বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ (পর্ব-১৩)-বাংলাদেশ
সাহারা খাতুন
সাহারা খাতুন |
সাহারা খাতুন (১ মার্চ ১৯৪৩ - ৯ জুলাই ২০২০)ঃ ছিলেন
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও আইনজীবী। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি
আওয়ামী লীগের আইন সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহারা ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ ঢাকার কুর্মিটোলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-মাতা হলেন
যথাক্রমে, আব্দুল আজিজ ও টুরজান নেসা। তিনি বি.এ এবং এল.এল. বি ডিগ্রী আর্জন করেন।
তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ
আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক মহিলা আইনজীবী সমিতি ও আন্তর্জাতিক
মহিলা জোটের সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একজন আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু
করেন।
সাহারা খাতুন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ এর সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মহিলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং ডাক
ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সাহারা খাতুন ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িত হন। ১৯৯১ সালে তিনি
আওয়ামী লীগের প্রার্থীতা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ও পঞ্চম সংসদ
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে তিনি সেই নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম
খালেদা জিয়ার নিকট পরাজিত হন। ২০০৭-৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ
হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি আবারও রাজনীতির দৃশ্যপটে আসেন। শেখ হাসিনার পক্ষে
আইনি ও রাজনৈতিক লড়াইয়ে অন্যতম প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সাহারা খাতুন। তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের সময় সাহারা খাতুন নিজেও রাজনৈতিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।
২০০৮-এ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী
লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৮ আসন হতে নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে জিতে তিনি আনন্দিত হয়ে জনগণকে তার দেয়া প্রতিশ্রুতি; সড়ক পুননির্মাণ
ও ড্রেন সংস্করণের কথা পুনরায় ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মনোনীত হন। তিনি ৬ ই জানুয়ারি ২০০৯ সালে তার
দফতরে প্রবেশ করেন। ২০১২ সালে
মন্ত্রণালয়ের রদবদল ঘটলে তিনি বাংলাদেশ সরকার-এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি পুনরায় ঢাকা-১৮
আসন থেকে ২০১৪ সালের ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন।
বিডিআর বিদ্রোহ
২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন
বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বিদ্রোহী জওয়ানদের
আলোচনায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং অস্ত্র সমর্পণে রাজি করাতে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলসের
সদর দপ্তরে যান।
এ বিদ্রোহের ঘটনার ফলে ৫৩ জন সেনা কর্মকর্তা ও ৩ জন সেনা পরিবারের
সদস্য নিহত হয়।
এই সময়ে বাংলাদেশ রাইফেলকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তঃবিচারের
কাঠগরায় দাঁড় করায়। সাহারা খাতুন বিডিআর গণহত্যাকান্ডের জন্য বিশেষভাবে নিন্দিত
হন। সরকারের হেফাজতে
থাকাকালীন গ্রেপ্তারকৃত বিদ্রোহীদের অনেকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তার
মন্ত্রণালয় সমালোচিত হয়।
মৃত্যু
৯ই জুলাই ২০২০ সালে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ
ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তিনি ওই বছরের
২রা জুন বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে ঢাকার গুলশানে ইউনাইটেড
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের
বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
(সূত্রঃ ইন্টারনেট)