কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুরবাসীর জন্য সুখবর
পদ্মা সেতু নির্মাণ
হওয়াতে রেল যোগযোগেও এক বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। রাজশহী, খুলনা থেকে সরাসরি ট্রেন আসবে
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা। যদিও বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের সাথে
সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কিন্তু যমুনা সেতুর রেল লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায়
তা পূর্ণতা পায়নি।
যমুনা সেতুতে রেল লাইন
নির্মাণকালিন পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঝখানে রেল লাইন এবং দুইপাশে সড়কপথ নির্মাণের কথা
থাকলেও নির্মাণের সময় বিএনপি সরকার রেল লাইনের পরিকল্পনা বাদ দেয়। পরবর্তীতে
দায়সারাভাবে একপাশ দিয়ে রেল লাইন স্থাপনের ব্যবস্থা করে যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
৪-৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে একটা ট্রেনের প্রায় আধাঘণ্টা সময় লাগে। পদ্মা
সেতুতে তা হবে না। সমতলের সমগতিতেই সেতু পার হবে ট্রেন।
১৯৭০ সালে
স্বাধীনতাপূর্ব সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে
ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দলের নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে যমুনা
সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন।
স্বাধীনতার পর আওয়ামী
লীগ সরকার ১৯৭২ সালে যমুনা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় এবং ১৯৭২-৭৩
সালের বাজেটে এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়।
বাংলাদেশ সরকারের
আমন্ত্রণে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা 'জাইকা' ১৯৭৩ সালে যমুনা নদীর উপর
একটি সড়ক-কাম-রেলসেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা হাতে নেয়। ১৯৭৬ সালে জাপান
তাদের সমীক্ষা শেষ করে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকণ্ডের পরে তখন দেশ এক ক্রান্তিকাল
অতিক্রম করছিলো। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না, এই অজুহাতে স্থগিত হয়ে যায়
প্রকল্পের কাজ।
১৯৮২ সালে এরশাদ সরকার
যমুনা সেতু প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করে এবং
এই প্রকল্প
বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮৫ সালের ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশবলে যমুনা বহুমুখী সেতু
কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যমুনা সেতু সারচার্জ ও
লেভি আদায়ের জন্য আরেকটি অধ্যাদেশ জারি হয়। অধ্যাদেশটির বিলুপ্তি পর্যন্ত এই
প্রক্রিয়ায় ৫.০৮ বিলিয়ন টাকা সংগ্রহ করা হয়। সে সময় ব্যাংকের হিসাবধারীদের কাছ
থেকে এই লেভি আদায় করা হতো।
১৯৮৬ সালে এই সেতুর
জন্য পুনরায় সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এ সময় সিরাজগঞ্জ ও ভূয়াপুরের
(টাঙ্গাইল) মধ্যবর্তী স্থানকে সেতুর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়।
১৯৮৭ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়
যে একটি সড়ক-কাম-রেল-কাম-বিদ্যুৎ লাইন পরিবাহী সেতু অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত
উভয়দিক থেকেই লাভজনক হবে।
১৯৯২ সালে আইডিএ, এডিবি
ও জাপানের ওইসিএফ সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নে সম্মত হয়। নির্মাণচুক্তির
জন্য ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক বিডিং-এর মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। সেতু নির্মাণ,
নদী শাসনের কাজ এবং দুটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের চুক্তি ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে
সম্পাদিত হয়।
১৯৯৪ সালে যমুনা সেতু
নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন ব্যতীত সকল কাজ ১৯৯৮ সালের জুনের
মধ্যে শেষ হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মিত
হওয়ায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির অধিবাসীদের সাথে অন্যান্য অংশের
সংযোগসাধনের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক অঙ্গনে এটা বিশাল প্রভাব রাখছে। এই সেতু
নির্মাণের আগে সড়কপথে ফেরীর মাধ্যমে ঢাকা থেকে বগুড়া যেতে যেখানে ১২ ঘন্টা সময়
লাগত, সেখানে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে সময় লাগে মাত্র ৬ ঘন্টা।
আগে ট্রেনযাত্রীও
সিরাজগঞ্জ-জগন্নাথগঞ্জ ফেরী পার হয়ে অপরপ্রান্তে গিয়ে সংযোগ ট্রেনে যাতায়াত করতো।
জামালপুরের বাহাদুরাবাদঘাট-তিস্তামুখ ঘাট নামেও অপর একটি ফেরিঘাট ছিলো। সেই ফেরি
দিয়ে মালামালবাহী ট্রেনও পার করা হতো। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু নির্মাণের পর সেসবের
অবসান ঘটে।
বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু
নির্মিত হওয়ার পর বিদ্যুৎএর গ্রীডলাইন এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইনও স্থাপিত হয়। ফলে
উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের লোক গ্যাস সুবিধা ভোগ করছে। এদিক দিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল
পিছিয়ে ছিলো। পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় তা পূরণ হতে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর ট্রেন
লাইন দুর্বল হওয়ায় এবং সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় বর্তমানে আলাদা রেলসেতু
নির্মাণকাজ হাতে নেয়া হয়েছে।
সে কারণেই ধারণা করা
হচ্ছে, রাজশাহী, খুলনা থেকে যে সমস্ত ট্রেন সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করে, সেসব ট্রেন,
এমনকি ঢাকা-কোলকাতা চলাচলকারী 'মৈত্রী এক্সপ্রেস'ও আগামী ১০ অক্টবরের পর থেকে
পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে।
ফলে মৃতপ্রায়
কুষ্টীয়া-রাজবাড়ী-ফরিদপুর রেললাইন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে।
এক্ষেত্রে পাবনা জেলারও
কিছু অংশের লোক এর সুফল ভোগ করবে।
ইতোমধ্যেই বিভিন্ন
মাধ্যমে মধুমতি এক্সপ্রেসের (পূর্বের যমুনা এক্সপ্রেস) সময়সূচী প্রকাশিত হয়েছে।
ট্রেনটি আগে
রাজশাহী-দৌলতদিয়া রুটে চলাচল করতো। কিছুদিন আগে থেকেই তার গতিপথ পরিবর্তণ করে
দৌলতদিয়ার পরিবর্তে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাতায়াত করছে।
বর্তমানে ট্রেনটি
রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী চলাচল করবে।
মধুমতি এক্সপ্রেসের
সম্ভাব্য সময়সূচী নিম্নরূপঃ
রাজশাহী ০৬.০০ -
ইশ্বরদী ০৭.১০ - পাকশী ০৭.২০ - ভেড়ামারা ০৭.৩০ - মিরপুর ০৭.৪০ - পোড়াদহ
০৭.৫০/০৮.১৫ - কুষ্টিয়া ০৮.৩০ - কুমারখালি ০৮.৪৫ - খোকসা ০৯.০০ - পাংশা ০৯.১৫ -
কালুখালি ০৯.৩০ - রাজবাড়ী ০৯.৫০ - ফরিদপুর ১০.২৫ - ভাঙ্গা ১১.০০ - পদ্মা ১১.৩০ -
মাওয়া ১১.৫০ - নীমতলি ১২.১৫ - ঢাকা ১২.৪০।
আপঃ ঢাকা ১৬.০০ -
রাজশাহী ২২.৪০।