বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ (পর্ব-৯) - বাংলাদেশ
শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা |
শেখ হাসিনাঃ (জন্ম: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭) বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় প্রধান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়
দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকেরও বেশি
সময়ব্যাপী বিস্তৃত। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ ও ১৯৯১-১৯৯৫ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা এবং ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮১ সাল
থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব
পালন করছেন। ২০০৮ সালে জনগণের বিপুল
ভোটে জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে
ফিরে আসেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দেশের
নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন। নির্বাচনটি প্রধান বিরোধীদল কর্তৃক
বর্জিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের
ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী
হন।
শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী
ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। ফোর্বস সাময়িকীর
দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০২০ সালে তার অবস্থান ছিল ৩৯তম, ২০১৯
সালে ২৯তম, ২০১৮ সালে ২৬তম এবং ২০১৭ সালে ৩০তম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক
ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায়
শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদ-এর একজন সদস্য, যা বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের
একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।
প্রারম্ভিক জীবন
শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের
টুঙ্গিপাড়ায় (বর্তমান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া) জন্মগ্রহণ
করেন। তার পিতা ছিলেন বাঙালী জাতিয়তাবাদী নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা বেগম ফাজিলাতুন্নেসা। তিনি
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। তার পরিবারের পিতৃ ও মাতৃ উভয় দিকেই ইরাকি আরব বংশ রয়েছে। তার
বংশ ছিল বাগদাদের মুসলিম প্রচারক শেখ আউয়াল দরবেশের সরাসরি বংশধর, যিনি মুঘল যুগের
শেষভাগে বাংলায় আসেন।
শেখ হাসিনার বাল্যকাল কাটে টুঙ্গিপাড়াতেই।
১৯৫৪ সাল থেকে তিনি পরিবারের সাথে ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনের ভাড়া বাড়িতে বসবাস
শুরু করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন
যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে এবং তার বাবা মন্ত্রী হন। পরে ৩, মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে
স্থানান্তরিত হন। ১৯৬০ এর দশকে তার পরিবার ধানমন্ডির ৩২ নং রোডে তার বাবার তৈরি
একটি বাড়িতে চলে আসেন।
১৯৫০-এর দশকে তার বাবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে
চাকরি করতেন। অনেক সাক্ষাৎকার এবং বকতৃতায় তিনি তার বেড়ে ওঠার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা যখন বড় হই তখন বাবাকে পাকিস্তান সরকার
রাজনৈতিক বন্দী করে রেখেছিলো’। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘ ১৯৫৪ সালে ৩ নম্বর
মিন্টো রোডে থাকতাম। একদিন আমার মা আমাদের বললেন, বাবাকে গতরাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তারপর আমরা তাকে কারাগারে দেখতে যেতাম। আমরা সব সময় লক্ষ্য করতা্ম, তাকে প্রায়শই
জেলে রাখা হত। কারণ তিনি জনগণকে ভালোবাসতেন।
শিক্ষাজীবন
শেখ হাসিনা প্রথমে তার গ্রা্মের বিদ্যালয় টুঙ্গিপাড়া
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তার পরিবার ঢাকায় চলে এলে ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির
বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে তিনি আজিমপুর গার্লস স্কুলে ভর্তি হন
এবং ওই স্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিক
পাশ করেন।
এরপর তিনি ইডেন কলেজে ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৬- ১৯৬৭ সময়কালে ইডেন কলেজের ছাত্র
ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি রোকেয়া হলে থাকতেন, যেটি ১৯৩৮ সালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা ছাত্রাবাস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। পরে নারীবাদী বেগম রোকেয়ার
নামে হলটির নামকরণ করা হয়। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং রোকেয়া
হলের মহিলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বৈবাহিক জীবন
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা
১৯৬৭ সালে এম
এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ
হন। ওয়াজেদ মিয়া ইংল্যান্ডের
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট সহ একজন বাঙালি পরমাণু বিজ্ঞানী
ছিলেন। ৯ মে ২০০৯ তারিখে এম, এ, ওয়াজেদ
মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। তাদের সংসারে সজীব
ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) নামে দুই সন্তান রয়েছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালিন অবস্থান
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ
রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গ্রেপ্তারের সময় তিনি ধানমণ্ডি
৩২ নম্বর রোডের বাসায় পিতার পাশেই ছিলেন। শেখ মুজিবের গ্রেপ্তারের পর তিনি মায়ের
সঙ্গে ভাই-বোনদের নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। তার ছোট দুইভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল মুক্তিযুদ্ধে
যোগদান করেন।
পারিবারকে হত্যা, নির্বাসন
ও প্রত্যাবর্তন
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশী চক্রান্তকারিদের দ্বারা সংঘটিত এক অভ্যুত্থানে
শেখ হাসিনার স্বামী, সন্তান এবং বোন শেখ রেহানা ছাড়া তার পুরো পরিবারকে হত্যা করা
হয়। সদ্য স্বাধীন দেশের জাতির জনককে স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করায় জাতি
স্তম্ভিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরে। হত্যার সময় হাসিনা বোন রেহানা সহ তার স্বামীর
সাথে ইউরোপে অবস্থান করছিলেন। তারা পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে
আশ্রয় নেন। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের
প্রস্তাব পেয়ে ভারতে চলে আসেন। তার পরিবারের জীবিত সদস্যরা ছয় বছর ভারতের নয়াদিল্লীতে
নির্বাসন জীবনযাপন করেন। জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রবেশে
বাধা দেয়। নির্বাসনে থাকা অবস্থায় ১৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৮১ সালে আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত
হলে ১৭ মে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।
রাজনৈতিক জীবন
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের (সাবেক ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে) ছাত্রী থাকা
অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ
ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী
লীগের সভানেত্রী
আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে শেখ
হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে
অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে এলে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সমর্থক
তথা স্বাধীনতার স্বপক্ষের জনগণ তাকে স্বাগত জানায়।
বিরোধীদলীয়
নেত্রী (১৯৮৬-১৯৮৭)
এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তার দল অংশগ্রহণ করে এবং
শেখ হাসিনা সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হন। কিন্তু নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ায়
আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। ১৯৮৮ সালে তার অবৈধ ক্ষমতা দখল ও কর্মকান্ডের বৈধতা দিতে
সংবিধান সংশোধনের একক ক্ষমতা অর্জনের লক্ষে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রহসনের নির্বাচন
দিলে তাতে শেখ হাসিনার দল অংশগ্রহণ না করে পরবর্তিতে এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন
গড়ে তোলেন। ১৯৯০ সালে বিভিন্ন দল ও জোটের সাথে অভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ
সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
১৯৯১-এর
নির্বাচন
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮ টি সংসদীয় আসন লাভ করে এবং প্রধান বিরোধী
দল হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে। মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০.১ % লাভ করে , যা সরকার
গঠন কারী দল থেকে মাত্র ০.৭% কম। নির্বাচনে শেখ হাসিনা “সূক্ষ কারচুপির” অভিযোগ
তোলেন।
১৯৯১-১৯৯৬
১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের তৎকালীন বৃহত্তম
বিরোধীদল হিসেবে প্রকাশ পায়। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে বাংলাদেশের
সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে
তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী
হিসেবে প্রথম মেয়াদকাল (১৯৯৬-২০০১)
১৯৯৬ সালে তার দল আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের দাবিতে বামপন্থী দলগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে
বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে
বাধ্য করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তার দল আন্দোলনে জয়ী হয়। পরবর্তীতে তার
দল জাতীয় নির্বাচনেও জয়লাভ করে। ঐ বছর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে
তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব
পালন করেন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বড় ব্যবধানে হেরে
যায়।
বিরোধীদলীয়
সময়কাল (২০০১-২০০৮)
বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে
ইসলামী, জাতীয় পার্টি (নাজিউর রহমান মঞ্জু)
ও ইসলামী ঐক্যজোট এর নির্বাচনী জোটের
কাছে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। নির্বাচনে “নিরব
কারচুপির” অভিযোগ তোলেন শেখ হাসিনা। দলের এই পরাজয়ের জন্য তারই মনোনীত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ (সাবেক প্রধান বিচারপতি) এবং
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর
রহমান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদকে দায়ী করেন তিনি।
আন্দোলন সংগ্রাম
আওয়ামী লীগ ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহণকে অবৈধ ঘোষণা করে। তার শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং
সামরিক শাসকের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে তার
দল ১৯৮৬ সালে সামরিক শাসকের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। অবশ্য ১৯৮৬-এর সংসদ
ভেঙ্গে দিয়ে ১৯৮৮ সালে নতুন নির্বাচন দিলে তাতে আওয়ামীলীগ অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে
এবং এরশাদের পতনের লক্ষে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬
ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় এক জনসভায় বক্তৃতাদানকালে গ্রেনেড হামলায়
তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। উক্ত হামলায় তার ঘনিষ্ঠজন এবং আওয়ামী লীগ
নেত্রী আইভি রহমান সহ ২৪ জন মৃত্যুবরণ করেন
ও শতাধিক আহত হন। বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এই হামলাকে বিদেশি
ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়। এই গ্রেনেড হামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত
করার জন্য 'জজ মিয়া' নাটক সহ বেশকিছু প্রহসন সৃষ্টি করেছিল তৎকালীন চারদলীয়
ঐক্যজোট সরকার। পরবর্তীতে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসে
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, তৎকালীন
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর,
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ
পিন্টু, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পাকিস্তান ভিত্তিক
জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (বর্তমানে বিলুপ্ত)
নেতা মুফতি হান্নান সহ বেশকিছু তৎকালীন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম।
পরবর্তীতে জনবিরোধী কার্যকলাপের কারণে ২০০৬ সালে তিনি চারদলীয় জোট
সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন।
তত্বাবধায়ক সরকার,
সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও গ্রাফতার (অক্টবর ২০০৬-২০০৮):
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন ২০০৭
সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সকাল ৭:৩১-এ যৌথবাহিনী শেখ
হাসিনাকে তার বাসভবন "সুধা সদন" থেকে গ্রেফতার করে। তাকে আদালতে সোপর্দ
করা হয়। সেখানে আদালত তার জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের
ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করে শেখ হাসিনাকে সেখানে অন্তরীণ
রাখা হয়। গ্রেফতারের পূর্বে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা জিল্লুর
রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। একটি ‘২০০৬
সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে রাজনৈতিক সংঘর্ষের জন্য হত্যা মামলা’ এবং অন্যটি হল ‘প্রায়
তিন কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলা। এর মাঝে চাঁদাবাজির
মামলার বাদী ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলাটি তুলে নেন এবং বলেন, নানবিধ চাপে
তিনি এই মামলা দায়ের করেছিলেন। জেল থেকে মুক্তিলাভের পরে তিনি চিকিৎসার্থে কয়েক মাস
বিদেশে অবস্থান করেন। এরপর দেশে ফিরে দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদকাল (২০০৯-২০১৪)
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় তিন-চতুর্থাংশ
আসনে জয়লাভ করে। বিজয়ী দলের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি ৬ জানুয়ারি ২০০৯-এ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার দল আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে
২৬০টি আসন লাভ করে। অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পায় মাত্র ৩২টি আসন।
তৃতীয় মেয়াদকাল (২০১৪-২০১৯)
ইতোপূর্বে সপ্তম, অষ্টম এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয়
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের
পূর্বে গঠিত তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাগণের সাথে চারদলীয় জোট সরকার মনোনীত
রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিন আহমেদের সাথে বনিবনা না হওয়ায় উপদেষ্টা পরিষদ পদত্যাগ করলে ড.ফখরুদ্দীন
আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু
ফখরুদ্দিন সরকার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতা ধরে রা্খে এবং
রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমনের নামে মামলা ও নির্যাতন করা হয়।
পরবর্তিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক তত্বাধায়ক ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষিত হয়। পরবর্তীতে
নবম সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশের মাধ্যমে
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বদলীয়
সরকা্র গঠিত হয়। ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ সালে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নবম জাতীয়
সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই নির্বাচন বর্জন করে। শেখ হাসিনার
নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে
৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায়
নির্বাচনটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ৫ই জানুয়ারি রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল
৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাকী ১৪৭টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে
বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা ৩য় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
চতুর্থ মেয়াদকাল
(২০১৯-বর্তমান)
আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টি সংসদীয় আসনে জয়লাভ
করলে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত নির্বাচনে জয়ী হন। এটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার
একাধারে তৃতীয় মেয়াদকাল।
বিরোধীদলীয় প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন নির্বাচনকে
"প্রহসনমূলক" বলে ঘোষণা করেন এবং ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। নির্বাচনের
পূর্বে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অন্যান্য অধিকার সংগঠন সরকারকে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে
আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ সম্পাদকীয় নির্বাচনকে প্রহসনমূলক বলে বর্ণনা করে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, “পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ভোট কারচুপি ছাড়াই হয়তো হাসিনা
জিতে যেতেন। তবে কেন তিনি এমন করলেন”?
ভিত্তিহীন সমালোচনা
তথাকথিত
‘পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি’ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত
একটি ঘটনা, যাতে কানাডীয় কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ‘এসএনসি-লাভালিনকে’ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার
বিনিময়ে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগটি পরবর্তীকালে ভুল ও
ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয় এবং কানাডার আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়।
অভিযোগের ফলে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির
বিষয়টি উল্লেখ করে ৬.১৫ কিলোমিটার লম্বা বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর রেলপথ ও
মহাসড়ক বিশিষ্ট পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প হতে নিজেদের $১.২ বিলিয়ন ডলার
সমমূল্যের অর্থায়ন পরিকল্পনা বাতিল করে। মামলা খারিজ হওয়ার তিন মাস পর শেখ
হাসিনা যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে (সদ্য প্রয়াত) পদ থেকে অপসারণ করেন।
২০১২ সালের ১১ জুলাই বিনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামীলীগ সরকারের উচিৎ বিশ্বব্যাংকের পাঠানো
চিঠিটি প্রকাশ করা। চিঠিতে বিশ্বব্যাংক শেখ হাসিনা এবং অন্য তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে
ঘুষের অভিযোগ এনেছিলো যা সর্বৈব মিথ্যা। ২০১৬ সালের ১৭ই জানুয়ারি শেখ হাসিনা
দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাঙ্কের একজন এমডি (ড. ইউনুস) বিশ্বব্যাংককে ঋণ
বাতিল করার জন্য উসকানি দিয়েছে।
২০১৭ সালের ২৪শে জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দেয়া
তার বক্তব্যে প্রকল্প থেকে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তা তুলে নেওয়ার জন্য সরাসরি ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে দায়ী করেন। তার মতে ইউনুস বিশ্বব্যাংককে লোন
বাতিল করতে প্ররোচিত করার জন্য যুক্ত্রাষ্ট্রের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি
ক্লিনটন-এর সঙ্গে তদবির করেছিলেন। ২০১৭ সালের ১০ই
ফেব্রুয়ারি কানাডার অন্টারিওতে সুপিরিয়র কোর্টের বিচারপতি কোনো প্রকার প্রমাণের
অভাবে ঘুষ-ষড়যন্ত্রের এই মামলাটি খারিজ করে দেয়।
২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বাংলাদেশ
সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটবর্তী উচ্চপদস্থ নেতাদের বিতর্কিত
কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার শিরোনাম ছিলো "ওরা
প্রধানমন্ত্রীর লোক"। তবে ২রা
ফেব্রুয়ারি ‘আইএসপিআর’ এর একটি
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদনকে ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন বলে নিন্দা জানানো হয়।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) ২০২১ সালের ‘প্রেস ফ্রিডম
প্রিডেটর্স’ বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় কঠোর হস্তক্ষেপ করা ৩৭ জন রাষ্ট্র বা সরকার
প্রধানের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে।
অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ
শেখ হাসিনার সরকারের সময়কালে দেশের অভুতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
উন্ননয়নের মাপকাঠিতে বাংলাদেশ বহিঃবিশ্বের কাছে এক বিস্ময়রূপে আবির্ভূত হয়েছে।
উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে গেলে এই লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে, তাই অল্প কয়েকটি খাতের শুধু
তালিকা নিচে দেয়া হলোঃ
১। নিজস্ব অর্থায়নে ৬-১৫
কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখি সেতু নির্মাণ
২। বিদ্যুৎ ুৎপাদনে ব্যাপক
সাফল্য
৩। জঙ্গি দমন
৪। মেট্রোরেল
৫। উড়াল সেতু
৬। বিমান বন্দর বিশ্বমানের
পর্যায়ে উন্নয়ন
৭। গ্রামের প্রধান প্রধান
রাস্তা পাকাকরণ সহ বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন ও নতুন রাস্তা নির্মাণ
৮। গৃহহীনদের জন্য বাড়ি
নির্মাণ
৯। নারীর ক্ষমতায়ন
১০। বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালিন
ভাতা ও বিভিন্ন প্রকার ভাতা
১১। রেল খাতের উন্নয়ন
১২। চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর নিচে টানেল নির্মাণ
২০০৯ সালে ক্ষমতা
গ্রহণের পর কয়েকটি খাতে উন্নয়নের সূচক (২০১৯ সাল পর্যন্ত):
ক্ষমতাধর
নারী
বিশ্ব পর্যায়ে
শেখ হাসিনা ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের
তালিকায় ৭ম স্থানে ছিলেন। তার পূর্বে এবং পশ্চাতে ছিলেন যথাক্রমে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যালেন জনসন সার্লেফ এবং আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জোহানা সিগুরদারদোত্তির। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর
নারী নেতৃত্বের ১২ জনের নাম নির্বাচিত করে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর
অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে ছিলেন। ঐ
সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা
মার্কেলের ঠিক পিছনে ছিলেন এবং ব্যাপক
প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করেছিলেন।২০১৫ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের
তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৯তম স্থানে আছেন। ২০১৪ সালে এই তালিকায় শেখ
হাসিনার অবস্থান ছিল ৪৭তম।
এশীয়
পর্যায়ে
২০১০ সালের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ
উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএন ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। উক্ত
তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা।
সৃষ্টিকর্ম
গ্রন্থ
রাজনীতির বাইরে লেখক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। এ পর্যন্ত
তিনি প্রায় ৩০টি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো;
·
শেখ
মুজিব আমার পিতা
·
সামরিক বনাম গণতন্ত্র
·
ওরা
টোকাই কেন
·
বিপন্ন গণতন্ত্র
·
সাদা কালো
·
বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম
·
অসমাপ্ত
আত্মজীবনী (গ্রন্থে
রূপান্তর)
·
People and Democracy
·
The Quest for Vision 2021
·
আমার
ছোট রাসেল সোনা
জনপ্রিয় সাংস্কৃতিতে
চলচ্চিত্র
· ২০১৮ সালে পিপলু খানের পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ
অ্যান্ড ইনফরমেশনের সহায়তায় নির্মিত “হাসিনা: এ ডটার'স টেল” নামক
তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার জীবনীর বিভিন্ন দিক সরাসরি তুলে ধরা হয়।
·
২০২১ সালের আল জাজিরার “ওরা প্রধানমন্ত্রীর
লোক”- প্রামান্যচিত্রে শেখ হাসিনাকে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল
আজিজ আহমেদ এর দন্ডপ্রাপ্ত ভাইদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে
চিত্রায়িত করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায় জেনারেল আজিজ আহমেদের দন্ডপ্রাপ্ত ভাইদের মধ্যে
একজন যিনি হারিস নামে পরিচিত তিনি প্রধানমন্ত্রীর থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পাবার কথা বলছেন।
সম্মাননা
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়
এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের
অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়,
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক
বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি
অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া ফ্রান্সের
ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান করে।
(১) ইউএন উইমেন থেকে
"প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন"।
(২) গ্লোবাল পার্টনারশীপ
ফোরাম থেকে “এজেন্ট অব চেঞ্জ” পুরস্কার।
(৩)
ফোর্বস'-এ প্রথম ১০০ সর্বোচ্চ
ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ৫৯ তম স্থান অর্জন।
(৪) ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭
সালে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “ডক্টর অব ল” ডিগ্রি
প্রদান।
(৫) ৪ জুলাই ১৯৯৭ সালে
জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “ডক্টর অব ল” সম্মাননা।
(৬) অ্যবার্টয় বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে ২৫ অক্টোবর ১৯৯৭ সালে “ডক্টর অব ফিলোসফি” সম্মাননা।
(৭) ইউনেসকো থেকে ১৯৯৮
সালে ‘‘হুপে-বোয়ানি’’ শান্তি পুরস্কার।
(৮) সর্বভারতীয়
শান্তিসংঘ থেকে ১৯৯৮ সালে “মাদার তেরেসা” পুরস্কার।
(৯) মহাত্মা গান্ধী
ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৯৯৮ সালে “এম কে গান্ধী” পুরস্কার
গ্রহণ।
(১০) আন্তর্জাতিক লায়ন্স
ক্লাব কর্তৃক ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে ‘‘Medal of Distinction” পদক ও ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে “Head
of State” পদক লাভ।
(১১) ২৪ জানুয়ারি ১৯৯৯
সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “ডেসিকোটাম” (ডক্টর অব
লিটারেচার, হনোরিস কাউজা) লাভ।
(১২) ১৯৯৯ সালে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা থেকে “চেরেস” পদক লাভ।
(১৩) ২০ অক্টোবর ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক “ডক্টর অফ ল” ডিগ্রি লাভ।
(১৪) ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৯
সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক “ডক্টর অফ ল” ডিগ্রি লাভ।
(১৫) ৫ সেপ্টেম্বর ২০০০
সালে ব্রিজপয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক “ডক্টর অফ হিউম্যান” লেটার লাভ।
(১৬) ৯ এপ্রিল ২০০০ সালে
রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ কর্তৃক “পার্ল এস. বাক” পুরস্কার।
(১৭) রোটারি ফাউন্ডেশন
কর্তৃক “পল হ্যারিস ফেলো”।
(১৮) ২০০৯ সালে “ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার”।
(১৯) ৩০ ডিসেম্বর, ২০১১
সালে বাংলা ভাষার ধারক ও বাহক হিসেবে বাংলা একাডেমি তাদের
বার্ষিক সাধারণ সভায় সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।
(২০) ১২ জানুয়ারি ২০১২
সালেদক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে “ডক্টর অব লিটারেচার” বা ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান
করে।
(২১) নারী ও কন্যাশিশুদের
শিক্ষা প্রসারের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৪ সালে ইউনেস্কো “শান্তিবৃক্ষ” পুরস্কার।
(২২) জলবায়ু পরিবর্তন
মোকাবেলায় নেতৃত্বের জন্য ইউএন পরিবেশ পুরস্কার “চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ” লাভ।
(২৩) ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা
জয়ের জন্য তিনি “সাউথ সাউথ” পুরস্কার লাভ করেন।
(২৪) ১৬ নভেম্বর ২০১৫
সালে শেরেবাংলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “ডক্টর অব দ্য ইউনিভার্সিটি” ডিগ্রি।
(২৫) ২৬ মে ২০১৮ সালে
পশ্চিমবঙ্গের কবি কাজী
নজরুল বিশ্ববইদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক
“ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট)” ডিগ্রি।
(২৬) ২৭ এপ্রিল ২০১৮ সালে
বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য গ্লোবাল
উইমেনস লিডারশিপ এওয়ার্ড লাভ করেন।
(২৭) রোহিঙ্গা ইস্যুতে
দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার
জন্য “আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট এওয়ার্ড” এবং “২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন
এওয়ার্ড ফর লিডারশীপ” গ্রহণ করেন।
(২৮) বিশ্বের অন্যতম
শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক,
জুরিখ ও হংকং ভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে দুটি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে।
(২৯) মার্চ ২০১৯ সালে
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ”লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন
এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড” -এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন।
(৩০) “ভ্যাকসিন হিরো”
–টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স
ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)।
(৩১) “এসডিজি অগ্রগতি
পুরস্কার”-জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ২১
সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে তাকে এই পুরস্কারে প্রদান করেন।
স্থাপনা
বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম শেখ হাসিনার নামে
নামকরণ করা হয়েছে; যার প্রায় সবই শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের
আমলে করা।
(সূত্রঃ ইন্টারনেট)