ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে ৭৭ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের ফাঁসির আদেশে স্বাক্ষর করেন জিয়াউর রহমান

 "ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে ৭৭ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের ফাঁসির আদেশ দেন জিয়াউর রহমান"



"২০০৮ সালের মে মাসে নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সেনা প্রধান লে: জেনারেল হারুন বলেছেন, ৭৭ মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের ফাঁসির আদেশ দেন জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, শাসক জিয়া মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার সঙ্গে বিট্রে (বিশ্বাসঘাতকতা) করেছেন। ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে একহাতে কাঁটাচামচ, আরেক হাতে ৭৭ মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের ফাঁসির নির্দেশে স্বাক্ষর দেন জিয়াউর রহমান।


গত ২৬ মে নিউইয়র্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সেনাপ্রধান লে: জেনারেল (অব) হারুন-অর রশীদ বীরপ্রতীক এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ১৯৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে কতোটি ক্যুর চেষ্টা হয়েছিল আর সেগুলো ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্রোহের দায় চাপিয়ে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের কিভাবে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিল তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। 


লে: জেনারেল (অব) হারুন-অর রশীদ বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর থেকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে তিনি নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে ২৬টি ক্যু হয়েছে, যার একটিও সফল হয়নি। এসব ক্যুর জন্য শত শত মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। 


লে: জেনারেল হারুন সে সব দিনের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে আরো বলেন, ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে একহাতে কাঁটাচামচ ধরে, আরেক হাতে কলম তুলে ফাঁসির নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন জিয়াউর রহমান। একদিন সকালে এভাবে মোট ৭৭ জনের ফাঁসির আদেশে স্বাক্ষর দেন তিনি।


হারুন-অর রশীদ আরো বলেন, ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জেনারেল এরশাদের আমলে ৭ বার ক্যুর চেষ্টা করা হয়। এরশাদ ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে বিনাবিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন জেনারেল জিয়াউর রহমানের ঘাতক হিসেবে।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেল হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয়েছে। আরেক সেক্টর কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল আবু তাহেরকেও একইভাবে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। 


মোট কথা ১৯৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর নানা অজুহাতে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক এবং মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের নির্বিচারে হত্যা করা হয় । 


সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, এসব ঘটনা দেশবাসীকে জানতে হবে। 


অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক সেনাপ্রধান ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী হারুন-অর রশীদ বলেন, ক্যু, পাল্টা ক্যু ইত্যাদির ষড়যন্ত্র হয়েছে বাইরে এবং তার বাস্তবায়ন ঘটানো হয় ক্যান্টনমেন্ট থেকে। এতে প্রতিটি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তারা। 


তিনি বলেন, এহেন পরিস্থিতির অবসানে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ভেজাল গণতন্ত্র অপরিহার্য। তবে সে গণতন্ত্র যেন দলীয় স্বার্থে জিম্মি হয়ে না পড়ে সেদিকেও সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে। 


সংবাদ সম্মেলনে অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সমন্বয়কারী মেজর জেনারেল (অব) জামিল ডি আহসান বীরপ্রতীক বলেন, সেনা শাসন প্রলম্বিত হয় রাজনীতিকদের কারণে। কিছুসংখ্যক রাজনীতিক সেনা শাসনকে সমর্থন দেন নিজেদের স্বার্থে। 


প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে সোচ্চার প্রবাসের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত "ফেডারেশন অব অর্গানাইজেশনস এগেইনস্ট বাংলাদেশ ওয়ার ক্রিমিনালস" এবং "বাংলা হলোকাস্ট এন্ড নাতসি রিসার্চ সেন্টার'-এর যৌথ উদ্যোগে জ্যাকসন হেইটসের বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এয়ার ভাইস মার্শাল ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আহ্বায়ক এ কে খন্দকারও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ কে খন্দকার বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। আমেরিকানরাও মানবাধিকারকে অধিক গুরুত্ব দেন। তাই প্রতিটি প্রবাসীকে নিজ নিজ এলাকার সিনেটর-কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে লবিং চালাতে হবে। 


আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ড. নূরন্নবী এবং সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ ও ডা: মিনা ফারাহ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন জরুরি সে আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সীতাংশু গুহ এবং ড. মহসিন আলী। এ সময় ডা: মিনা ফারাহর লেখা "হিটলার থেকে জিয়া' গ্রন্থটির একটি কপি উপহার দেওয়া হয় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামকে। 


সংবাদ সম্মেলনের পর তারা বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিত্বকারী লোকজনের সঙ্গে চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে মতবিনিময় করেন।"


সূত্র: দৈনিক ভোরের কাগজ: ২৭ মে, ২০০৮

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url