এমন ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে বেহেশত কনফার্ম!!!



৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মসজিদের ইমাম উধাও       


পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় কয়েক গ্রামের মানুষে সঙ্গে প্রতারণা করে দেড় বছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছে আতিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের মালিগছ বামনপাড়া জামে মসজিদের ইমাম।


গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে পলাতক রয়েছেন তিনি।  


রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মালিগছ এলাকার ২০টি পরিবার জুতা ও ঝাড়ু মিছিল করে। দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে টাকা আদায়ের দাবি জানিয়েছে তারা।


জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী প্রতারক ইমাম আতিকুর রহমান নাটোর জেলার সদর উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে।


তবে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে প্রতারণা করে আসছিলেন বলে জানান এ এলাকার ভুক্তভোগীরা।  


ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, এলাকার এক লোকের মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে গত বছর ঐতিহ্যবাহী মালিগছ বামনপাড়া জামে মসজিদে আতিকুর রহমানকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।


কিছুদিন পর ইমামতির পাশাপাশি ঠিকাদারি ও অসুস্থতার কথা বলে দেড় বছরে গ্রামের বিভিন্নজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ টাকা। ধার নিয়েছেন মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাছ থেকেও। ধার নেয়ার সময় আতিকুর রহমান সবাইকে সুদ হিসেবে বাড়তি টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখাতেন। এসব টাকা ফেরত চাইলে গত ৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পালিয়ে যান আতিকুর রহমান।  


ভুক্তভোগী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'মালিগছ বামনপাড়া জামে মসজিদের আমি একজন মুসল্লি। গত বছর ৩০ জুন ২০২২ আমাদের মসজিদে আতিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি এ এলাকার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে গোপনে ধার নিতে থাকেন। তিনি ‘মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স' নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কথা বলে গোপনে অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন। কিন্তু যার কাছ থেকেই টাকা নিয়েছেন, তাকেই অন্য কাউকে জানাতে নিষেধ করেছেন। এভাবে লাভ দেওয়ার কথা বলে তিনি ১৮-২০ জনের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। আমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। এ প্রতারককে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই'।


আরেক ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আতিকুর রহমান মসজিদে দায়িত্ব নেওয়ার পরের মাসে আমাকে জানালেন, ভাই আমি তো ঠিকাদারি ব্যবসা করি। আপনারা আমাকে একটু সহযোগিতা করেন। বললাম, হুজুর কি সহযোগিতা করবো? তখন তিনি বলেন, আমি দিনাজপুরের বিরলে ৪২ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এবং সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় ঠিকাদারি করছি। টাকা দিয়ে সহযোগিতা করলে ভালো হতো। বিষয়টি জানার পর ভাবলাম, যেহেতু আমাদের মসজিদের ইমাম, তিনি তো প্রতারণা করবেন না। তাই আমি তাকে তিন লাখ টাকা ধার দিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে টাকা চাইতে গেলে জানান, সেপ্টেম্বরে আমার বিল হবে, তখন দিয়ে দেবো। হঠাৎ শুনি গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি পালিয়ে গেছেন। এখন আমি কী করবো? টাকা কীভাবে উদ্ধার করবো? 


ভুক্তভোগী শাহিনা বেগম বলেন, হুজুর (ইমাম) আমার বাসায় ভাড়া থাকতেন। আমার পরিবারের কাছ থেকে তিনি তিন লাখ ২১ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। রাতের অন্ধকারে তিনি পালিয়ে গেছেন। এখন আমার পরিবার আমাকে টাকার জন্য খুব চাপ দিচ্ছে। কী করব- বুঝতে পারছি না।  


মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, 'এ ইমাম এমন প্রতারক হবেন- তা আমরা বুঝতে পারিনি। তিনি আমাদের মসজিদের ইমামতি ছাড়াও বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ করতেন। তা দেখে আমরা খুব বিশ্বাস করেছিলাম। তিনি আমাদের এখানে বিভিন্নজনের কাছে টাকা পয়সা নিয়ে এভাবে রাটের অন্ধকারে উধাও হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।  


কীভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, 'আতিকুর রহমান এলাকার বিভিন্নজনের কাছে কয়েকদিনের জন্য বলে টাকা ধার নিয়েছেন। যার কাছ থেকে নিয়েছেন, তাকে অন্য কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন। এভাবেই তিনি বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিতে নিতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন। শুনেছি, তিনি বগুড়ার এক এলাকা থেকেও কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। আমরা এ প্রতারক ইমামকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিচ্ছি। তেঁতুলিয়া থানাতেও অভিযোগ দিয়েছি।  


ভজনপুর ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান,  এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি  জানাই।


অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।  


তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফজলে রাব্বী বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা দেখছি এবং থানায় অভিযোগ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।  

 

সূত্র: ইন্টারনেট


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url