বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ (পর্ব-২৬)-বাংলাদেশ
বেগম খালেদা জিয়া
বেগম খালেদা জিয়া |
খালেদা জিয়া ওরফে
খালেদা খানম পুতুল: একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সময়কালে
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা
প্রধানমন্ত্রী এবং বেনজির ভুট্টোর পর মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা
প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী।
খালেদা ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র
চেয়ারপারসন। ১৯৭৮ সালে তার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান
দলটি গঠন করেন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক
বিদ্রোহী সেনাদলের হাতে নিহত হন। অতপর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবুদুস সাত্তার প্রেসিডেন্ট
হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৮২ সালে তৎকালিন সেনাপ্রধান
লেঃ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে
সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিচারপতি এএফএম আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ
দেন। এরশাদ প্রধান সামরিক আইন প্রহাসকের দায়িত্ব গ্রাহণ করেন। ১৯৮৩ সালে আহসান
উদ্দিন চৌধুরীকে ক্ষমতাচ্যুত করে এরশাদ নিজেই প্রেসিডেন্ট হন।
অভ্যুথান-পাল্টা
অভ্যুথানের ঘটনায় দেশ যখন টালমাটাল তখন রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে এরশাদের
বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। সে সময় তিন জোট মিলে অভিন্ন রূপরেখা নির্ধারণ করে যুগপৎ
আন্দোলন করে। খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত ৭ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন এবং
১৯৯০ সালে এরশাদের পতন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান।
১৯৯৬ সালের ১৫ই
ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সহ সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। এক তরফা
নির্বাচনে বিএনপি স্বল্পকালীন সময়ের সরকারে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন
খালেদা জিয়া। আওয়ামীলীগ সহ সমমনা অন্যান্য দলের আন্দোলনের মুখে আন্দলনকারীদের দাবি
অনুযায়ী সংসদে তত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ করে মাত্র ১২ দিনের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য
হন। বিলে পরপর তিন মেয়াদে নির্বাচনের আগে তত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে এবং তার অধিনে
নির্বাচন হবে বলে উল্লেখ হিলো। তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন সর্বশেষ
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।
পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের
জুন মাসে তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে
সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে তার দল পুনরায় ক্ষমতায় আসে।
২০০৬ সালে তার সরকারের মেয়াদ শেষে পরবর্তী মেয়াদে জয়ী হওয়ার জন্য বিচারপতিদের
চাকরির বয়স বড়ানো, সোয়াকোটি ভুয়া ভোটারের তালিকা বানানো ইত্যাদি নানা কৌশল অবলম্বন
করার অভিযোগ ওঠে খালেদা জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বেশ জটিলতা সৃষ্টি হয়।
অবশেষে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য
সর্বসম্মতিক্রমে তত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি
ইয়াজুদ্দিনের অনিয়মের কারণে তত্বাবধায়ক সরকারের সাথে বনিবনা না হলে উপদেষ্টাগন
পদত্যাগ করেন। ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে এবং এক শূণ্যতার সৃষ্টি হয়।
এই শূন্যতার সুযোগে তৎকালিন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈনুদ্দিন আহমেদের
নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত নতুন ততাবধায়ক সরকার গঠিত হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের সাবেক
গভর্ণর ফখরুদ্দিন আহমেদ তার প্রধান উপদেষ্টা হন। উক্ত তত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনী সংস্কার,
নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং ভোটার আইডি কার্ড (এনআইডি কার্ড) তৈরি করেন।
সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার) খালেদা
জিয়া এবং তার দুই পুত্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে মামলা দায়ের করে। তারমধ্যে
‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলা’ এবং ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি
মামলা’য় ২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে দুই মামলায় মোট ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এপ্রিল ২০১৯ সালে খালেদা
জিয়াকে চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আওয়ামীলীগ
সরকার মানবিক কারণে ৬ মাসের জন্য তার সাজা
স্থগিত করে এবং ঢাকার গুলশানের বাড়িতে থাকার অনুমতি দেয়। শর্ত থাকে যে, এই
সময়কালে তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং বিদেশ ভ্রমণ
করতে পারবেন না। তার পরিবারের সদস্যদের আবেদনক্রমে তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ ৬ মাস
পরপর বাড়ানো হয়েছে এবং বরতমানেও তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।
প্রাথমিক জীবন
ও পিতৃপরিবার
খালেদা খানম
"পুতুল" তৎকালীন অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
তার জন্মতারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তার পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র,
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গনমাধ্যমে দেয়া জীবনবৃত্তান্ত, আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা
জন্মদিন ইত্যাদিতে ভিন্ন ভিন্ন জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
·
১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সংবাদ
মাধ্যমে সরবরাহকৃত জীবন বৃত্তান্তে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ১৯ আগষ্ট ১৯৪৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
দৈনিক বাংলা ২০ মার্চ ১৯৯১ |
·
ম্যাট্রিক পরীক্ষার মার্কশীট অনুসারে খালেদা
জিয়ার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর।
মেট্রিক পরীক্ষার মার্কশীট |
·
পাসপোর্ট অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্ম
তারিখ ০৫ আগষ্ট ১৯৪৫
·
বিয়ের কাবিননামা অনুসারে তার জন্মদিন
১৯৪৪ সালের ৯ই আগষ্ট।
·
২০০০ সালের ভোটারের তথ্য বিবরনী ফরমে
খালেদা জিয়া নিজেকে স্বশিক্ষিত এবং তার জন্ম তারিখ ১৫ আগষ্ট ১৯৪৬ উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়ার জন্ম বেঙ্গল
প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারতের বর্তমানে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলায় তার বাবার
কর্মস্থলে। তবে তার পৈতৃক নিবাস ফুলগাজী, ফেনীতে এবং মাতা তৈয়বা মজুমদার ছিলেন
বর্তমানে ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলার চাঁদবাড়ির বাসিন্দা। খালেদা জিয়া ছিলেন তার
পিতা ইস্কান্দার আলী মজুমদারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। ১৯৪৭ সালে ভারত
বিভাগের পর তারা দিনাজপুর শহরে (বর্তমানে বাংলাদেশে) বসবাস শুরু করেন।
খালেদা জিয়ার বড় বোন
খুরশীদ জাহান (১৯৩৯-২০০৬) তার সরকারের ২০০১-২০০৬ মেয়াদকালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক
মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার (১৯৫৩-২০১২) ২০০১-২০০৬
মেয়াদে ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার দ্বিতীয় ভাই শামীম ইস্কান্দার
বাংলাদেশ বিমানের একজন অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার। তার দ্বিতীয় বোন সেলিনা
ইসলাম।
দাম্পত্য জীবন
১৯৬০ সালে তিনি জিয়াউর রহমানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
১৯৭৯ সালে স্বামী জিয়াউর রহমানের সাথে |
১৯৬৫ সালে খালেদা জিয়া স্বামীর বদলীর কারণে স্বামীর সাথে পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমানে পাকিস্তান) যান। ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত করাচিতে স্বামীর সাথে ছিলেন। এরপর ঢাকায় চলে আসেন। কিছুদিন জয়দেবপুর থাকার পর চট্টগ্রামে স্বামীর বদলী হলে তার সঙ্গে সেখানে যান এবং চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় বসবাস করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় চলে আসেন। ১৭ জুন পর্যন্ত বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় থাকেন। ১৭ জুনের পর ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জামশেদের অধীনে বন্দী ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেলে পাকিস্তান সেনারা আত্মসমর্পণ করে। তারপর তিনি ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুক্তি পান।
১৯৭৯ সালে খালেদা জিয়া |
পরিবার
খালেদা জিয়ার প্রথম
পুত্র তারেক রহমান (জন্ম ১৯৬৭) রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন, যদিও তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামী এবং ২০০৭ সাল থেকে
লন্ডনে বসবাস করছেন। তার দ্বিতীয় পুত্র আরাফাত রহমান ‘কোকো’ (জন্ম ১৯৬৯)
মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অবস্থায় ২০১৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
রাজনীতিতে
সম্পৃক্ততা
১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন।
রাজনীতিতে
আসার আগ পর্যন্ত বেগম জিয়া একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। মূলত দুই পুত্রকে লালন পালন
ও ঘরের কাজ করেই সময় কাটাতেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনও রাজনীতিতে বেগম জিয়ার
উপস্থিতি ছিলো না।
১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন।
বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসাবে
দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট
জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন।
১৯৮৩ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয়
ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ হয়।
বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের
মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে ৭ দল, আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলের সাথে যৌথভাবে
আন্দোলনের কর্মসূচির সূত্রপাত করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে।
কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ
আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়।
এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন
প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া "এরশাদ হটাও"শীর্ষক এক
দফার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। তারপর পুনরায়
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপক্রম হয়। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর অবিরাম, নিরলস ও আপোসহীন
সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি
আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।
১৩ অক্টোবর ১৯৮৬ তারিখে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঠিক আগে
খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করা হয় এবং নির্বাচনের পরেই মুক্তি দেয়া হয়। তিনি
এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে নতুন আন্দোলন শুরু করেন। তিনি একই বছরের ১০
নভেম্বর তাকে গৃহবন্দী রাখার প্রতিবাদে অর্ধদিনের ধর্মঘট ডেকেছিলে।
২৪ জানুয়ারী ১৯৮৭ শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের নেতারা যখন সংসদ
অধিবেশনে যোগ দেন, খালেদা জিয়া তখন সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবিতে রাজপথে ছিলেন। তিনি
ঢাকায় একটি গণসমাবেশের ডাক দেন যা সহিংস রূপ নেয় এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের
গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত খালেদা জিয়ার
নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক হরতালের কর্মসূচী দেয়া হয়। সেই বছরেই
২২শে অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিএনপি ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে এরশাদকে
উৎখাত করার জন্য ১০ নভেম্বর ‘ঢাকা দখল’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
ঘটনাবহুল ১৯৮৭ সালের পর, পরের দুটি বছর বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ছাড়া তুলনামূলকভাবে
শান্ত ছিলো। তবে এরইমধ্যে এরশাদ ১৯৮৮ সালে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পূনরায় একটি প্রহসনের
নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন। এতে আওয়ামীলীগ, বিএনপি এবং বাম মোর্চা মিলে ঐক্যের
ভিত্তিতে গঠিত ‘৩ জোট’ নির্বাচন বয়কট করে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে এরই
ধারাবাহিকতায় এরশাদকে হটাতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে। আন্দোলনে ১৯৯০ সালের ১০
অক্টোবর ছাত্রদল নেতা নাজিরুদ্দিন জেহাদ ঢাকার রাস্তায় মারা যান। তাতে আন্দোলনে
আরো গতি সঞ্চারিত হয়।
দুই মাসব্যাপী
বিক্ষোভের পর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট, আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন
১৫ দলীয় জোট, বামদলীয় জোট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল মিলে আন্দোলনের ফলে ৪ ডিসেম্বর
১৯৯০ তারিখে এরশাদ তার পদত্যাগের প্রস্তাব দিতে বাধ্য হয় ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ
করেন।
প্রধানমন্ত্রী
১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের
প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।৩ জোটের রূপরেখা অনুসারে তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির
সরকার প্রতিষ্ঠিত করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল
উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে স্বপদে ফিরে যাবার
ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের
সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাশ হয়।
১৯৯৬ সালের ১৫
ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। যা পরবর্তীতে একদলীয়
নির্বাচন হিসেবে গণ্য হয়। সকল বিরোধীদলের আপত্তির পরও খালেদা জিয়া ও তার দল একক
নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ সহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। এই সংসদ মাত্র
১৫ দিন স্থায়ী হয়। খালেদা জিয়া এই সংসদেরও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রবল গণ
আন্দোলন ও বর্হিবিশ্বের চাপে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল
পাস হয় এবং খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন।
বিরোধীদলীয় নেত্রী
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট ১১৬
আসনে জয় লাভ করে, যা সরকার গঠনে যথেষ্ট ছিল না। আওয়ামী লীগ মোট ১৪৭ আসন লাভ করে,
তারা জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি সপ্তম সংসদে
সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের পাঁচ
বছর শাসনকালে সংসদে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন।
পুনরায় প্রধানমন্ত্রী
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি বাংলাদেশ জামায়াতে
ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। ২০০১
সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন
করে। খালেদা জিয়া এই সংসদেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬
সালের ২৮ অক্টোবর এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়।
পূনরায় বিরোধীদলীয় নেত্রী
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়।
মহাজোটের প্রায় ২৬০ টি আসনের বিপরীতে চার দলীয় ঐক্যজোট মাত্র ৩২টি আসন লাভ করে।
খালেদা জিয়া সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন।
গ্রেফতার ও কারাভোগ
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য রূপে দলে
যোগ দেবার পর থেকে মোট পাঁচ বার তিনি আটক হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪
সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন।
তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুর্নীতির অভিযোগে
পুত্রসহ আটক হন। ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তিনি সর্বোচ্চ
বিচারালয়ের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বন্দী হবার পর
দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাগারে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোন অভিযোগেরই
উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি এবং চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই
প্রমাণিত হয়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট
দুর্নীতি মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম
কারাদণ্ড হয়। এরপরই তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ
১৩ নভেম্বর ২০১০ বেগম জিয়া দীর্ঘ ৩৮ বছর পর তার সেনানিবাসের বাসা
ত্যাগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে তাকে বলপ্রয়োগে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া
হয়েছে। তবে সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ত্যাগ
করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর
রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০
মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলে ১২
জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে
বরাদ্দ দেন।
একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে তার সেনানিবাসে থাকা নিয়ে সমালোচনা ছিলো অনেকের। নানা উত্তেজনা, বিক্ষোভ আর আইনি দেন-দরবারের পর সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হলেন খালেদা জিয়া। বাক্স-পেটরা নিয়ে অশ্রুনয়নে ওই বাড়ি ছাড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে
অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন জিয়া, সঙ্গে
খালেদা ও তাদের দুই পুত্র।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ১৯৭৫ সালে সেনাপ্রধান হন জিয়া। তবে থাকেন ওই বাড়িতেই। এরপর প্রথমে সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে রাষ্ট্রপতি হন জিয়া। কিন্তু মইনুল সড়কে ১৬৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ওই বাড়ি ছাড়েননি তিনি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া
চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থানে নিহত হলে বিধবা খালেদাকে ওই বছরের ১২ জুন
তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি ১ টাকার বিনিময়ে খালেদার
নামে বরাদ্দ দেন। ইজারা দলিলের মাধ্যমে তাকে সরকারি ওই সম্পত্তি দেওয়া হয়।
দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত
রহমানকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকছিলেন গৃহবধূ খালেদা। কিন্তু এক সময় স্বামী জিয়ার দলের
নেতা-কর্মীদের চাপে পা রাখেন রাজনীতিতে। হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির
চেয়ারপারসন।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোটা সময়
রাজপথে ছিলেন খালেদা, সেনানিবাসের ওই বাড়িতে থেকেই। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে
সেনানিবাসে থেকে এ আন্দোলনের জন্য কটাক্ষ করতেও ছাড়তেন না রাজপথের সঙ্গী আওয়ামী
লীগের নেতারা।
১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট বাসভবনে না থেকে সামরিক এলাকায় থাকাকেই বেছে নেন
খালেদা।
১৯৯৬ সালে নির্বাচনে হেরে সংসদে
বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন খালেদা। কিন্তু তখনো বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ
বাড়িতে ওঠেননি তিনি।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময়ও ওই বাড়িই ঠিকানা ছিলো খালেদার।
বিদেশ সফর
২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর করেন।
আগস্টে তিনি রাজ পরিবারের আমন্ত্রণে সৌদি আরবে যান এবং পবিত্র
ওমরাহ পালন করেন। এই সফরে তিনি সৌদি রাজপুত্র ও
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের সাথে সাক্ষাত করেন।
তাদের বৈঠকে দ্বিদেশীয় সম্পর্ক ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রম বাজারের সংকট
উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
অক্টোবরে খালেদা জিয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সফর করেন। সফরকালে তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় ও দলীয়
ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করেন। চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি
ও ভবিষ্যত একচ্ছত্র নেতা শি
জিন পিংয়ের সাথে বৈঠক করেন। এ ছাড়াও খালেদা
জিয়া কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান ওয়াং
চিয়ারুইয়ের সাথে দেখা করেন।
একই মাসে খালেদা জিয়া ভারত সরকারের আমন্ত্রণে
ভারত সফরে যান।
জন্মতারিখ
নিয়ে বিভ্রান্তি
খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের পর থেকে ১৫ ই আগস্টকে তার জন্মদিন হিসাবে
দাবি করেন, যে দিনটি বাংলাদেশের জন্য একটি স্পর্শকাতর দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এ
দেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় এবং ১৫ ই আগস্ট
আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস এবং ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
পক্ষান্তরে কোনো শনাক্তকরণ নথিতেই তার জন্মদিন ১৫ই আগস্ট হিসেবে পাওয়া যায় না
যার উদাহরণ উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ১৫ই আগস্টে তাকে জন্মদিন উদ্যাপন না করার জন্য
অনুরোধ করেন। এই বিষয়ে হাইকোর্টে জিয়ার বিরুদ্ধে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়।
সর্বশেষ বেগম খালেদা জিয়া করোনা টেস্টের জন্য তার জন্মদিন ৮ মে ১৯৪৬ উল্লেখ
করেছিলেন।
সম্মাননা
২০১১ সালের ২৪ শে মে নিউ জার্সি স্টেট
সিনেটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করা
হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সিনেট
কর্তৃক কোন বিদেশিকে এ ধরনের সম্মান প্রদানের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই তাকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’
(গনতন্ত্রের ‘মা’) সম্মাননা দেয় কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল
অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের একটি সংগঠন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে গুলশানে
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি উক্ত দাবি করার
পাশাপাশি কানাডার এই প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া ক্রেস্ট ও সনদপত্র সাংবাদিকদের সামনে
উপস্থাপন করে।
তার নামে বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের নামকরণ
·
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলকে ‘বেগম খালেদা জিয়া হল’
·
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলকে ‘বেগম খালেদা
জিয়া হল’
·
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলকে ‘বেগম খালেদা
জিয়া হল’
·
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলকে ‘বেগম খালেদা জিয়া হল’