রম্য রচনা - বিষয়ঃ ফেসবুকের মৃত্যু সংবাদ!

 

বিশিষ্ট কেউ মারা যাওয়ার খবর রটলেই কয়েকটা বিষয় মোটামুটিভাবে লক্ষ্য করা যায়ঃ

(১) কে আগে মৃত্যুর খবর দেবেন সেটা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এঁরা ডাইরেক্ট আজরাইলের কাছ থেকে খবর পেয়ে যান ৷ তাই জানানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন ৷ আগে না জানালে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবেন ! সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না !

(২) একটা প্রজাতি খবর ভেরিফাই না করেই লিখে দেন– 'মানতে পারছি না', 'এটা মেনে নেওয়া যায় না', 'কেন এমন হল গোওওও!' ইত্যাদি৷

(৩) একটা শ্রেণি কতটা শোকাহত সেটা বোঝাতে চান ৷ তাঁদের পোস্টগুলো এরকম– 'পায়ের তলার দু'কাঠা মাটি সরে গেল', 'অনাথ হয়ে পড়ল অর্থনীতি', 'বিজ্ঞান আজ সন্তানহারা হল', 'বাংলা ছবির রাজপুত্র ঘুমের দেশে চলে গেলেন ৷ আজ আর ঘুমাতে পারবো না', 'না ফেরার দেশে ফেরার হয়ে গেলেন' ইত্যাদি ৷ এত শোকগ্রস্ত যে তক্ষুনি পোস্ট না নামালে চলবেই না ৷

(৪) কেউ কেউ অন্য লেভেলে চলে যান ৷ তাঁরা পোস্ট দেন না ৷ সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভ, ফটো অ্যালবাম, পেনড্রাইভ, ল্যাপটপের ফোল্ডার ইত্যাদি খুঁড়ে পুরনো ছবি তুলে আনতে লেগে পড়েন ৷ ছবি পাওয়া গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। নইলে ছবি না পাওয়ার কারণে শোকে পাথর হন ৷ ছবি পাওয়া গেলে সাধারণভাবে 'স্যার' সম্বোধন করে ক্যাপশন দেন ৷ এদের মধ্যে কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খোঁজেন। না থাকলেও জোর করে পাতিয়ে নেন ৷ কে ভেরিফাই করতে যাচ্ছে ! তখন ক্যাপশন হয়– 'তেরো বছর আগে জেঠুর সঙ্গে একটি অনুষ্টানে', 'দাদার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায়', 'আজ চলে গেলেন। বড্ড স্নেহ করতেন ৷ আত্মার শান্তি কামনা করি' ইত্যাদি।

(৫) প্রায়ই দেখা যায় মৃত্যুর গুজব ভুয়া ৷ বাড়ির কেউ কনফার্ম করেছেন– 'বান্দা জিন্দা হ্যায়।' এরপরই পোস্ট উধাও হতে শুরু করে ৷ উবে যায় ভার্চুয়াল মৃত্যুদূত হয়ে অর্জন করা ১৮১ টি রিয়্যাকশন ৷ যার মধ্যে ১৭৫ টি স্যাড। সেও এক ব্যক্তিগত দুঃখের ব্যাপার।

৬। একশ্রেণির মিডিয়া......। না থাক, আর লেখার দরকার নেই। আপনারা ভালোভাবেই জানেন।

লিখেছেনঃ বিপ্লব কুমার দে
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url