ধর্মের সৌন্দর্য
ছবিঃ প্রতিকী |
ধর্ম মানুষকে সঠিক পথ দেখায়। নিজ নিজ ধর্মানুসারী ব্যক্তি, জাতি ও
গোষ্ঠী সেই ধর্মের মতাদর্শ অনুসরণ করে নিজের জীবনকে পরিচালনা করে। কখনও কি আপনার
মনে প্রশ্ন জেগেছে পৃথিবীতে মোট ধর্মের সংখ্যা কত? জিজ্ঞাসা করা হলে কয়টি ধর্মের
নামই বা আপনি বলতে পারবেন? পাঁচটা কিংবা দশটা ধর্মের নাম গড়গড় করে বলতে পারে এমন
মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
পৃথিবীতে মোট ধর্মের সংখ্যাটা জানলে আপনি খুবই অবাক হবেন। বিভিন্ন
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে মোট ধর্মের সংখ্যা ৪৩০০। কোনো কোনো তথ্য মতে সংখ্যাটা
আরো বেশি।
আমরা আমাদের ধর্ম অর্থাৎ
ইসলাম ধর্মকে একটু বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো, এতে এতো গ্রুপিং রয়েছে যে, কেউ গুনে
শেষ করতে পারবেন না। অনেকে বলতেই পারবেন না কতোগুলো গ্রুপ আছে ইসলাম ধর্মে।
হিন্দু ধর্মেও ব্রাহ্মণ,
ক্ষত্রিয়, বৈষ্য, শুদ্র এভাবে ভাগ আছে। এর আবার কয়েকটি দর্শন বা শাখা রয়েছে, যেমন; যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত।
বৌদ্ধ ধর্মের ভিতরেও
তিনটি প্রধান শাখা স্বীকৃত, যথাঃ থেরবাদ, মহাযান,
বজ্রযান।
খৃষ্ট ধর্মেরও বড় দুটি
ভাগ; প্রোটেস্ট্যান্ট আর ক্যাথলিক। এই দুই গ্রুপের ভিতরে মারামারির ঘটনা আমরা অনেক
শুনেছি।
প্রতিটা ধর্মই একটি
বিশ্বাস, যা হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। হৃদয়ে কি ধারণ করতে হয়? ভালোবাসা, হিংসা না করা, চুরি
না করা, অন্যের ক্ষতি না করা, গীবত না করা, অন্যের সম্পদ জোরপূর্বক বা কৌশলে ভোগ না
করা, ওজনে কম না দেয়া, ইয়াতীমের সম্পদের ভাগ যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেয়া, ব্যাভিচার না করা।
মদ, জুয়া, গাঁজা এগুলো থেকে দূরে থাকা। কোন ধর্মে এ কথাগুলো বলা নাই? সব ধর্মের মূল
বাণী প্রায় একই।
আমাদের ইসলাম ধর্ম
অনুযায়ী মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ কিভাবে সৃষ্টির সেরা
জীব? মানুষ কেনো আশরাফুল? কারণ, তাকে জ্ঞান দিয়েছেন আল্লাহ, সে ভালো-মন্দের পার্থক্য
করতে পারে। চিন্তা গবেষনা করে সিদ্ধান্ত নিতে
পারে। এজন্যেই সে আশরাফুল মাখলুকাত।
‘আশরাফুল মাখলুকাত’
অর্থাৎ মানুষের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট হলো; একে অন্যের প্রতি ভালো ব্যবহার করা,
একে অন্যকে সম্মান করা, মানুষের দুঃখকষ্টে পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি। না হিন্দু, না মুসলিম,
না খৃষ্টান, না বৌদ্ধ, না জৈন, না শিখ, না বাহাই, না সুন্নী, না শিয়া – কোনো ধর্ম উল্লেখ
করা হয়নি,- ‘মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত’। ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ আরবী শব্দ বলে শুধু মুসলিমদের
আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয়নি।
কিন্তু আমরা কি আমাদের
চিন্তাশক্তি ও জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে ভালো-মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে
পারি বা নেই? আমরা সাদারা কালো মানুষকে দেখতে পারি না, এক ধর্মের লোক আরেক ধর্মের লোককে
দেখতে পারি না। এটা তো ধর্মের শিক্ষা না!
আমি জন্মগ্রহণ করেছি
একটি মুসলিম পরিবারে। এই জন্মগ্রহণের ব্যাপারে আমার কি কোনো হাত আছে? আমি কি আগে থেকেই
সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করবো? মুসলমানের ঘরে ছাড়া আমি
জন্ম নেবো না? যে খৃষ্টানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে, যে হিন্দুর ঘরে জন্ম নিয়েছে, যে বৌদ্ধ-এর
ঘরে জন্ম নিয়েছে- কেউ কি তার নিজের ইচ্ছায় নিয়েছে? এটা যদি শ্রষ্টা নির্ধারিত হয়ে থাকে
তাহলে আপনি আমি কেনো একে অপরকে ঈর্ষা করবো? আপনি আমি কি শ্রষ্টার ইচ্ছাকে চ্যালেঞ্জ
করার অধিকার রাখি? মহানবী(সাঃ) ভিন্ন ধর্মের লাশকেও সম্মান দেখিয়েছেন।
হাদিসে আছেঃ
“জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন; ‘আমাদের পাশ দিয়ে একটি লাশ যাচ্ছিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম এবং নবীজীর কাছে নিবেদন করলাম, “হে আল্লাহ্র
রাসূল! এ তো ইয়াহুদীর লাশ”! তিনি বললেনঃ “তোমরা যে কোনো লাশ দেখলে দাঁড়িয়ে যাবে”। (সহীহ বুখারী, আধুনিক প্রকাশনী হাদীস নং ১৩১১)
“আদম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন; ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “তোমরা মৃতদের গালমন্দ
করো না। কেননা, তারা আপন কৃতকর্মের ফলাফল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে”। (সহীহ বুখারী, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন নং ১৩১১)
নবীজী মৃতদের কথা বলেছেন, নির্দিষ্ট কোনো ধর্মাবলম্বীর মৃতদের কথা
বলেননি।
মজলুম
মজলুমের ব্যাপারে বলা
হয়েছে; যারা নির্জাতিত, দরিদ্র, দুর্বল, তাদের প্রতি কোনো অত্যাচার করা যাবে না। কারণ,
ইসলাম অনুযায়ী মজলুম এবং আল্লাহতায়ালার মাঝে কোনো দূরত্ব থাকে না। ইসলাম এইভাবে বলেছে,
যে যেই ধর্মের হোক না কেনো, তার প্রতি জুলুম করা যাবে না। কারণ ওই গরীব মানুষটা, ওই
অসহায় মানূষটার মাঝে আল্লাহর কোনো পর্দা থাকে না। ফলে আল্লাহ তাতে অসুন্তষ্ট হন। তাই মহান আল্লাহ সবাইকে জুলুম করা থেকে নিষেধ
করেছেন। এমনকি আল্লাহ নিজের জন্যও এটিকে হারাম করেছেন।
হাদিসে আছেঃ
রাসুল (সাঃ)আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন,
“হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি।
অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না”। (সহীহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)
প্রতিবেশির প্রতি
আচরণঃ
মুসলিম ব্যক্তির প্রতিবেশি যদি অমুসলিমও হয়,
তার অধিকারের প্রতিও খেয়াল রাখা জরুরি। এটিও হকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ ঘোষণা করেছেনঃ
“আর তোমরা ... পিতা-মাতা,
আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী ও দুর-প্রতিবেশীদের প্রতি
সদ্ব্যবহার করো”। -(সুরা নিসাঃ আয়াত-৩৬)
হাদিসে নবীজী (সাঃ) বলেছেনঃ
“আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়ঃ আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়ঃ আল্লাহর শপথ সে মুমিন
নয়ঃ জিজ্ঞেস করা হলোঃ ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে সেই ব্যাক্তি’? তিনি বল্লনঃ “যার অনিষ্ট
থেকে তার প্রতইবেশি নিরাপদ নয়”। (বুখারী, হাদিস নং ৫৬৭০)
বলা হয়েছে, প্রতিবেশির
হক আদায় না করে কেউ বেহেশ্তে যেতে পারবে না। ‘প্রতিবশি’ – সে যে ধর্মেরই হোক। প্রতিবেশি
মানে বলা হয়নি মুসলিম। কিন্তু আমরা কি সেই নীতি অনুসরণ করি? বরং আমরা কোরআন-হাদিস বহির্ভূত
নিয়ম-রীতি চাপিয়ে দেই ধর্মভীরু মানুষের উপর। নবীজী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীদের পরে অধিকাংশ
ক্ষেত্রে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাক্তিস্বার্থে, গোষ্টীস্বার্থে। গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে
একটা অভিসন্ধি নিয়ে আমরা ধর্মকে ব্যবহার করেছি।
অন্য ধর্মাবলম্বীর ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আছেঃ
“দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং
তোমাদের নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার
করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন”। (সুরা মুমতাহিনাঃ
আয়াত-৮)
“এরা
আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদাত (পূজা-অর্চনা) করে তোমরা তাদেরকে গালাগালি করোনা,
তাহলে তারা অজ্ঞতাবশতঃ বৈরীভাবে আল্লাহকেই গালি দিতে শুরু করবে। আমিতো এ রূপেই
প্রতিটি জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের ‘আমল’কে চাকচিক্যময় করে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে
তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে, তখন তারা কি কি কাজ করেছিল তা তিনি তাদেরকে জানিয়ে
দিবেন”। (সূরা আনামঃ আয়াত-১০৮)
সুতরাং বর্ণবাদ, পূঁজিবাদ, সামাজিক মর্যাদা,
বংশ ইত্যাদি দ্বারা মানুষের মর্যাদার মূল্যায়ন হতে পারে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ
ইত্যাদির বিভক্তি কেবল পরস্পরকে জানার জন্য, যাতে পরস্পরের চারিত্রিক ও মানসিক
গুণাবলি দ্বারা একে অপরের উপকার হতে পারে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
“হে
মানবজাতি! আমি পুরুষ ও নারী থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি। আর আমি বিভিন্ন গোষ্ঠী ও
গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছি যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পার’। (সুরা আল-হুজরাত :
আয়াত ১৩)
নিজ ধর্মের প্রতি আহবান!
কেউ যদি কাউকে তার
ধর্মের প্রতি আহবান করতে চায়, সে যে ধর্মের দিকেই হোক, এটা হৃদয় দিয়ে, আত্মা দিয়ে,
ভালো কথা বলে আহবান করতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
“তুমি মানুষকে তোমার রবের পথে আহবান কর হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের
সাথে আলোচনা কর সুন্দরভাবে। তোমার রাব্ব ভাল করেই জানেন কে তাঁর পথ ছেড়ে বিপথগামী এবং
কে সৎ পথে আছে”। - (সুরা আন নাহলঃ আয়াত – ১২৫)
আমাদের এই দেশে মুসলমানরা
প্রথম আসে মহানবী (সাঃ) কে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ারও ৫০০ বছর পরে। ১২০০ সালের দিকে
মুসলমানরা এই দেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসে। তখন কার বাড়ি উঠেছিলো? কার বাড়ি খেয়েছিলো?
তখনতো এই দেশের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু বা বৌদ্ধ ছিলো। তা থেকে তারা এতো মুসলমান কিভাবে
বানাতে পেরেছে? তাদের ভালো ব্যবহার, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সত্যনিষ্ঠতা, ন্যায়নিষ্ঠতা
দিয়ে।
খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীরা
মানুষকে তাদের ধর্মের দিকে আহবান করতে গেলে তারা মানুষের পাশে দাঁড়ায়, মানুষের সাথে
ভালো আচরণ করে। এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আপনার ধর্মের প্রতি কেউ আগ্রহী হবে আপনার
বিনয় ও আচরণ দেখে, ধর্মের ভালো গুনাগুন দেখে। আপনি যদি লাঠি তলোয়ার নিয়ে ধর্মের দাওয়াত
দিতে যান, কেউ কি আপনার ধর্মের প্রতি আগ্রহী হবে? বলবে - এরা সন্ত্রাসী!
অস্ত্র দেখিয়ে মানুষকে
ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করা যায় না। মুসলমানরা ২০০-৩০০ বছর ভারত শাসন করেছে, উমাইয়া -
আব্বাসীয়রা পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক অঞ্চল শাসন করেছে। অস্ত্র দিয়ে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট
করা গেলে তারা সবাইকে মুসলমান বানাতে পারতো।
পৃথিবীর ৪৩০০ ধর্মের
মধ্যে প্রধান ধর্ম ১০টি। তারমধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ট ধর্ম খৃষ্টধর্ম, তারপরে
ইসলাম ধর্ম। এভাবে বড় বড় গোটা দশেক ধর্মের
পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। এরমধ্যেও আবার নাস্তিক বা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না এমন সংখ্যা
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ, অর্থাৎ ১২২ কোটিরও বেশি। তারা মনে করে সৃষ্টিকর্তা
বলে কিছু নেই। আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জন্ম নিয়েছি, স্ব্যংক্রিয়ভাবে খাচ্ছি, চলছি, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই
আবার মরে যাবো। মরে যাওয়ার পরে কোনো বিচার-আচার নাই। এদেরকে ইংরেজিতে বলে এথিয়েষ্ট
- অর্থাৎ অবিশ্বাসী।
তাহলে আপনি কার বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করছেন? কিসের জেহাদ করছেন? আসুন সেই যুদ্ধ বা জেহাদ করি, ‘আপনার ধর্ম কতো ভালো
মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করে, মানুষের সেবা করে নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করি।
আমিতো আমার ধর্ম কাউকে
লিজ দেইনি! আমি তো প্রতি মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করি। আমরা স্ব স্ব ধর্মের উপাসনালয়
অর্থাৎ মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডায় যাই। গিয়ে জোড়হাত করি, শ্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি;
“আমার ভুল হতে পারে, আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমি যেন আপনার দেখানো পথে চলতে পারি সে সুযোগ(তৌফিক)
দিন”। কেউ কি গ্যারান্টি দিতে পারবে, আমি একদম পাপের উর্ধে? কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে
না। সেজন্যেই আমরা আল্লাহ, খোদা, ভগবান, ইশ্বরের কাছে ক্ষমা চাই। কিন্তু উপাসনালয় থেকে
বেরিয়ে আমরা কেউ কি সেই কথা রাখি? আল্লাহর কাছে দেয়া ওয়াদা পালন করার চেষ্টা করি?
মসজিদে গিয়ে আল্লাহর
কাছে মিথ্যা কথা বলে আসি যে, “আমরা তোমারই এবাদত করি”(সুরা ফাতিহা), বেরিয়েই আরেকজনের
ক্ষেতের আইল কাটি, ধন দৌলতের ক্ষমতায় প্রতিবেশির চলার পথে বেড়া দেই, অন্যের গীবতে মনযোগ
দেই। অথচ এগুলো থেকে বিরত থাকাই হলো এবাদতের মূল।
আমরা নিজেদেরকে ‘আল্লামা’
(সর্বজ্ঞানী, মহাজ্ঞানী) দাবি করি! কিন্তু আমরা যতো জ্ঞানীই হই, স্বয়ংসম্পূর্ণ নই।
আল্লাহ বলেছেনঃ
“আমি তোমাদের (মানুষকে) অতি
সামান্য জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছি”। -(সুরা বনি ইসরাইলঃ আয়াত – ৮৫)
একমাত্র সৃষ্টিকর্তা
স্বয়ংসম্পূর্ণ ও মহাজ্ঞানী। তার জন্ম নাই, মৃত্যু নাই। তিনি আছেন, থাকবেন। আমরা সংক্ষিপ্ত
সময়ের জন্য এসেছি। আগামী ১০০ বছর পরে আমরা আপনারা কেউ থাকবো না - এটা গ্যারান্টি দেয়া
যায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ১০০ বছর পরপর জাতি চেঞ্জ হয়ে যায়, মানুষ চেঞ্জ হয়ে যায়।
আজকে যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, ধরে নিতে পারি আগামি ১০০ বছর পরে দুয়েকজন ব্যতিক্রম
ছাড়া সেও মারা যাবে। একটা নতুন প্রজন্ম এসে উপস্থিত হবে। আমি তাদের জন্য কি দৃষ্টান্ত
রেখে গেলাম? আপনার দৃষ্টান্ত হবে আপনার ভালো কর্ম। এজন্যে যুগে যুগে যারা মানুষকে ভালোবেসেছে,
যাদের মধ্যে সম্প্রীতি্র মনোভাব ছিলো, তারা ধর্ম, বর্ণ সবকিছুর উর্ধে চলে গেছে।
মহানবী (সাঃ) সকল ধর্ম,
মানুষ ও জাতির জন্য এসেছেন। বলা হয়নি শুধু মুসলমানদের জন্য নবী রাসুলগন এসেছেন। যুগে
যুগে যারা বড় মানুষ আসে, তারা সকল মানুষের জন্যই আসে। তারা শুধু বলে নাই, ‘অমুক ধর্মের
লোকেরা ভালো কাজ করবে, বাকিরা যা খুশি তাই করবে’। মহান আল্লাহ নবীজীর উদ্দেশ্যে বলেছেনঃ
“আমি
তো তোমাকে গোটা মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু
অধিকাংশ মানুষ উপলব্ধি করে না”।- (সুরা সাবাঃ আয়াত : ২৮)
“আমিতো তোমাকে বিশ্ব জগতের প্রতি রহমতরূপেই
প্রেরণ করেছি”।- (সুরা আম্বিয়াঃ আয়াত : ১০৭)
আমাদের সমাজে স্ত্রী
স্বামীর কথা শোনে না, সন্তান মা-বাবার কথা শোনে না, কোথায় যেন একটা গণ্ডগোল! একই ধর্ম
পালন করি, অথচ বিভিন্ন মত। এক মৌলানা আরেক মৌলানাকে দেখতে পারে না, একই দল করি, তার
ভিতরেও বেমিল। আত্মার মিল নেই। তারমানে, ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। অন্তরে ধারণ করি নাই।