নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেলেন ইরানের কারাবন্দ নারী অধিকারকর্মী নার্গেস মোহাম্মদী
নার্গেস মোহাম্মদী |
আজ ০৬ অক্টোবর ২০২৩ শুক্রবার নরওয়ের রাজধানী অসলোতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। ইরানের নারী অধিকার এবং মানবাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য আপোষহীন সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসাবে ইরানের নার্গেস মোহাম্মদীক বেছে নিয়েছে নোবেল কমিটি।
ইরান কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৩ বার তাকে আটক করেছে। তারমধ্যে পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত করে ৩১ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৫৪ টি বেত্রাঘাতের শাস্তি দিয়েছে। তারপরও অধিকার আদায়ের লড়াই থেকে বিচ্যুত হননি নার্গেস।
কারাবন্দী অধিকারকর্মী ও
তাদের পরিবারকে সহায়তার জন্য ২০১১ সালে প্রথমবার গ্রেপ্তার হন নার্গেস। একাধিক
বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি পাওয়ার দুই বছর পর জামিনে মুক্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডের
বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তিনি। ২০১৫ সালে এজন্য তাকে আবারও আটক করা হয় এবং নতুন করে
কারাদণ্ড ভোগ করেন। তাতেও তাকে দমানো যায়নি বরং জেলে থেকেই রাজনৈতিক বন্দীদের
উপর চালানো নিপীড়ন, নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণের বিরুদ্ধে
সোচ্চার হন তিনি৷।
গত বছর মাহসা আমিনীর
মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে শুরু হওয়া আন্দোলনেও জেল থেকে তিনি সংহতি জানান৷ এরপর
কারা কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়। বাইরে থেকে তার সাথে কারো
সাক্ষাৎ কিংবা ফোন কল গ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইরান সরকার। এই পরিস্থিতির
মধ্যেও কারাগার থেকে গোপনে গণমাধ্যমে তিনি লেখা প্রকাশ করেন।
নোবেল কমিটি বিবৃতিতে
বলেছে, ইরানের মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য তার এই সাহসী লড়াইয়ের
প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে এই বছর নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেয়া হচ্ছে।
নার্গেস মোহাম্মদী ইরানের জাঞ্জান
নামক স্থানে ১৯৭২ সালের ২১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ইরানের
আরেক মানবাধিকারকর্মী এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ‘শিরীন
এবাদী’র নেতৃত্বে “ডিফেন্ডারস
অফ হিউম্যান রাইটস সেন্টার (ডিএইচআরসি)”-এর ভাইস
প্রেসিডেন্ট তিনি। মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগে নার্গেস মোহাম্মদীকে বর্তমানে ইরানের
কুখ্যাত এভিন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।
পুরষ্কার ঘোষণার সময় নোবেল কমিটি বলেছে, নার্গেস মোহাম্মদীর সাহসী ভূমিকার জন্য ব্যক্তিগত জীবনে তাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। সবমিলিয়ে ইরানের শাসক গোষ্ঠী তাকে ১৩ বার গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে তাকে পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত করে সর্বমোট ৩১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস-এন্ডারসেন বলেন, “আমি যখন কথা বলছি তখনও তিনি কারাগারে"।
ইরানে পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর এক বছর পুর্তিতে ওয়াংশিটনে ইরানী নারীদের বিক্ষোভ।
এক বছর আগে ইরানের নারীরা যে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন সে প্রেক্ষাপটে নার্গেস মোহাম্মদীকে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করা হলো। ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনীর মৃত্যুর পর সে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।
জাতিসংঘ বলেছে, ক্রমাগত সহিংসতা, ভয়ভীতি দেখানো, হয়রানি এবং আটকের
ঘটনার মধ্যে ইরানের নারীরা যে সাহসী ভূমিকা পালন করছে নোবেল পুরষ্কারের মাধ্যমে
সেটির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হলো।
২০২২ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিস-এর প্রধান ওলেকসান্দ্রা মাটভিচুক ‘নার্গেস মোহাম্মদী’কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ইরানের জনগণ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ইরানের জণগণের সাফল্যের উপর’।
পুরষ্কার ঘোষণার পর নার্গেস মোহাম্মদীর পরিবার বলেছে ইরানের নারীরা স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম করছে তার একটি ঐতিহাসিক মূহূর্ত। কিন্তু এই অসাধারণ মূহূর্তটি নার্গেস মোহাম্মদী উদযাপন করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছে তার পরিবার।
সেদেশে অবস্থানরত কূটনৈতিক সংবাদদাতার বরাত দিয়ে বিবিসি বলেছে, ‘কারাগার
থেকে মুক্ত হয়ে নার্গেস মোহাম্মদীর নোবেল পুরষ্কার গ্রহণ করার সম্ভাবনা খুবই কম।
কারণ, বর্তমানে তিনি ইরানের এভিন কারাগারে ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন।
নার্গেস মোহাম্মদীকে শীঘ্রই মুক্তি দেয়া হবে বলে নোবেল কমিটি আশা করে, যাতে তিনি আগামী ডিসেম্বরে নোবেল পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন।
তবে নার্গেস মোহাম্মদীর নোবেল পুরষ্কার পাবার বিষয়টিকে সমালোচনা করেছে ইরানের একটি বার্তা সংস্থা। ইরানের ফার্স বার্তা সংস্থা বলেছে, পশ্চিমাদের কাছ থেকে পুরষ্কার’ পেয়েছে নার্গেস মোহাম্মদী। জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য সে একাধিকবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্যই তাকে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে।
এই পুরষ্কার ইরানের শাসক গোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করার কড়া বার্তা
হিসেবে বর্ণনা করেছে বিবিসি।