গরীবের ভ্রমণ বিলাস (পর্ব-৩৩)
২০১১ সালে দার্জিলিং এবং নেপাল ঘুরে আসার পর নানা ব্যস্ততায় এবং পরবর্তীতে
কর্মস্থল ও বাসস্থান পরিবর্তন করায় আর কোথাও যাওয়া হয়নি। সে বছরই ইচ্ছে ছিল পরের
বছর ভুটান যাবো, তা অধ্যবধি পূরণ হয়নি।
যাইহোক, দীর্ঘ পাঁচ বছর বিরতির পর ২০১৬ সালে প্লান করলাম ভারতের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য
ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করবো। ইচ্ছে থাকা সত্বেও সময় ও সুযোগের অভাবে ইতোপূর্বে এসব
ঐতিহাসিক স্থান দেখার সুযোগ হয়নি।
প্ল্যান মোতাবেক ভিসা সংগ্রহ করলাম। ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে যুক্ত হলো যথারীতি
সন্তানদের মা সেই সাথে ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী। ২০১৫ সালেই তাদের বিয়ে হয়েছে। নিজ দেশ ছাড়া
অন্য কোথাও যায়নি তারা।
তবে ওই বছর ভিসা সংগ্রহ করতে খুব বেগ পেতে হয়েছিলো। সব সময়ই ইন্ডিয়ান ভিসা
আবেদন কেন্দ্রের সার্ভার ডাউন থাকতো। নিজ চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে একটি এজেন্টের
সাহায্য নিতে হয়েছিল।
এরপর শুরু হলো মৈত্রী ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের বিরম্বনা। অনেক আগে থেকেই টিকেট
সংগ্রহ করতে হয় তা জানা ছিলো না। কমলাপুর ষ্টেশনের সংশ্লিষ্ট টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট
নেই বলে জানানো হচ্ছিলো। অবশেষে রেলেরই এক উপ-পরিচালক বন্ধুর সহায়তায় তাদের সংরক্ষিত
কোটা থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
আমরা যেহেতু ঘুরতে যাবো, কোন বিলাসী ভ্রমণ নয়। তাছাড়া দলে সদস্য সংখ্যাও
বেশি, ট্রেন ভ্রমণই আমাদের জন্য উপযুক্ত বলে মনে হয়েছিলো। তাই হিসেব করে সময় মিলিয়ে
কলকাতা থেকে দিল্লী যাওয়ার টিকেটও দেশে বসেই সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিলাম। দিল্লী থেকে
সম্ভবমত ও সাধ্যমতো অন্যান্য স্থান, স্থাপনা পরিদর্শনে যাবো।
যদিও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নিজেই অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করার সুযোগ ছিলো। তবুও
ঝামেলা এড়াতে এবং সহজেই একজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ায় দিল্লীতে অবস্থানরত তার
এক বন্ধুর সাহায্যে কলকাতা-দিল্লীর অনলাইন টিকিট পেয়ে গেলাম।
শুরু হলো যাত্রার পালা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মৈত্রী ট্রেনে কলকাতা পৌছলাম। প্রথম মৈত্রী এক্সপ্রেসে
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ভালোই লেগেছিলো। আমাদের কলকাতা টু দিল্লী ‘রাজধানী এক্সপ্রেসে’ যাত্রার
নির্ধারিত তারিখ ছিল ১৬ সেপ্টেম্বর। তাই অনিচ্ছাসত্বেও কলকাতায় একদিন বেশি অবস্থান
করতে হলো। ফিরতি পথে দুদিন কলকাতায় অবস্থান করে কিছু কেনাকাটা করে দেশে ফেরার ইচ্ছা
ছিলো। কিন্তু একদিনের বিরতি পেয়ে সফরসঙ্গীরা ঘটিয়ে বসলো এক কান্ড।
বাইরে বেড়াতে বেরিয়ে নিষেধ সত্ত্বেও দেখার নাম করে শ্রী লেদারে ঢুকে পড়লো
সবাই। দেখতে দেখতে একে একে ২২ জোড়া জুতা-স্যান্ডেল কিনে বসলো, যা ৮০ কেজি ধারণক্ষমতা
সম্পন্ন একটি প্লাস্টিকের বস্তা ভর্তি হয়ে গেলো। এটা নিয়ে তো আর জার্নি করা সম্ভব না।
প্যাকেটগুলো ফেলে দিলেও প্রত্যেকের ব্যাগে ৫-৬ জোড়া করে জুতা নিয়ে ঘুরতে হতো। প্যাকেট
ফেলতেও নারাজ সবাই। কি করবো ভাবছিলাম। এমন সময় আমাদের হোটেলের এক এটেন্ডেন্ট বুদ্ধি
দিলো; ‘পাশের হোটেলের (রয়েল) স্টোররুম বড় আছে, ষ্টোরম্যানকে কিছু টাকা দিয়ে সেখানে
রাখতে পারেন কিনা দেখেন’।
সেটাই করতে হলো। ৫-৭ দিনের জন্য ১০০ কি ২০০ (মনে নেই, তবে ২০০ রুপির বেশি
হবে না) রুপির বিনিময়ে জুতার বস্তা সেই হোটেলের ষ্টোরে রেখে পরেরদিন হাওড়া ষ্টেশনে
গিয়ে “রাজধানী এক্সপ্রেস ধরি। যাওয়ার সময় হোটেলে
পরিচয় হওয়া এক বাংলাদেশি দম্পতিও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আমাদের সঙ্গী হলো। কিন্তু তাদের
অগ্রিম টিকেট ক্রয় করা না থাকায় আমি যে টিক্লেট জনপ্রতি ১৬০০ রূপিতে কিনেছিলাম, তাদের
কিনতে হয় ২৪০০ রূপিতে।
ভারতের ট্রেনের সিস্টেম হলো; ট্রেনের সময় যতো ঘনিয়ে আসবে, টিকেটের দাম বাড়তে
থাকবে। দিল্লী থেকে আজমীর যাওয়ার সময় তাৎক্ষণিক
টিকেট কেনায় ৭০০ রুপির টিকেট ১০৫০ রুপিতে কিনতে হয়েছিলো। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে চীন ভ্রমণে
গিয়েও একই নিয়ম দেখেছি। একই নিয়ম বিমানের ক্ষেত্রেও। বিমানের সময় যতো ঘনিয়ে আসে, টিকেটের
দাম ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। …………………(চলবে)