গরীবের ভ্রমণ বিলাস (পর্ব-৩০

                               


দার্জিলিং চৌরাস্তা থেকে 'মল রোড' নামে একটি রাস্তা পাহাড়ের চতুর্দিক ঘুরে পুনরায় চৌরাস্তায় এসে মিশেছে। এর যে কোনো এক দিক দিয়ে গেলেই কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্টে যাওয়া যায় এবং যে কো্নো দিক দিয়ে চৌরাস্তায় ফিরে আসা যায়।

 

চৌরাস্তার যেখানে মল রোড একসাথে মিশেছে সেখানে দেখা গেলো নেপালের বিখ্যাত কবি ‘ভানু বক্ত আচারিয়ার’ একটি মূর্তি শোভা পাচ্ছে।

 

দুইপাশ দিয়ে একইস্থানে যাওয়া যায় বিষয়টা আগে জানা না থাকায় আমরা পাহাড়ের উত্তর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট আসলে পাহাড়ের দক্ষিণ ও পশ্চিমের কিছু জায়গা জুড়ে। পাহাড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখলাম ওই রাস্তার পাশ দিয়ে পাহাড়ের গা ঘেঁষে ভালো ভালো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অনেকগুলো আশ্রম আছে।

 

সবকিছু দেখতে দেখতে হেঁটে যেতে বেশ সময় গড়িয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের পশ্চিমে যখন গেছি, হঠাৎ আবার সেই কোরিয়ান মেয়েটির সাথে দেখা। সে আমাদের উল্টো দিক থেকে হেঁটে আসছিলো। তাকে ক্রস করে আরো বেশ দূরে এগিয়ে পাহাড়ের দক্ষিণে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্টের একটা বেঞ্চে আমরা বসে আছি। ঘন্টাখানেক পরে দেখি পাহাড় প্রদক্ষিণ শেষে মেয়েটি শীতের মধ্যে একটা কোন আইসক্রিম খেতে খেতে ভিউ পয়েন্টে একটা বসার জায়গা খুঁজছে। একইদিনে তৃতীয়বার দেখা হওয়ায় আবেগে মেয়েটি আমাদের দুজনের মাঝে এসে বসে পড়লো। সামনেই দাঁড়ানো সিকিম থেকে আসা মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোকের হাতে তার ক্যামেরাটা ধরিয়ে দিয়ে বললো একটা ছবি তুলে দিতে। দেখাদেখি আমাদের ক্যামেরাতেও ভদ্রলোকের হাতে একটা ছবি তুলে নিলাম। কোরিয়ান মেয়েটির নাম মনে রাখতে পারিনি। কাগজে বা মোবাইলে নাম ঠিকানা তুলে রাখবো সে উৎসাহও তখন মনে জাগেনি। কিন্তু মানবিক মমতায় এখনো মেয়েটির কথা মনে পরে।


স্বামী-স্ত্রী দুজনের মাঝে সেই কোরিয়ান মেয়েটি


ভিউ পয়েন্টে বসে থেকে দুপুর গড়িয়ে গেলো। সেদিন আর আকাশ পরিস্কার হলো না, কাঞ্চনজঙ্ঘাও দেখা হলো না।

 

ইচ্ছে ছিলো একদিন শিলিগুড়িতে অবস্থান করে শিলিগুড়ি শহরটা ঘুরে দেখবো এবং সেখান থেকে কিছু কেনাকাটা করবো। কারণ আগেই জেনেছিলাম, দার্জিলিং কেনেকাটার জন্যে সুবিধাজনক জায়গা না। কিন্তু আগামীকাল সকালে গেলেও একদিন ওভার-ষ্টে হয়ে যাবে, তাই পরে আবার বেড়াতে আসবো এই আকাঙ্ক্ষা মনে পোষণ করে শিলিগুড়িতে অবস্থানের আশা বাদ দিতে হলো।

 

চৌরাস্তা থেকে হোটেলে ফেরৎ আসার পথে অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাস্তার পাশের মার্কেটগুলোতে একটু ঢুঁ মেরে দেখলাম যে, কিছু কেনা যায় কিনা। দার্জিলিং এর নামকরা চা কেনার খুব সাধ ছিলো আমার স্ত্রীর। কিন্তু দাম শুনেই চায়ের পিপাসা দূর হয়ে গেলো। ভালো এক কেজি চায়ের দাম সাড়ে চার হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা।

 

শাড়ি খুব কম মহিলাই পরে সেখানে। কাঠমুন্ডু শহরে দুয়েকজন মহিলার পরিধানে শাড়ি দেখেছিলাম। বাংলা এলাকা থেকে দার্জিলিং-এ যাওয়া দুয়েকজন মহিলা বাদে কারো পরনে শাড়ি দেখিনি। তাই শাড়ির তেমন ভালো দোকানও নেই সেখানে। কোলকাতার মতো ভালো শার্ট প্যান্টের কাপড়ও পাওয়া যায় না। শুধু শীতপ্রধান এলাকায় যা চলে সেগুলো পাওয়া যায় যা আমাদের দেশে চলে না। না বুঝে কয়েক পিছ প্যান্টের কাপড় এনেছিলাম, শীতকাল ছাড়া পরতে পারিনে।

 

কোলকাতার মতো ভালো শালও পাওয়া যায়না দার্জিলিং-এ। তবুও দুইতিন পিছ এনেছিলাম। হোটেল রুমে মহিলা ফেরিওয়ালারা কমদামী শাল নিয়ে যায়। সেগুলো কিনলে ঠকতে হবে।

 

তবে দার্জিলিং-এ কম্বল পাওয়া যায় সস্তায়। ৯৫০ রূপীতে (বাংলাদেশি ১৫০০ টাকা) একটা কম্বল এনেছিলাম। বাংলাদেশে তখন তার দাম ৩০০০-৩৫০০ টাকা। ডাইনিং টেবিলের জন্য একটা টেবিল ক্লথ এনেছিলাম। টেবিল ক্লথটা খুব ভালো ছিলো। আমাদের দেশে ওই ধরণের টেবিল ক্লথ দেখা যায় না।* ………………,.........(চলবে)।

*(টেবিল ক্লথটি ২০২৩ সালেও ব্যবহার হচ্ছে। ধুয়ে দিলে আগের মতোই দেখা যায়)

(২০১১ সালের ঘটনা। লেখা ২০১৪ সালের)

 

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url