শেখ হাসিনাকে নিয়ে জিয়ার যত অপরাধ

 



জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তখন শেখ হাসিনা ছিলেন তার স্বামী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানিতে। তার ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন তার সাথে। শেখ হাসিনা যখন জানতে পারেন যে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, তখন তিনি দিল্লীতে চলে আসেন এবং সেখানে বসবাস করেন। 


আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে দেশে ফিরিয়ে আনে ১৯৮১ সালে। এর আগে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী অন্যদলে চলে যান। অবশিষ্ট নেতাকর্মীদের উপর চলে নির্মম অত্যাচার। এরকম অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ দলকে বাঁচাতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দলের কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নিযুক্ত করেন। 


শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হওয়ার কিছুদিন পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৮১ সালের ৩০মে জিয়াউর রহমান মারা যান। কিন্তু ৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর থেকে জিয়াউর রহমান বিভিন্নভাবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। শেখ হাসিনা যাতে দেশে না আসতে পারেন সে জন্য বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, দিয়েছেন নানা রকম অবৈধ নির্দেশনা। 


শেখ হাসিনাকে নিয়ে জিয়াউর রহমান যত অপরাধ করেছে% তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো।


১. দেশে আসতে বাধা দেওয়া: শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি হননি, জাতির পিতার মৃত্যুর পর তিনি দিল্লীতে এসে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি কয়েকবার দেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে দেশে আসতে বাধা দেয় জিয়াউর রহমান। 

জিয়াউর রহমান তখন একাধারে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি। মূলত জিয়াউর রহমানের বাধার কারণেই শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসতে পারেননি। এমনকি ১৭ মে শেখ হাসিনা যেন বাংলাদেশে না আসতে পারেন সেজন্য জিয়াউর রহমান বিভিন্ন রকম চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার অকুতোভয় সাহস এবং দৃঢ়চেতা মনভবের কারণে শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের বাধা কাজে লাগেনি।


২. ভারতে আশ্রয় না দিতে অনুরোধ: জিয়াউর রহমান যখন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থেকে রাষ্ট্রপতি হন তখন তিনি একবারই ভারত সফর করেন। ভারত সফরে তিনি শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিয়ান টাইমসে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সে সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল।


৩. রাজনৈতিক নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি: আওয়ামী লীগ যখন কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে সভাপতি করার ব্যাপারে মনস্থ করেন সে সময় জিয়াউর রহমান সামরিক গোয়েন্দাদেরকে পাঠিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে। তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে, শেখ হাসিনাকে যেন আওয়ামী লীগের সভাপতি না করা হয়। শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হলে আওয়ামী লীগের সামনে বড় বিপদ হবে, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে এমন হুমকিও দেয়া হয় তৎকালীন সামরিক গোয়েন্দাদের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের অন্তত দুই জন নেতা কাউন্সিল অধিবেশনে জিয়াউর রহমানের এই হুমকির কথা জানান। কিন্তু সেই সময় পরিস্থিতি এমন ছিল যে কর্মীরা উন্মুখ হয়ে ছিল শেখ হাসিনাকে নেতৃত্বে বরণ করে নেয়ার জন্য।


৪. বঙ্গবন্ধু ভবন দিতে অস্বীকৃতি: শেখ হাসিনা যখন ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন তখন তার পিতৃসম্পত্তি নিজ বাড়ি বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর ওই বাড়ির জীবিত উত্তরাধিকারী বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশে না থাকায় বঙ্গবন্ধু ভবন ছিলো তৎকালীন সরকারের তত্ত্বাবধানে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু ভবন ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর পরবর্তীতে সাত্তার সরকার এই ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে হস্তান্তর করেন।


৫. আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন: জিয়াউর রহমানের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দেয়া, আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়া। আর এ কারণেই পঁচাত্তরের পর থেকে আওয়ামী লীগের উপর বর্বর, নির্মম নির্যাতন শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগের নেতাদের নামে বিভিন্ন মামলা করে অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার করে এক নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। বিভিন্ন হিসেব অনুযায়ী আওয়ামীলীগের প্রায় ১২ হাজার নেতাকর্মী কারাবরণ করেছিলেন জিয়াউর রহমানের আমলে। আর এটি করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ যেন একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্ববিহীন হয়ে পড়ে সেজন্যে।


সূত্র: বাংলা ইনসাইডার: ১৫ অগাস্ট ২০২১

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url