বিশ্বের মুসলিম নারী নেতৃবৃন্দ (পর্ব-৩)-আজারবাইজান

 

 তাহিরা আকবর তাহিরোভা

তাহিরা আকবর তাহিরোভা

তাহিরা আকবর তাহিরোভা: (৭ নভেম্বর ১৯১৩ – ২৬ অক্টোবর, ১৯৯১) ছিলেন একজন সোভিয়েত রাজনীতিবিদ এবং কুটনীতিক। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আজারবাইজান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

তাহিরোভা ১৯১৩ সালের ৭ নভেম্বর বায়রাম-আলী (বর্তমানে তুর্কমেনিস্তান)তে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৫ সালে আজারবাইজান স্টেট অয়েল অ্যাকাডেমি (যা পরে আজারবাইজান ইন্ডাস্ট্রি ইনস্টিটিউট হয়) থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনিই প্রথম আজারবাইজানের পেশাজীবী মহিলা, যিনি তেল শিল্প সম্পর্কিত উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি আজারবাইজান বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৪২ সাল থেকে তিনি আজারবাইজান কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধরত সোভিয়েত সেনাবাহিনীকে সময়মত তেল সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ১৯৪৯ সালে আজারবাইজান তেল একাডেমিতে তেল অনুসন্ধান ও উন্নয়ন বিষয়ক কোর্স করেন তিনি। তাহিরোভা ১৯৫৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি তুর্কি, ইংরেজী এবংরাশিয়ান ভাষায় দক্ষ ছিলেন।

 

১৯৫৪ সাল থেকে তাহিরোভা আজারবাইজান কাউন্সিল অব ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে বিভিন্ন উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তিনি আজারবাইজান এসএসআর-এর পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে তিনি ১৯৫৯ সালের আগে কাজ শুরু করেননি। তৎকালীন সোভিয়েত আইন অনুযায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয় ছাড়াও অন্যান্য সরকারী দায়িত্বে থাকতেন।

 

তাহিরোভা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের  অধিবেশনে সোভিয়েত কূটনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও ১৯৮০-১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধে সোভিয়েত শান্তি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।

 

১৯৭৬ সালে তাহিরোভাকে ইউএসএসআর-এর বিদেশি কার্যালয়ের পাশাপাশি লেবার অফ রেড ব্যানার অফ অর্ডার, অর্ডার অফ লেনিন, অর্ডার অফ দ্যা ব্যাজ অফ অনার এ বিশেষ অবদান রাখার জন্য অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ অফ পিপলস প্রদান করা হয়।

 

তাহিরোভা ২৬ অক্টোবর, ১৯৯১ সালে মারা যান। তাকে আজারবাইজানের ‘এভিনিউ অফ দ্যা অনার্ড সেমেট্রিতে’ সমাহিত করা হয়।


 

 এলমিরা মিকাইল গাফারোভা

এলমিরা মিকাইল গাফারোভা


এলমিরা মিকাইল গাফারোভা (এলমিরা কাফারোভা):  (১ মার্চ ১৯৩৪ - ১ আগস্ট ১৯৯৩) ছিলেন একজন কূটনীতিক।

 

গাফারোভা ১৯৩৪ সালের ১ মার্চ আজারবাইজানের বাকুতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি তার মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং ১৯৫৩ সালে আজারবাইজান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে তিনি ফিললজিতে ডিগ্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তার স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন চালিয়ে যান। তিনি ফিললজিতে পিএইচডি অর্জন করেন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন গাফারোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমসোমল কমিটির ডেপুটি ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি আজারবাইজান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে তিনি আজারবাইজানীয় কমসোমলের অর্গানাইজেশন কমিটি সেন্টারের চেয়ারওম্যান নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সংস্থার প্রথম সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

১৯৭০-১৯৭১ সালে গাফারোভা আজারবাইজান কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক হিসাবে কাজ করেন এবং ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি বাকুর পার্টি কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন।

 

গাফারোভা ১৯৮০ সালে আজারবাইজান এসএসআর-এর শিক্ষামন্ত্রীর পদে নিযুক্ত হন। উক্ত পদে তিনি ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৮৩-১৯৮৭ সালে গাফারোভা আজারবাইজান এসএসআর-এর পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বৈদেশিক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালিন তিনি ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের বিষয়ক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।  

             

গাফারোভা আজারবাইজানের সুপ্রিম সোভিয়েতেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি আজারবাইজান এসএসআর-এর সুপ্রিম সোভিয়েতের স্পিকার ছিলেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সুপ্রিম সোভিয়েতের ডেপুটি নির্বাচিত হন। ১৯৮৭-১৯৮৯ সালে তিনি আজারবাইজান এসএসআর-এর উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

 

পার্লামেন্টের স্পিকার থাকাকালিন গাফারোভা ৩০ ডিসেম্বর ১৯৮৯ তারিখে গাঞ্জার ঐতিহাসিক নাম পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ১৩ মার্চ ১৯৯০ তারিখে সারা আজারবাইজান জুড়ে নওরোজ ছুটির দিনটিকে একটি সরকারি ছুটিতে পরিণত করেন। তিনি একটি আইন পাস করার কৃতিত্বও পান। ১৮ অক্টোবর ১৯৯১ তারিখে আজারবাইজানের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার, ২ মার্চ ১৯৯২ তারিখে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্তি করা ইত্যাদি বিষয়ে তার ভূমিকা আছে।

 

গাফারোভা প্রথম নেতাদের মধ্যে যিনি ২১-২২ জানুয়ারী ১৯৯০ তারিখে আজারবাইজানীয় সুপ্রিম সোভিয়েতের অসাধারণ অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন এবং ১৯-২০ জানুয়ারী ১৯৯০ তারিখে বাকুতে বেসামরিক গণহত্যার জন্য সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের নিন্দা করেছিলেন। ১৬০ জন ডেপুটিদের অধিবেশন গণহত্যার নিন্দার বিবৃতি জারি করেছিলো। বিবৃতিতে জেনেভা এবং ভিয়েনা কনভেনশনকে উপেক্ষা করে বেসামরিকদের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম সোভিয়েত অব ইউএসএসআর, সুপ্রিম সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রজাতন্ত্র, বিশ্বের সমস্ত পার্লামেন্ট এবং জাতিসংঘের কাছে আবেদন করা হয়। ফলস্বরূপ, আজারবাইজানীয় জেনারেল প্রসিকিউটর অফিস ৯৪ অনুচ্ছেদের অনুচ্ছেদ ৪ এবং ৬ (উত্তেজক পরিস্থিতিতে পূর্বপরিকল্পিত হত্যা), ১৪৯ (ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পত্তি ধ্বংস বা ক্ষতি করা), ১৬৮ (ক্ষমতার অপব্যবহার) এবং ২২৫ (কর্তৃত্বের অপব্যবহার) এর উপর একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করে। ফৌজদারি কোড তখনও কার্যকর ছি্লো। তদন্তটি এখনও চলমান, বন্ধ করা হয়নি।

 

গাফারোভা ইউএসএসআর-এর বিভিন্ন আদেশ এবং পদকে ভূষিত হয়েছেন। তিনি তার কর্মজীবনে অর্ডার অফ দ্য রেড ব্যানার অফ লেবার এবং অর্ডার অফ অনারে ভূষিত হয়েছেন।

 

এলমিরা মিকাইল গাফারোভা ১ আগস্ট ১৯৯৩-এ আজারবাইজানের বাকুতে মারা যান। তাকে সম্মানের গলিতে সমাহিত করা হয়।

 

(সূত্রঃ ইন্টারনেট)



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url