মন কড়চা
এক টিনএজারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'এতো যে হিন্দি সিনেমা দেখো, হিন্দি ভাষা বোঝো? বললো, 'বুঝিনা, তবে 'দিল' বুঝি, 'পেয়ার' বুঝি',। মনে মনে বললাম, 'তোমাদের এই বয়সে এইটুকু বুঝলেই চলে'।
কবিতার গূঢ় তত্ব বুঝি কম, তাই ও নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্তু কবিদের খুব ভালবাসি। তবে ওইযে, 'দিল বুঝি, পেয়ার বুঝি'র মতো কবি নির্মলেন্দু গুণ দাদার "স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো" কিংবা "আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি" -এ কবিতাগুলো বুঝতে বেশি জ্ঞানী হতে হয়না। যারা এ কবিতাগুলি না বোঝার ভান করেন, তারা নিঃসন্দেহে 'পাক পাঞ্জাতন মানিক রতন'! উপরেরটাও খান, তলেরটাও খান। মুক্তি মুক্তি 'জিকর' করেন, অন্তরে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' লালন করেন।
তো ১৯৯১-৯৬ এ বিএনপি সরকারের আমলে ম্যাডামজীর বিশেষ দূত(পরবর্তিতে পৌণে ৪ দলীয় সরকারের বিদেশ মন্ত্রী) এম মোরশেদ খান(হেয় কি দ্যাশত আছে নি, না পলান্টি? তয় নিজের বুঝ ভালোই বোঝে) সাহেবের কোম্পানী সিটিসেল দেশে প্রথম সিডিএমএ পদ্দতির 'হাম্বল দিস্তা' মার্কা সেল ফোন চালু করে লোকজনের পকেট কাটতে শুরু করে। 'তবে গরীবের পকেটে ঢুকতেয়ারেনাই'। কারণ একখান 'হাম্বল দিস্তার' সর্বনিম্ন দাম ছিলো ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। ১টা সেটে একটা নম্বরই বরাদ্ধ থাকতো। কোনো সমস্যা হলে সেট সহ পাল্টাতে হতো। ১ মিনিট কথার ভাড়াও নিতো ৬ টাকা ৯০ পয়সা।
১৯৯৬ সালে জনগণের সরকার এসে দেশে জিএসএম পদ্ধতির মোবাইল চালু করে এবং কয়েকটি কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়। দামও কমতে থাকে, সেটও আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে। এমন এক সময় এসে যায়, কে কতো ছোট সেট ব্যবহার করতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। হাতের মূঠোয় লুকিয়ে রাখা যায় মোবাইল সেটের আকার এমন অবস্থায় চলে আসে। কবি'দা তার নাম দিলেন, "মুঠোফোন"। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে গেলো তার নামকরণ। এখনও ওই নামেই চলছে। কিন্তু মুঠোফোন এখন তো আর মুঠোয় নেই, জায়গা নিয়েছে পাঞ্জায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বগলে। এর কোনো নতুন নাম দেবেন কিনা কবি'দাই ভালো জানেন।
Ratan Majumder দাদার স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানতে পারলাম, কবি'দা ফেসবুকের নাম দিয়েছেন "বদন বই"। আবার "মুখপঞ্জি"ও বলেন। কোন নামটা শ্রুতিমধুর বা যোগ্য হবে এখনও বোধহয় স্থির করতে পারেননি।
পারবেন কি করে? Mark Jukerberg তার চিন্তা থেকে একটি সুন্দর নামই দিয়েছিলেন এই মাধ্যমের। কিন্তু অল্প বয়সী জুকারবারগ কি জানতো, এই মাধ্যমে সবার সুন্দর বদন প্রদর্শন করবে আর বদন নামক অভিধান থেকে মনের মিষ্টি কথাই বেরোবে,- কোনো দাও-কাচি, খুন্তা-কূড়াল প্রদর্শন করবে না, বা গালাগালি করবে না?
-অবশ্য গালাগালিও তো মনের কথাই! এবং মনের খায়েশ মিটিয়ে গালাগালি চর্চার এটাই এখন উপযুক্ত ও মোক্ষম মাধ্যম।
(০৪ অক্টোবর ২০১৫ এর লেখা)