গরীবের ভ্রমণ বিলাস (পর্ব-৫)

 


দর্শনা-গেদে বর্ডার অতিক্রম করার সময় কয়েকটি বিষয় নজরে এসেছিলো।

‘বাংলাদেশি মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক ভারতের অভ্যান্তরে ২-৩ কিলোমিটার ভিতরেও কাজ করে, কিন্তু ভারতীয় নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের অভ্যান্তরে কাজ করে না। বর্ডারে ইমিগ্রেশন কাজে সহায়তা করার জন্য উভয়পাশেই কিছু লোক কাজ করে। তারা অনভ্যস্ত বা নতুন লোকদের ইমিগ্রেশন ফরম পূরণ করে দেয়। বিনিময়ে ৫০-১০০ টাকা নেয়। এদের মধ্যে উভয়পাশের লোকজনকে বাংলাদেশি মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সব সময় যোগাযোগ হয়। ২০১১ সালে বুড়িমারী-চেংড়াবান্ধা বর্ডারেও এমনটি দেখেছি’।

 

‘ওপাশে গিয়ে দেখলাম এই কাজে নিয়োজিত প্রত্যেকের কাছেই বাংলাদেশি সিম আছে এবং এপারের লোকদের সাথে অহরহ কথা বলছে। আমিও ভারতে প্রবেশ করে নিজের জিপি এবং টেলিটক সিম থেকে পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলেছিলাম’।

 

ঈদের নামাজ পড়ে আমার ৭১-এর স্মৃতিবিজড়িত হোটেল পান্থনিবাস খোঁজ করেছিলাম। কিন্তু কেউ হোটেলটির কথা বলতে পারলোনা। হোটেলটি আগের জায়গায় আছে কিনা তা আর জানা হলোনা।

 

হোটেল ‘ক্যালকাটা লজ’ থেকে বিদায় নিয়ে বাসে ধর্মতলা গিয়ে ‘হোটেল গুলিস্তান’ নামক সাদামাঠা একটি হোটেলে উঠলাম। একই বিলডিং-এ পাশাপাশি দু’টি হোটেল ‘রয়েল’ এবং ‘গুলিস্তান’। রয়েলের মালিক সম্ভবতঃ বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাগত। গুলিস্তানের মালিক বিহার প্রদেশের এক মুসলমান। দেখলাম বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে যাওয়া নিম্ন বা মধ্য আয়ের লোকজন বেশিরভাগই ওখানে গিয়ে ওঠে। হোটেল মালিকদের আতীথেয়তাও সুন্দর।

 

আবাসিক হোটেলের কাছেই বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাগত এক মালিকের খাবার রেস্তোরাঁ আছে। সে হোটেলের আতীথেয়তাও খুব ভাল। ওখানে খেতে গেলে অসংখ্য বাংলাদেশি পর্যটকদের দেখা মেলে। মনেহয় ঢাকার কোন হোটেলে বসে খাবার খাচ্ছি।

 

ধর্মতলা ফ্রি স্কুল ষ্ট্রীটের দুইপাশে যেসব মানি চেঞ্জার দেখলাম তাদের প্রায় সবারই বাড়ি বাংলাদেশে। কেউ কেউ এখনও এদেশেরই বাসিন্দা। মাল্টিপল ভিসায় যাচ্ছে-আসছে, ওখানে ব্যাবসা করছে।

 

ফ্রি স্কুল ষ্টিটের পাশ দিয়ে অনেক সাইবার ক্যাফে আছে। যে কেউ ওখানে কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যাবহার করে নিজ নিজ কাজ করতে পারে। পশ্চিমা পর্যটকদেরই সেখানে বেশি ভিড় দেখা যায়।

 

আমি একা ঘুরছি কোলকাতা শহরে এদিকে আমার গোটা পরিবার কক্সবাজার, সেন্ট মারটিন, ছেড়াদ্বীপ বেড়াতে গেছে। আমি বেড়াতে যাচ্ছি, তারা আর বসে থাকবে কেন? হঠাত প্লান করে প্রস্তুতি নিলো ঈদের পরদিন তারা কক্সবাজার যাবে। এদিকে আমার অনেকদিনের স্বপ্ন কোলকাতা যাওয়ার, ভিসাও করেছি তাই আর প্লান পাল্টাতে পারিনি। কোলাকাতা শহরে ঘুরি আর তাদের সাথে মোবাইলে কথা বলি। একা একা তেমন আনন্দ পাচ্ছিলাম না।

 

আমার প্লান ছিল, কোলকাতায় একটু ডাক্তার দেখাবো, যদিও গেছি টুরিষ্ট ভিসায়। চারদিন কোলকাতা শহরে বিভিন্ন জায়াগায় ঘুরাঘুরি করে পঞ্চম দিন ডাক্তার দেখানোর প্লান মাথায় নিয়ে বেরুলাম। কিন্তু কোন ডাক্তার দেখাবো তা নির্ধারিত না থাকায় এর ওর কাছে জিজ্ঞেস করে জানার চেষ্টা করছিলাম। শেষমেশ ভাগ্য ভালো জায়গায়ই টেনে নিলো।

 

সম্ভবতঃ রবীন্দ্র সদন এলাকায় রাস্তার ধারে চা-পানের সময় একজন পরামর্শ দিলেন, কাছেই ‘শম্ভুনাথ হাসপাতাল’ আছে সেখানে সব ধরনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাবেন। নাম শুনে ভেবেছিলাম আমাদের দেশের মতো কোন নামকরা বেসরকারী হাসপাতাল। কিন্তু গিয়ে দেখলাম সেটা সরকারী। তবে ব্যবস্থাপনা এতো সুন্দর, দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।…(চলবে)।

(২০০৯ সালের ঘটনা। লেখা ২০১৪ সালে)

 

(কোলকাতার সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা জানার জন্যে বন্ধুদের পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ রইলো)

 

 

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url