বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ পর্ব-১৯)-বাংলাদেশ
বেগম বদরুন্নেসা
আহমদ
বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ |
বেগম
বদরুন্নেসা আহমদ (৩ মার্চ
১৯২৪ - ২৫ মে ১৯৭৪): হলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ। তিনি বঙ্গবন্ধু
মন্ত্রীসভার একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
বেগম বদরুন্নেসা আহমেদের জন্ম ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ। বদরুন্নেসা
আহমেদ ভগ্নীপতি কাজী গোলাম গাউসের উৎসাহে পড়ালেখায় হাতেখড়ি নেন কলকাতার
সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল মুসলিম বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাস করে
ভর্তি হন লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে। পরবর্তীকালে ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন
এবং ১৯৪৪ সালে সেখান থেকেই আই.এ পাস করেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে
সিলেটের এম.সি. কলেজ থেকে প্রাইভেট বি.এ. পাস করেন। তিনি যথাক্রমে ১৯৬১ এবং ১৯৬৩
সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।
১৯৪৭ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের বন বিভাগের কর্মকর্তা নূরউদ্দিন আহমদকে বিয়ে
করেন।
বদরুন্নেসা আহমেদ ১৯৩০ সালে আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী গার্লস স্কুলের
ম্যানেজিং কমিটিতে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গার সময় সরাসরি কর্ম দিবসে
কলকাতার মির্জাপুর রাস্তায় ধর্মীয় দাঙ্গা প্রতিরোধে কাজ করেছিলেন। ভারত বিভাগের পর
১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গেন্ডারিয়া, ঢাকায় চলে আসেন। তিনি গেন্ডারিয়া
প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের প্রতিষ্ঠাতা
সদস্য ছিলেন। তিনি নিখিল পাকিস্তান মহিলা সমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯৬০ সালে “বদরুন্নেসা
আহমেদ মুসলিম গার্লস হাই স্কুলে” তার শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। তিনি লালমাটিয়া মহিলা
কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৭৩ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
বদরুন্নেসা আহমেদ তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালের
প্রাদেশিক আইন পরিষদ নির্বাচনে শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়ার নির্বাচনী এলাকায় মুসলিম
লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে এমএলএ নির্বাচিত হন। কুষ্টিয়ার
বস্ত্রকল মোহিনী মিলের শ্রমিকদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার কারণে তদানীন্তন
পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনি দেড়মাস
কারাবন্দি অবস্থায় থাকেন।
বদরুন্নেসা আহমেদ ১৯৫৭ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত সভায়
তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন।
বদরুন্নেসা আহমেদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয়
পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় এমএনএ নির্বাচিত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে
সরকার তাঁর স্বামীকে সাসপেন্ড করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালিন তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ
সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের নির্দেশে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে
রিপোর্ট পেশ করা, শরণার্থীদের মাঝে চিকিৎসাসহ ত্রাণ সামগ্রীর সুষ্ঠু বিতরণ ও
শরণার্থীদের থেকে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পান।
যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের পুনর্বাসনে সরকারের নারী পুনর্বাসন
ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনেনর পৃষ্ঠপোষক মনোনীত হন।
তিনি ১৯৭৩ সালে পুনরায়
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীসভায় বাংলাদেশ সরকারের মহিলা, শিক্ষা,
ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে মৃত্যুর আগ
পর্যন্ত তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ সরকারি মহিলা কলেজ |
মৃত্যু ও সম্মাননাঃ বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ ২৫ মে
১৯৭৪ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর নামানুসারে ঢাকার বকশীবাজার মহিলা কলেজের নামকরণ করা
হয় বেগম
বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ। রাজনীতিতে দেশ ও
মানুষের সেবায় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে তাকে দেশের
সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয়।
২০১৭ সালে তার নামে ট্রাস্ট গঠন করা হয়। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান
হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য
(শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। ২০১৯ সালের ৮ মার্চ “বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ
ট্রাস্ট নারী সম্মাননা” প্রবর্তন করা হয়।