বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ (পর্ব-১২)-বাংলাদেশ

 

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী



সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীঃ (৮ মে ১৯৩৫ - ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২) ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা ছিলেন। তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। সাজেদার দাদী সৈয়দা হামিদুন্নেসা বামনার সৈয়দ পরিবারের মীর সরওয়ার জানের মেয়ে।

 

তার স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী ছিলেন। আকবর চৌধুরী ছিলেন ‘রাজনীতির অন্তরালের কারিগর’। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গোলাম আকবর চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে হয়। শিক্ষাজীবনে সাজেদা চৌধুরী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৫৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৯–১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিতত/মনোনীত হন। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদেও তিনি সংরক্ষিত মহিলা আসন-৯ থেকে সংসদ সদস্য মনোনীত হন।

 

সাজেদা চৌধুরী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক ও ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্লস গাইডের জাতীয় কমিশনার ছিলেন।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফরিদপুর-২ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়কের দায়িত্বও পালন করেন।

 

১২ জুন ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।

 

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফরিদপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ সাধারণ নির্বাচনেও তিনি ফরিদপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

নবম জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা হন। এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি একই পদ অলংকৃত করেন।

 

ফখরুদ্দিন আহমদের তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১০ই জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ দাখিল করে। তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। ২০০৮ সালের ১৮ই নভেম্বর বাংলাদেশ হাইকোর্ট মামলাটি স্থগিত করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে মামলাটি আবারও ওঠে। হাইকোর্ট তাকে জামিন দেয়। ২০১০ সালের ২৯শে নভেম্বর হাইকোর্ট মামলায় চৌধুরীর বিরুদ্ধের অভিযোগ সুসংগঠিত না হওয়ায় মামলাটি থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়।

 

সাজেদা চৌধুরী ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘ইউনেস্কো ফেলোশিপ’ প্রাপ্ত হন এবং একই সময়ে তিনি বাংলাদেশ গার্লস-গাইড এসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ ‘সিলভার এলিফ্যান্ট’ পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক ‘বর্ষসেরা নারী’  নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কারে’ ভূষিত করে।

 

মৃত্যুঃ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যজনিত রোগে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

 (সূত্রঃ ইন্টারনেট)

 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url