১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে বৃটিশ রাজতন্ত্র চালু ছিলো!

 

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ

আশাকরি জেনে অবাক এবং বিভ্রান্ত হবেন না যে, ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট স্বাধীনলাভের পরও ২৩ মার্চ ১৯৫৬ পর্যন্ত পাকিস্তানে (তথা বর্তমান বাংলাদেশে) বৃটিশ রাজতন্ত্র কায়েম ছিলো। রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ২৩ মার্চ ১৯৫৬ পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলো বৃটেনের রাণী  দ্বিতীয় এলিজাবেথ।


১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ডোমিনিয়ন কমনওয়েলথ অব নেশনস-এর মধ্যে পাকিস্তান  একটি স্ব-শাসিত দেশ ছিলো। কিন্তু তা যুক্তরাজ্য এবং কমনওয়েলথের অন্যান্য ডোমিনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বৃটিস রাজতন্ত্রের অধীনে ছিলো।  তবে রাজ্তন্ত্রের সাংবিধানিক ভূমিকা বেশিরভাগই রাণীর একজন উপ-প্রতিনিধি অর্থাৎ পাকিস্তানের গভর্নর-জেনারেলের উপর অর্পণ করা হয়েছিলো।

 

ইতিহাস

ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে বিভক্ত করা হয়। পাকিস্তান যুক্তরাজ্য এবং কমনওয়েলথ অফ নেশনস এর অন্যান্য ডোমিনিয়নের সাথে বৃটিশ রাজতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজা ষষ্ঠ জর্জ পাকিস্তানের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।

রাজা ষষ্ঠ জর্জ

পাকিস্তানের স্বাধীনতা উপলক্ষে রাজা তার জনগণকে অভিনন্দন বার্তা পাঠান। ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদে লর্ড মাউন্টব্যাটেন অভিনন্দনবার্তাটি পাঠ করেছিলেন। বার্তায় রাজা বলেছিলেন "চুক্তির মাধ্যমে আপনাদের স্বাধীনতা অর্জন সারা বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য আপনারা একটি উদাহরণ স্থাপন করেছেন”। রাজা পাকিস্তানি জনগণকে বলেছিলেন "আমার সহানুভূতি এবং সমর্থনের বিষয়ে আপনারা সর্বদা আশ্বস্ত থাকতে পারেন। কারণ আমি মানবতাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আপনাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা লক্ষ্য করেছি”।

 

রাজা ষষ্ঠ জর্জ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে পাকিস্তানের গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত করেন এবং তাকে পাকিস্তানে তার প্রতিনিধি হিসেবে সকল ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রয়োগ ও পালনের জন্য অনুমোদন দেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিম্নলিখিত শপথ গ্রহণ করেন:

 

"আমি, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সংবিধানের প্রতি সত্যিকারের বিশ্বাস এবং আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এবং আমি পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের অফিসে মহামহিম রাজা ষষ্ঠ জর্জের প্রতি বিশ্বস্ত থাকব।"

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ


মদ্যপ মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ তার অফিস কক্ষে (অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের মতো কাশতে কাশতে) মারা যান। রাজা ষষ্ঠ জর্জ একটি রাজকীয় ডিক্রির মাধ্যমে ‘স্যার খাজা নাজিমুদ্দিনকে’ পরবর্তী গভর্নর-জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন। ডিক্রীতে রাজা বলেনঃ

 

"কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দুঃখজনক মৃত্যুর কারণে শূন্যপদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে খাজা নাজিমুদ্দিনকে পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর-জেনারেল হিসাবে নিয়োগ করতে পেরে আমি খুশি।"

খাজা নাজিমুদ্দিন


১৯৫১ সালে স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য গভর্নর-জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। রাজা স্যার গোলাম মোহাম্মদকে পাকিস্তানের তৃতীয় গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করেন।

খাজা গোলাম মোহাম্মদ

রাজা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ঘুমের মধ্যেই মারা যান। রাজার মৃত্যুতে পাকিস্তানে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। রাজার মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সব সরকারি অফিস বন্ধ ছিলো। সমস্ত চিত্তবিনোদন স্থান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। সরকার সমস্ত অফিসিয়াল ব্যস্ততা বাতিল করে। বেশিরভাগ পাকিস্তানি সংবাদপত্র ৭ ফেব্রুয়ারি কালো বর্ডার দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন পাকিস্তান জুড়ে দুই মিনিটের জাতীয় নীরবতা পালন করা হয়। রাজার জীবনের প্রতিটি বছরের জন্য একটি হিসেবে ৫৬টি তোপধ্বনি দেয়া হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন পর্যন্ত সকল স্থানে পাকিস্তানি পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

 

পাকিস্তানের গণপরিষদে, ডোমিনিয়ন ফেডারেল আইনসভায় প্রধানমন্ত্রী স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন বলেছিলেন, ‘রাজার রাজত্বকাল পাকিস্তানীরা সর্বদা স্মরণ করবে। তার সময়কালে ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশের মুসলমানরা নিজেদের জন্য একটি স্বদেশ তৈরি করেছিলো"।‘

 

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকাল (১৯৫২-১৯৫৬)

৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জ এর মৃত্যুর পর তার বড় মেয়ে প্রিন্সেস এলিজাবেথ পাকিস্তানের নতুন রাজা বা রাণী হন। তিনি পাকিস্তান সহ তার রাজ্য জুড়ে রা্ণী নিজেকে হিসাবে ঘোষণা করেন। পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ২১ তোপধ্বনি স্যালুট দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

 

অ্যান্ড্রু মাইকেল ১৯৫২ সালে লেখেন, "দ্বিতীয় এলিজাবেথ অনেক রাজতন্ত্রকে অলঙ্কৃত করেছেন", কারণ তিনি যুক্তরাজ্যের রাণী ছিলেন। একইভাবে তিনি পাকিস্তানেরও রাণী ছিলেন। তিনি যোগ করেন যে "এখন দ্বিতীয় এলিজাবেথের পক্ষে বাস্তবে এবং তত্ত্বের পাশাপাশি তার সমস্ত রাজ্যে সমানভাবে রাণী হওয়া সম্ভব"।

 

১৯৫৩ সালে তার রাজ্যাভিষেকের সময় দ্বিতীয় এলিজাবেথ্কে পাকিস্তান এবং অন্যান্য স্বাধীন কমনওয়েলথ রাজ্যের রাণী হিসাবে মুকুট পরানো হয়। তার রাজ্যাভিষেকের শপথে রা্ণী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে "পাকিস্তানের জনগণ তাদের নিজস্ব আইন ও রীতিনীতি অনুযায়ী তাদের দেশ শাসন করবে"।

 

রাণীর রাজ্যাভিষেকের গাউন প্রতিটি কমনওয়েলথ দেশের ফুলের প্রতীক দিয়ে সূচিকর্ম করা হয়েছিলো। তাতে পাকিস্তানের তিনটি প্রতীক ছিল: ওট-আকৃতির হীরা এবং সোনালি স্ফটিকের ফ্রন্ডে গম; সবুজ রেশমের পাতা দিয়ে রূপালী তৈরি তুলা; এবং সবুজ সিল্ক এবং সোনালী সুতোয় সুচিকর্ম করা পাট।

 

মির্জা আবুল হাসান ইস্পাহানি কর্তৃক রাজ্যাভিষেকের সময় পাকিস্তানের স্ট্যান্ডার্ড বহন করা হয়েছিল। মেজর জেনারেল মো. ইউসুফ খান পাকিস্তানের করোনেশন কন্টিনজেন্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানী নৌবাহিনীর জাহাজ এইচএমপিএস জুলফিকার এবং এইচএমপিএস ঝিলম ১৫ জুন ১৯৫৩ সালে স্পিটহেড-এ নৌবহরের করোনেশন রিভিউতে অংশ নিয়েছিল, যার মূল্য ছিল প্রায় ৮১ হাজার টাকা।

 

রাজ্যাভিষেকের জন্য অ্যাবেতে পাকিস্তানিদের জন্য ৮০টি আসন সংরক্ষিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া, তার স্ত্রী এবং দুই পুত্র সহ ২ জুন রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এরপর ৩ জুন থেকে ৯ জুন ১৯৫৩ পর্যন্ত তিনি লন্ডনে কমনওয়েলথ প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলনে যোগদান করেন। 


মোহাম্মদ আলি বগুড়া

রাণীর রাজ্যাভিষেকের জন্য পাকিস্তান সরকার প্রায় ৪ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা ব্যয় করে। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলি বগুড়া এই খরচ ন্যাসংগত স্বীকার করে বলেন, ‘পাকিস্তান কমনওয়েলথের সদস্য হওয়ায় "এই ধরনের অনুষ্ঠানে অন্যান্য ডোমিনিয়নের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে"।

 

পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতা সমান করার চেষ্টা করার জন্য ১৯৫৩ সালে গভর্নর-জেনারেল স্যার গোলাম মুহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী স্যার খাজা নাজিমুদ্দিনকে বরখাস্ত করেন। খাজা নাজিমুদ্দিন সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করার জন্য রাণীকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু রাণী বিষয়টীতে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করেন।

 

১৯৫৫ সালের কমনওয়েলথ প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সহ-কমনওয়েলথ নেতাদের জানিয়েছিলেন যে, ‘পাকিস্তান একটি প্রজাতন্ত্রী সংবিধান গ্রহণ করবে, তবে পাকিস্তান কমনওয়েলথের সদস্য হিসেবে থাকতে চায়’। কমনওয়েলথ নেতারা ৪ ফেব্রুয়ারি একটি ঘোষণা জারি করেন, যেখানে বলা হয়েছিল:

 

“পাকিস্তান সরকার পাকিস্তানের জনগণের অভিপ্রায় সম্পর্কে কমনওয়েলথের অন্যান্য সরকারকে জানিয়েছে যে, পাকিস্তানে একটি নতুন সংবিধানে গৃহীত হতে চলেছে। ফলে পাকিস্তান একটি সার্বভৌম স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে পরিণত হবে। পাকিস্তান সরকার অবশ্য কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এর পূর্ণ সদস্যপদ অব্যাহত রাখার এবং তার স্বাধীন সদস্য দেশগুলির স্বাধীন অ্যাসোসিয়েশনের প্রতীক হিসাবে এবং কমনওয়েলথের প্রধান হিসাবে রাণীকে তার গ্রহণযোগ্যতা অব্যাহত রাখার জন্য পাকিস্তানের ইচ্ছা ঘোষণা ও নিশ্চিত করেছে”।

 

১৯৫৫ সালে পাকিস্তান সরকার রাণীর কাছে সুপারিশ করে, ‘পাকিস্তানে রাণীর প্রতিনিধি হিসেবে মেজর-জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পরবর্তী গভর্নর-জেনারেল হিসেবে স্যার গোলাম মুহাম্মদের স্থলাভিষিক্ত করা উচিত। ১৯ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় যে, মহামান্য রাণী মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পাকিস্তানের গভর্নর-জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করেছেন যা ৬ অক্টোবর ১৯৫৫ থেকে কার্যকর হবে। মির্জা রাণীর কাছ থেকে রাজকীয় সাইন-ম্যানুয়াল পাঠ করার পর অফিস গ্রহণ করেন।

 

২৩ মার্চ ১৯৫৬ তারিখে একটি প্রজাতন্ত্রী সংবিধান গ্রহণের মাধ্যমে পাকিস্তানে বৃটিশ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়। কমনওয়েলথ অব নেশনস থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তান একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। রাণী নতুন রাষ্ট্রপতি মেজর-জেনারেল মির্জাকে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেন:

 

"আমি আপনার দেশের প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার অগ্রগতি ঘনিষ্ঠ আগ্রহের সাথে অনুসরণ করেছি ... এটা আমার কাছে অত্যন্ত সন্তুষ্টির কারণ যে আপনার দেশটি কমনওয়েলথের মধ্যেই থাকতে চায়। আমি নিশ্চিত যে পাকিস্তান এবং কমনওয়েলথের অন্যান্য দেশগুলি তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা থেকে উন্নতি লাভ করবে এবং উপকৃত হবে”।

 

১৯৬১ এবং ১৯৯৭ সালে কমনওয়েলথ প্রধান হিসেবে রাণী এলিজাবেথ পাকিস্তান সফর করেন। প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অব এডিনবরা রাণীর সফরসঙ্গী ছিলেন।

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম সফর করেন   


সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীন হওয়ার ইস্যুতে ১৯৭২ সালে পাকিস্তান কমনওয়েলথ ত্যাগ করে।

 

১৯৮৯ সালে পাকিস্তান পুনরায় কমনওয়েলথে যোগদান করে। তারপর দুইবার পাকিস্তানের কমনওয়েলথ সদস্যপদ স্থগিত করা হয়: প্রথবার ১৮ অক্টোবর ১৯৯ থেকে ২২ মে ২০০৪ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়্বার ২২ নভেম্বর ২০০৭ থেকে ২২ মে ২০০৮ পর্যন্ত।

 

১৯৫৩ সালের আগে সমস্ত রাজ্য এবং অঞ্চল জুড়ে রাজার উপাধি একই ছিল। ১৯৫২ সালের ডিসেম্বরে লন্ডনে কমনওয়েলথ অর্থনৈতিক সম্মেলনে সব সদস্য একমত হয় যে, পাকিস্তান সহ রাণীর রাজ্যগুলির প্রতিটি রাজ্যের জন্য নিজস্ব রাজকীয় উপাধি গ্রহণ করতে পারে। ২৯ মে ১৯৫৩ তারিখেদ্য গেজেট অব পাকিস্তানে’ সরকারী ঘোষণা অনুসারে পাকিস্তানে রাণীর সরকারী উপাধি ছিলো "দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুক্তরাজ্যের রা্ণী এবং তার অন্যান্য রাজ্য অঞ্চলের, কমনওয়েলথের প্রধান"

 

যেহেতু পাকিস্তান একটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ছিলো তাইঈশ্বরের কৃপা এবং বিশ্বাসের রক্ষক’ শব্দগুলি বাদ দেওয়া হয়েছিলো। "বিশ্বাসের রক্ষক" শিরোনামটি চার্চ অফ ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গভর্নর হিসাবে সার্বভৌমের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে, যিনি এইভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যান্টারবারির আর্চবিশপের চেয়ে উচ্চতর। পাকিস্তান ছিল কমনওয়েলথ অ্ব নেশনস এর একটি রাজ্য, যেটি একই ব্যক্তিকে (রাজা/রাণী) সার্বভৌম এবং রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে মানতে হতো।

 

ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকারের কোনো মন্ত্রী পাকিস্তান সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সার্বভৌমকে পরামর্শ দিতে পারতেন না। পাকিস্তান অধিরাজ্যের সমস্ত বিষয়ে শুধুমাত্র ক্রাউনের পাকিস্তানি মন্ত্রীরা রাজাকে পরামর্শ দিতেন। সমস্ত পাকিস্তানি বিলের জন্য রাজকীয় সম্মতি প্রয়োজন হতো। পাকিস্তানের গভর্নর-জেনারেল ডোমিনিয়নে রাজার প্রতিনিধিত্ব করতেন, যিনি পাকিস্তান সরকারের পরামর্শে রাজা কর্তৃক নিযুক্ত হতেন।

 

পাকিস্তানি রাজা এবং ফেডারেল আইনসভা পাকিস্তানের সংসদ গঠন করতো। পাকিস্তানের সকল নির্বাহী ক্ষমতা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। পাকিস্তানের সমস্ত আইন শুধুমাত্র রাজকীয় সম্মতি প্রদানের মাধ্যমে প্রণীত হতো যা সার্বভৌমের পক্ষে গভর্নর-জেনারেল কর্তৃক করা হতো। গভর্নর-জেনারেল ফেডারেল আইনসভাকে তলব, স্থগিত বিলুপ্ত করার জন্যও দায়িত্বপ্রাপ্ত  ছিলেন। গভর্নর-জেনারেল মন্ত্রী পরিষদ নির্বাচন নিয়োগের ক্ষমতা রাখতেন এবং তার বিবেচনার অধীনে তাদের বরখাস্ত করতে পারতেন। ক্রাউনের সমস্ত পাকিস্তানি মন্ত্রীরা গভর্নর-জেনারেলের সন্তুষ্টি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতেন।

 

বিদেশে প্রেরিত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতদের রাজকীয় অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। প্রতিনিধিরা রাজা কর্তৃক তার ক্ষমতায় স্বীকৃত হতো। প্রতিনিধি নিয়োগের সনদপত্র এবং প্রত্যাহার পত্র রাজা কর্তৃক জারি করা হত।

 

বিচার ব্যবস্থা

কমনওয়েলথ রাজ্যের মধ্যে সার্বভৌম তার সমস্ত প্রজাদের ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য দায়ী এবং  ঐতিহ্যগতভাবে ন্যায়বিচারের উৎস হিসাবে বিবেচিত হতো। পাকিস্তানে ফৌজদারি অপরাধগুলিকে আইনত সার্বভৌমের বিরুদ্ধে অপরাধ বলে গণ্য করা হতো এবং দোষী সাব্যস্ত অপরাধীর বিচার সার্বভৌমের নামে “দ্য ক্রাউন বনাম [নাম]” আকারে আনা হযতো। সাধারণ আইন অনুসারে সার্বভৌম "কোনো অন্যায় করতে পারে না" বলে বিবেচিত হতো। ফৌজদারি অপরাধের জন্য রাজাকে তার নিজের আদালতে বিচার করা যাবে না। পাকিস্তানের গভর্নর-জেনারেলকেও পাকিস্তানের কোনো আদালতে তার বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার বিচার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিলো।

 

রাজার পাকিস্তানি প্রতিনিধি আনুষ্ঠানিকভাবে করাচি শহরের গভর্নর-জেনারেল হাউসে বসবাস করতেন। চারজন গভর্নর-জেনারেল ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সেখানে বসবাস করেন। রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হলে বাসভবনের নাম পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট হাউস রাখা হয়।

 

সকল শপথ অনুষ্ঠান গভর্নর-জেনারেল হাউসের দরবার হলে অনুষ্ঠিত হতো। হলটিতে একটি সিংহাসনও রাখা হতো যা রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের জন্য ১৮৭৬ সালে প্রিন্স অফ ওয়েলস হিসাবে ভারত সফরের সময় তৈরি করা হয়েছিলো। .১৯১১ সালে দিল্লী দরবারের সময় রাণী মেরি এটি ব্যবহার করেছিলেন। জাতীয় দিবসসমূহেগভর্নর হাউসে গার্ড অব অনার দেয়া হতো এবং দলগুলো মার্চ পাস্ট করতো।

 

কমনওয়েলথ রাজ্যের মধ্যে রাজাকে সম্মানের উৎস হিসেবে গণ্য করা হতো। একইভাবে পাকিস্তানের সার্বভৌম হিসেবে রাজা তার নামে পাকিস্তানে পুরষ্কার ও সম্মাননা প্রদান করতেন। তার বেশিরভাগ "হিজ ম্যাজেস্ত্রিজ পাকিস্তান মিনিস্টারস" (বা "হার ম্যাজেস্টিস পাকিস্তান মিনিস্টারস") এর পরামর্শে পুরস্কৃত করা হতো।

 

পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বাহিনীর মাথায় রাজ মুকুটের মনোগ্রাম ব্যবহার করা হতো। এটি পাকিস্তানের নৌযানগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছি্লো যাতে এইচএমপিএস অর্থাৎ ‘হিজ/হার ম্যাজেস্টি'স পাকিস্তান শিপ’ সিম্বল বহন করতো। পাকিস্তান নৌবাহিনী এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনী যথাক্রমে রয়্যাল পাকিস্তান নেভি এবং রয়েল পাকিস্তান এয়ার ফোর্স নামে পরিচিত ছিলো।

 

রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হলে "Royal" সিম্বল বাদ দেওয়া হয়।

 

(সূত্র: ইন্টারনেট)

 




 







Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url