"শিশু ধর্ষণকারী এক ‘মানবিক’ হুজুর!
শিশু ধর্ষক মৌলানা নাছির |
২০২০ সালে এক পুলিশ
অফিসারের লেখা একটি ফেসবুক পোষ্ট। তিনি এভাবে লিখেছেন—
“স্যার, ওরা তো
খুব ছোটো। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি, যেন ওরা বেশি ব্যথা না পায়। আমি তো ওদের শিক্ষক,
ওরা ব্যথা পেয়ে কান্নাকাটি করলে আমার খুব কষ্ট লাগে।’
‘ভাষ্যটি রাঙ্গুনিয়ার
একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক নাছির উদ্দিনের। নিয়মিত অগণিত শিশুকে তার লালসার শিকারে
পরিণত করলেও গ্রেপ্তার হবার পর আমাদের প্রশ্নের জবাবে ধর্ষিত শিশুদের প্রতি এমন সদয়
আবেগ তার!’
নাছিরের বিরুদ্ধে
ওঠা অভিযোগের ফিরিস্তি শুনলে আপনার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হবে। মাদ্রাসার হোস্টেলের ইনচার্জ
হিসেবে দায়িত্বে থাকার সুযোগে ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক শিশু ছাত্রকেই নিয়মিত বিছানার সঙ্গী
করেন তিনি।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে
যা বের হয়ে আসে, তাতে শিউরে উঠবেন যে কেউঃ
ধর্ষণ করার জন্য
মূলত দশ বছরের নিচের ছেলেশিশুদেরকেই টার্গেট করতেন তিনি। কোনো শিশু তার আহ্বানে সাড়া
না দিলে তাকে বাধ্য করার জন্য কারণে অকারণে বেধড়ক মারধোর করা হতো। যেহেতু সেখানে বেশিরভাগ
শিশুই এতিম বা দরিদ্র পরিবার থেকে আসা, শেষপর্যন্ত তার পক্ষে হুজুরের প্রস্তাবে হ্যাঁ
বলা ছাড়া ভিন্ন উপায় থাকতো না। নাছিরের ছেলেশিশু আসক্তি এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলো
যে, বিষয়টি টের পেয়ে তার স্ত্রী তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যান।
হুজুর অনেক সহমর্মি
ও ভীষণ রকম নিয়মনিষ্ঠও। বিশৃঙ্খলা তার অপছন্দ! তাই রুটিন করে দিয়েছেন, ওস্তাদের খেদমতে
কখন কোন শিশু হাজির হবে। যেনো সেই গল্পের অত্যাচারী সিংহের মতো, যে কিনা বনের পশুদের
সাথে চুক্তি করেছিলো, ‘প্রতিদিন একটি করে প্রাণী খাবার হিসেবে তার নিকট চলে আসলে সে
আর যার তার ওপর অত্যাচার করবে না’।
এই করে বেশ ভালমতোই
চলছিল হুজুরের বিকৃত যৌনজীবন। ছাত্ররাও মারধর, হুমকিধামকির ভয়ে নীরবে নিশ্চুপে সব সয়ে
যাচ্ছিলো।
ঝামেলা শুরু হয়
গতকাল সন্ধ্যায়। এক অভিভাবকের কাছ থেকে প্রাথমিক অভিযোগ পাবার পর আমাদের বিশদ অনুসন্ধানে
উঠে আসে বলাৎকারকারী নাছিরের বিকৃত যৌনজীবনের অবিশ্বাস্য সব খতিয়ান। গ্রেপ্তারের পর
রীতিমতো ভোল পালটে দাবি করেন— ‘তিনি জোর করে বিছানায় নিতেন না, ছাত্ররাই স্বেচ্ছায়
তার সঙ্গ নিতে আসতো’। যদিও গরিব ঘরের অসহায় ছেলেগুলোর সাথে দিনের পর দিন কোন কৌশলে,
কি কি ঘটিয়েছে নরপশু নাছির, তা আমাদের অজানা ছিল না।
‘আজ সকালে আদালতে
পাঠানো হলে গ্রেপ্তারকৃত নাছির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ
স্বীকার করে নেন। পাশাপাশি বলাৎকারের শিকার চার শিশুও আদালতে তাদের উপর চালানো নির্মমতার
বর্ণনা দেয়। ইনশাআল্লাহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই হবে তার।‘
অভিভাবকদের প্রতি
অনুরোধ, আপনার শিশু ছেলে বা মেয়ে যাই হোক, তার নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় রাখুন। শিক্ষক
হোক, আত্মীয় হোক কিংবা হোক প্রতিবেশী, আপনার সন্তানকে কারো অরক্ষিত শিকারে পরিণত হবার
সুযোগ দিবেন না প্লিজ।“
সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি)
রাঙ্গুনিয়া সার্কেল, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।।"