বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ (পর্ব-২)-আফগানিস্তান
মাসুদা জালাল
মাসুদা জালাল |
মাসুদা জালালঃ আফগানিস্তানের একজন রাজনীতিবিদ,
যিনি ২০০৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০০৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত দেশটির নারী বিষয়ক
মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে দেশটির রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে
একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং ১৮
জন প্রার্থীর মধ্যে ৬ষ্ঠ
স্থান লাভ করেছিলেন। পরে প্রেসিডেন্ট হামিদ
কারজাই তাকে তার মন্ত্রীসভার
নারী বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন।
মাসুদা জালাল একজন শিশুরোগ
বিশেষজ্ঞ। তিনি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর কর্মী হিসেবেও
দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
শাহলা আতা
শাহালা আতা |
শাহলা আতাঃ একজন আফগান
রাজনীতিবিদ ও কংগ্রেস উইমেন্স। ২০০৯ সালে আফগানিস্তানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যে দুইজন
নারী প্রার্থী ছিলো তার মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। তিনি ডিমান্নোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে
বলেছিলেন যে, তিনি এবং তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ বছর ধরে বসবাস করেছেন।
রাজনীতিতে আসার আগে শাহালা আতা ছিলেন একজন নিবন্ধিত নার্স এবং
প্রশিক্ষিত মনোবিজ্ঞানী। তিনি ২০০৫ সালে আফগান জাতীয় আইনসভার নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব
পিপলসে’র সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কাবুলের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং জেরগা-এর
মাদকদ্রব্যের জন্য মনিটরিং কমিশনের সদস্য ছিলেন।
২০০৯ সালের আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে
দুইজন নারী প্রার্থী ছিল শাহলা আতা হলেন তাদের একজন। অপর নারী প্রার্থী ছিলেন ফ্রোজান ফানা। তিনি বত্রিশ জন প্রার্থীর
মধ্যে ১৪তম স্থান অর্জন করেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় তিনি বলেন, যদি তিনি
নির্বাচিত হন তবে তিনি ১৯৭০-এর দশকের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ দাউদ খানের নীতিগুলি
অনুসরণ করবেন।
২০১৫ সালের ১২ মার্চ শাহালা আতার নিজ বাড়িতে তার
প্রাণহীন দেহ আবিষ্কার করা হয়।
ফ্রোজান ফানা
ফ্রোজান ফানাঃ (জন্ম ১৯৬৯) ২০০৯ সালের আফগান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের একজন
প্রার্থী ছিলেন। তিনি তার আগে কখনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন
না। তিনি একজন অর্থোপেডিক সার্জন ছিলেন। এবং তার স্বামী আব্দুল
রহমান ছিলেন আফগান বিমানমন্ত্রী।
নির্বাচনী পোস্টারে নিজের ছবি ব্যবহারের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে
সমালোচিত হয়েছিলেন।২০০৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আরেকজন নারী প্রার্থী
ছিলেন শাহলা আতা। তিনি
ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট লয়া জিরগার সদস্য ছিলেন।
টরোন্টো স্টারের লেখা রোসি ডিম্যানোর মতে ফ্রোজেন ফানা নারী হওয়ার
কারণে প্রচারণায় বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ডিম্যানো
ফ্রোজান ফানার উদ্বেগকে বর্ণনা করে বলেছিলেন, "কারজাইয়ের প্রশাসনের মধ্যে
তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ তার স্বামী রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সম্ভাব্য
প্রার্থী হিসাবে আর্বিভূত হয়েছিলেন"।
ডিম্যানো ফ্রোজান ফানাকে উল্লেখ করে তার সমস্যাগুলোর উদ্ধৃত করেছেন
যে, ফানা অন্যন্যাও মহিলাদের কাছে রোল মডেল হয়ে ওঠায় তাকে অনেক ধরনের হুমকির
মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে তিনি বত্রিশ জন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর
মধ্যে অষ্টম হয়েছিলেন।
ফাওযিয়া কুফি
ফাওজিয়া কুফি |
ফাওযিয়া কুফিঃ (জন্ম ১৯৭৫) একজন আফগান রাজনীতিবিদ এবং নারী অধিকার কর্মী।
কুফি মূলত বাদাখশন প্রদেশের ব্যক্তি হলেও তিনি কাবুলের সংসদ সদস্য হিসেবে
এবং জাতীয় বিধানসভার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।
তিনি সাত নারীবিশিষ্ট একটি বহুগামী (বহুবিবাহ) পরিবারে
জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মেয়ে হওয়ার কারণে প্রথমে তাঁর বাবা-মা তাঁকে প্রত্যাখ্যান
করেছিলেন। তাঁর সংসদ সদস্য বাবা একজন তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর মা স্বামীর
মন রাখতে একটি পুত্র সন্তান চেয়েছিলেন। তাঁর জন্মের দিন মেয়ে হওয়ার কারণে তাঁকে
রোদে ফেলে রাখা হয়েছিলো যেন তিনি মারা যান।
অবশেষে তিনি পড়াশোনা করার জন্য পিতাকে রাজি করিয়েছিলেন।
পরবর্তীকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি
অর্জন করেছিলেন।
হামিদ নামে একজন প্রকৌশলী ও রসায়ন শিক্ষকের সাথে
ফাওযিয়া কুফির বিয়ে হয়। তিনি নিজের পরিবারের পছন্দকে অস্বীকার না করেই বিয়েতে
রাজি হন। তাঁদের বিয়ের দশ দিন পরে তালেবান সেনারা তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করে
এবং তাঁকে কারাবন্দী করে। কারাগারে তাঁর স্বামী যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন
এবং ২০০৩ সালে মুক্তির পরপরই তিনি মারা গিয়েছিলেন। কুফি বর্তমানে নিজের দুই
কিশোরী কন্যার সাথে কাবুলে থাকেন।
আজরা জাফরি
আজরা জাফরি |
আজরা জাফরিঃ ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে
আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা মেয়র হিসেবে নিযুক্ত হন। প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তাকে নিযুক্ত করেন। তাকে দায়াকুন্দী প্রদেশের নিলি শহরের মেয়র করা
হয়। জাফরি একজন লেখক এবং এখন পর্যন্ত তিনি দুইটি বই প্রকাশ করেছেন। তিনি হাজারা
জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত।
আজরা জাফরি ইরানে শরণার্থী
হিসেবে বসবাস করার সময় সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর কাবুলের ধাত্রী বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা
অব্যাহত থাকে। ২০০১ সালের শেষের দিকে তালেবান সরকারের পতন ও পশ্চিমা সমর্থিত কারজাই
প্রশাসন প্রতিষ্ঠার পর তিনি আফগানিস্থানে ফিরে আসেন। ২০০৫ সালে তিনি একটি
কন্যা সন্তানের মা হন।
আজরা জাফরি ১৯৯৮ সালে আফগান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক
বিষয়ক পত্রিকা “ফারহাং” এর
প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এরপর তিনি ইরানে আফগান উদ্বাস্তুদের জন্য একটি
প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তখন তিনি শরনার্থীদের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ে
কাজ করতেন। ২০০১ সালে তিনি কাবুলের লয়া জিরগার সাথে যুক্ত হন। এরপর ২০০৮
সালের ডিসেম্বর তিনি আফগানিস্তানে প্রথম ও একমাত্র মহিলা মেয়র হিসাবে নিযুক্ত হন।
তাকে নিলি শহরের মেয়র হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
আজরা জাফরি একজন লেখক। তিনি দুটি বই লিখেছেন। তার প্রথম বই
প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। বইটি ছিলো আফগানিস্তানের রাজনীতি বিষয়ক। তার দ্বিতীয়
বইয়ের নাম “আই অ্যাম আ ওয়ার্কিং
উইম্যান”। বইটি শ্রম আইন এবং শ্রম বাজারে আফগান নারীর অধিকার নিয়ে লেখা।
বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে।
আজরা জাফরিকে তার জাতীয় কর্মকাণ্ড ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য “মিটো
স্মৃতি” পুরস্কার প্রদান করা হয়।
(সুত্রঃ ইন্টারনেট)