিয়ে দেয়া হয়।

আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই, আমার অন্তরের কথা বলতে চাই...

একটা ছেঁড়া ছুটকেস থেকে, একটা ছেঁড়া ছুটকেস থেকে ডান্ডি ডাইং হয়ে যায়! বিবেক কি বলে? আপনার বিবেক কি বলে? একটা ছেঁড়া ছুটকেস থেকে ডান্ডি ডাইং হয়ে যায়! বলেন! বলেন!

আরেকজন কর্নেল তাহেরকে বন্দী করা হয়। কে করছিলো? কে করছিলো কর্ণেল তাহেরকে বন্দী? বলেন! চিৎকার করে বলেন। বিবেক দিয়া বলেন। নিজের মায়ের নামে শপথ, নিজের মাটির নামে শপথ, বলেন। বলেন! এই মানুষটিকে কে খুন করছিলো? বলেন!

যদি না বলতে পারেন, আমি গান না গেয়ে এখান থেকে চলে যাবো... বলেন, আমি শুনতে পাই না। 

( দর্শকদের ভেতর থেকে চিৎকার ওঠে, জিয়াআআআ, জিয়াআআআ! )

নামটা আবার বলেন!

( সমস্বরে চিৎকার, জিয়াআআআআআআআআআআ )

তাঁদেরকে শোনান, আমার পুলিশ ভাইদেরকে শোনান।

(পুলিশের উদ্দেশ্যে দর্শকদের চিৎকার, জিয়াআআআআ )

আরেকজন কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আরেকজন বসুনিয়া, অই, অইইই জায়গায়, মুখ থুবড়ে পড়ে যান। আমি কি মিছা কথা কইছি ভাইজান? আমি কি কোনো মিছা কথা কইলাম? বলেন? সাক্ষী আমরা সবাই... আমি তো ঐ কথাই কইতে চাইছিলাম...

তখনই, আমার দিকে এগিয়ে আসে উদ্যত বেয়নেট, আমার দিকে এগিয়ে আসে রাইফেল। আমি নাকি বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী।

সো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি বলেন? বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীকে ধরিয়ে দিন। আমি নাকি বিশৃংখলাসৃষ্টিকারী!

পৃথিবীতে শান্তি রক্ষিত হোক। আকাশে শান্তি, বাতাসে শান্তি। শান্তি রক্ষিত হোক...

তবু বন্ধুগন, আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই, আমার অন্তরের কথা বলতে চাই'।“

[চারপাশে ঘিরে ছিলো বিএনপির পুলিশ]

 _____________________________________________________

“আমাদের একজন সঞ্জীব চৌধুরীর বড় অভাব এই দেশে এখন। অনেক কথাই আমরা জানি, বলতে পারিনা। আমার দিকে ধেয়ে আসবে উদ্যত রাইফেল, উদ্যত বেয়নেট। গুম হয়ে যেতে পারি, এই ভয়ে বলতে পারিনা।

সঞ্জীবদা, আপনার সামনে আমি ছোট হয়ে যাই। আপনার সাহসের কাছে নিজেকে বড্ড ছোট মনে হয়। আমার অপারগতাকে ক্ষমা করবেন।

আমার, স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই..."

 

লেখকঃ Mahmudul Haque Munshi

Moloy Das'র ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত

তারিখঃ ১৯-১১-২০১৯

 





Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url