দাড়ি, টুপি, বোরকা, হিজাব-নিকাব কি ইসলামী পোশাক?
মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা একজন আলেমের ফেসবুক পোষ্ট |
আসসালামু আলায়কুম। আমি প্রায়ই আমার লেখায় আমাদের পরিচিত, প্রচলিত
ধর্মীয় রীতি-রেওয়াজের অসংগতি তুলে ধরার চেষ্টা করি। যেসব রীতি-রেওয়াজ একদিকে যেমন
ধর্ম সম্পর্কে অতিরঞ্জন ও ভুল বার্তা দেয়, অন্যদিকে ধর্মের নামে সিলেবাস বহির্ভূত
পন্ডশ্রম। আর এই অতিরঞ্জনের কারণে ধর্মের যে আসল শিক্ষা; “Belief, good deeds and
being a better person”- এসব আড়ালে চলে যাচ্ছে।
আমার লেখায় কেউ দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন। তবে অনুগ্রহপূর্বক তা
রেফারেন্স সহ কমেন্টে জানালে আমরা নিজেদেরকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারবো।
আজ কথা বলবো, বহুল প্রচলিত, পরিচিত ইসলামিক ‘ড্রেস কোড’ নিয়ে।
I think, this is considered as one of the most significant
distinctions between a good Muslim & a bad Muslim.
এই লেখাটি দাড়ি, টুপি, টাখনুর উপর প্যান্ট পরা, হিজাব, নিকাব – এক
কথায় ইসলাম ধর্মে প্রচলিত পোশাকী বাধ্যবাধকতা নিয়ে আপনার ধারণাই বদলে দেবে
ইনশাল্লাহ।
আমরা জানি আমাদের মূল এবং একমাত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন। হাদিস, তাফসির –
এগুলো পবিত্র কোরআনেরই ব্যাখ্যা।
তাই এখানে কেবলমাত্র পবিত্র কোরআনের ভিত্তিতেই আলোচনা করবো। কারণ
কোরআন clear, complete, detailed এবং কোরআন - কোরআন বহির্ভূত বা কোরআনের সাথে
সামঞ্জস্যহীন হাদিস, ফিকাহ, কোনো ইমাম বা স্কলারের মতকে শারীয়ার ভিত্তি হিসেবে
অনুমোদন দেয় না।
অনেক সময় অনেককে তর্ক করতে দেখা যায়, মুখে দাড়ি না থাকলে নাকি
মুসলমানিত্বের চিহ্ন থাকে না। তাদের ধারণা দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী, পাগড়ি নাই মানে
সে মুসলমানই না!
তার কারণ, তারা কোরআন শুধু মুখস্থ বা রিডিং পড়ার কিতাব মনে করে বুঝে
পড়ে দেখে না যে, আল্লাহ কি বলেছেন।
যারা হিজাব, নিকাব অথবা দাড়ি, টুপি, স্যুট, টাইএর সাথে থ্রি
কোয়ার্টার প্যান্ট পরেন, এসব আপনি ফ্যাশন বা স্টাইল হিসেবে পরলে বা আপনার রুচি,
পছন্দের হলে ঠিক আছে। কিন্তু কোরআন আপনাকে যা আবশ্যকীয় বলেনি তা ধর্মীয় বিধিনিষেধ
হিসেবে বা পাপ-পূণ্য মনে করে করলে বা কাউকে সেটা করতে জবরদস্তি করলে উল্টো গোনাহ
হবে।
পবিত্র কোরআনে পুরুষ, মহিলা উভয়ের পোশাকের ব্যাপারেই বেশ কড়াকড়ি আরোপ
করা হয়েছে, আর তা হচ্ছে; কিছু একটা আপনাকে অবশ্যই পরতে হবে। দাড়ি, টুপি, পাগড়ি,
আলখেল্লা বা টাখনুর উপর প্যান্ট পরা, এক কথায় ছেলেদের পোশাকের কোনো স্পেসিফিকেশন
কোরআনে নাই। সুতরাং আপনার পছন্দ সামর্থ অনুযায়ী অভিজাত রুচিশীল যে কোনো পোশাকই
আপনি পরতে পারেন।
নবীজী(সাঃ)এর দাড়ি ছিলো আপনি কিভাবে জানেন? নবীজীর কোনো ছবি বা
প্রতিকৃতি আছে আপনার কাছে? না কোরানে এমন কোনো বর্ণনা আছে? হ্যাঁ, হাদিসে আছে। সে
হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী বা সংগ্রহকারী ইমাম কি কোরআন অনুমোদিত, সত্যায়িত? আর
কোরআনের সাথে সম্পর্কহীন হাদিস কি admissible? না।
হিজাব, নিকাব – এ শব্দগুলো কোরআনের যে আয়াতে এসেছে তার সাথে ড্রেস
কোডের কোনো সম্পর্ক নাই।
মহিলাদের পোশাক নিয়ে কোরআনে মোট ৩ টি আয়াত আছে, যার একটি নবীজীর
স্ত্রীদের জন্য যে; 'তারা যেনো মার্জিত পোশাক পরে', because of their roll in the
socity.
“সুরা আহযাব”এর ৩৩ নং আয়াত;
“আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে; প্রাচীন জাহেলী যুগের মতো নিজেদেরকে
প্রদর্শন করে বেড়াবে না”-(৩৩:৩৩)।
এখানে অবশ্য পোশাকের কোনো স্পেকিফিকেশন দেয়া হয়নি।
আয়াতের এই অংশটুকুর মাধ্যমেই মহিলাদের যুগ যুগ ধরে গৃহবন্দী করে রাখা
হয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা exclusively নবীজীর স্ত্রীদের জন্য as per their
special protocol.
“সুরা আহযাবের” ৩০ থেকে ৩৪ নং আয়াতের বক্তব্য বিশেষ করে নবীজীর
স্ত্রীদের জন্য।
“হে নবীপত্নীগণ তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও, তোমাদের মধ্যে যে কেউ
প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করবে তার জন্য আজাব দ্বিগুণ করা হবে, আর যে কেউ সৎকাজ করবে
আমি তাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দেবো”-(৩৩:৩০)।
সুতরাং এ বিধান সাধারণ নারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। নবীজীর স্ত্রীদের
জন্য আরোপিত বিধানকে যারা সকল মহিলার উপর চাপিয়ে দিতে চান তারা “সুরা আহযাব” পড়ে
দেখবেন। নবীপত্নীদের নবীজীর ইন্তেকালের পর অন্য কাউকে বিয়ে করাকেও নিষিদ্ধ করা
হয়েছে।
‘অনেক মেয়ে এমনকি ছেলেরাও হয়তো আমার কথাগুলোতে ষঢ়যন্ত্রের গন্ধ
খুঁজবেন যে; আপনি কেনো এসব নিয়ে কথা বলছেন'?
হ্যাঁ, সতীদাহ প্রথাও একসময় সামাজিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হতো না।
মোঘলরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও হিন্দুদের বোঝাতেই পারেনি যে, ‘সতীদাহ একটি সামাজিক
সমস্যা’। রাজা রামমোহন রায় আজীবন প্রচার করলেন যে, ‘সতীদাহ হিন্দুধর্মের কোনো
শাস্ত্রে নেই’। অতঃপর বৃটিশ সরকার কঠোর আইন করে এ জঘন্য প্রথা বন্ধ করে।
যদি শাস্ত্রে নাইই থাকে তবে সতীদাহ কি বর্বরোচিত হত্যাকান্ড নয়?
আগেরদিনে অনেককেই দেখতাম নিজেরা উচ্চ শিক্ষিত হলেও তাদের স্ত্রীরা
ফাইভ পাশ। সেটা কি মেয়েদের ইচ্ছার অভাবে? মোটেও না।
এমন কতো কতো স্বপ্ন ঝরে গেছে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায়!
‘হেফাজতে ইসলামে’র প্রয়াত আমীর শফি হুজুরতো বলেইছিলেন, 'মেয়েদের
ক্লাস ফোরের বেশি পড়ার দরকার নাই'। তিনি এও বলতেন; “গার্মেন্টস জিনাহর
কারখানা”।
যদিও কোরআন অনুযায়ী সামনে বা পিছনে কিংবা কারো সম্পর্কে কোনোরূপ
প্রমাণহীন কথা বলাকে গীবত বলে এবং গীবত, পরচর্চা ও পরনিন্দা ‘জিনাহ’র চেয়েও অধিক
গোনাহর কাজ-(সুরাঃ হুমাজাহ)। জিনাহর তওবা আছে, গীবতের তওবা নাই। (আল্লাহ শফি
হুজুরকে বেহেশত নসীব করুন)।
সর্বসাধারণ মহিলাদের পোশাক নিয়ে কোরআনের বাকি দুটি আয়াত, “সুরা
নূর”এর ৩১ নং আয়াত এবং “সুরা আহযাব”এর ৫৯ নং আয়াত।
তবে এ দুটি আয়াতেরও সহজ সরল ব্যাখ্যাকে আমরা আমাদের existing mindset
অনুযায়ী তরজমা করি এবং এর সাথে পছন্দসই হাদিস এবং ফিকহ মতামত জোড়া দিয়ে
পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তকেই অনুমোদন দেই।
এ দুটি আয়াত নিয়ে আলোচনা করার আগে মহিলাদের পোশাক সম্পর্কিত আমাদের
mindset বা মানসিকতা নিয়ে একটু কথা বলা দরকার। প্রাইমারী মাইন্ডসেট হচ্ছে
পোলারাইজড মাইন্ডসেট।
অর্থাৎ আমার ধর্ম এটা ফরজ করেছে তো এটার পক্ষে যুক্তি জোগাড় করতে
হবে।
এখন এসব যুক্তিবিদদের যদি বোঝানো যায় যে, ভাই ইসলামে হিজাব, নিকাব
ফরজ নয়। তাৎক্ষণিক এরা U turn নিয়ে হিজাব, নিকাবের ১৯৯ টা সমস্যা খুঁজে বের করবে।
নারীদের পোশাক নির্ধারণে আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে ‘যৌনতা’
বিষয়ক। অর্থাৎ নারী হচ্ছে যৌন উত্তেজক, তাই তার আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হবে। পুরুষকে
উত্তেজিত করার কোনো অধিকার তাদের নেই।
কিন্তু এসব আমাদের humanismPsion.
মহান আল্লাহ এসব মোহমায়া থেকে পবিত্র। তিনি জন্ম নেননি, কাউকে জন্ম
দেননি। আল্লাহর দৃষ্টিতে যৌনতা কোনো বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নয়। এটা জীবন
থেকে জীবনের প্রবাহ, প্রাণ থেকে প্রাণের প্রদীপ জ্বালানোর প্রক্রিয়া।
কোরআনে বিবাহ বা বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচারের যতো বিধান তার মূল উদ্দেশ্য;
to keep this process as pure as possible.
আমেরিকায় যেখানে সুন্দরী মেয়েরা অতি সামান্য পোশাক পরে, সেখানে যিনি
হিজাব, নিকাব, সানগ্লাস, গ্লাভস পরছেন তিনি এসব কিছু না পরলেও কারো নিশ্চই ভিন্ন
প্রতিক্রিয়া হতো না।
ইউনিভার্সিটিতে অনেক মেয়েরাই সাধারণ পোশাক পরে। এখন যে হিজাব বা
নিকাব পরছে সে হিজাব, নিকাব না পরলেও কেউ উত্তেজনায় গাছে উঠে যাবে না।
মুসলিম বা অমুসলিম ১০০% মহিলা হিজাব, নিকাব না পরলে তো পুরুষের
উত্তেজনা ঠেকানো যাচ্ছে না।
As Confucian philosopher Mencious asked, “Is there any different
between killing a man with a stab or with a sword”?
ধরেন একজন পানিতে ডুবে মারা গেলো। তো সে পুকুরে ডুবে মরলো না
আটলান্টিকে ডুবে মরলো তাতে কি কোনো পার্থক্য আছে?
এক্ষেত্রে একটা উত্তর পেয়েছি যে, যে পর্দা করবে সে তার সওয়াব
পাবে।
In this case, its not social or sexual issue. সেক্সুয়াল বা সোস্যাল
ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করলে এর সমাধান হবে, ‘ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মেয়েদের
হিজাব, নিকাব বা লাইফটাইম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক।
So, its exclusively religious issue.
এবারে চলুন দেখা যাক কোরআন মহিলাদের পোশাক সংক্রান্ত দুই আয়াতে কি
বলেছে। কোরআনে নারী-পুরুষের যে পোশাকের বিধান তা সাধারণ সামাজিক সভ্যতা বা সুরক্ষা
হিসেবে দেয়া হয়েছে। এরসাথে পাপ-পূণ্য, ফরজ, হারাম, বেহেশত, দোজখ এসবের কোনো উল্লেখ
নাই।
কোরআন বলেছে এটা শুনে দৌড় দিলেই হবে না। কি বলেছে তাও একটু খেয়াল
করতে হবে।
একজন তার মেয়ের নাম রেখেছে ‘তুকাজ্জিবান’। কারণ কোরআনে আছে। অথচ
তুকাজ্জিবান অর্থ ‘মিথ্যুক’। কোরআনে তো শয়তানের নামও আছে, আবু লাহাবের নামও আছে।
“সুরা নূর”এর ৩১ নং আয়াতঃ
“ইমানদার নারীদেরকে বলুনঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে এবং তাদের
লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান তা ব্যতীত তাদের
সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত
করে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই,
ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে
যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারও নিকট
তাদের আভরণ প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশে সজোরে
পদক্ষেপ না ফেলে”-(২৪:৩১)।
কিন্তু এর ঠিক আগের আয়াতেই, অর্থাৎ “সুরা নূর”এর ৩০ নং আয়াতে হুবহু
একই শব্দ, একই কথা বলা হয়েছে পুরুষদের সম্পর্কে।
“ইমানদার পুরুষদের বলুনঃ তারা যেন দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের
লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে; তারা যা করে সেই
বিষয়ে আল্লাহ অবহিত”-(২৪:৩০)।
পোশাকের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা কারো উত্তেজনা প্রশমন করার জন্য নয়।
পোশাকের উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী, পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলা হয়েছে। এ দৃষ্টি
চর্মচক্ষু এবং অন্তর্দৃষ্টিবোধ।
নারী, পুরুষ উভয়ই পরস্পরের জন্য উত্তেজক। আমেরিকায় Gay Community বেশ
বড়। তারাও নিশ্চয়ই একজন পুরুষ দেখে বিশেষ অস্থিরতা অনুভব করে। কিন্তু তাদের ভয়ে তো
বাকি সব পুরুষ হিজাব বা নিকাব পরে থাকতে পারে না।
সম্প্রতি বিতর্কের নতুন টপিক, ‘মহিলারা প্রজেক্টরে ওয়াজ শুনতে পারবে
কিনা’? কি হাস্যকর! প্রজেক্টর কেনো, মহিলারা সরাসরি কোনো পুরুষকে দেখতে পারবে না
এটা কোন আয়াতে বলা হয়েছে? মহিলারা তো সরাসরি নবীজী বা খলিফাদের কাছে প্রশ্ন করতো,
আলোচনা শুনতো, বিচার চাইতো, ব্যবসা-বানিজ্য করতো।
আমরা জানি, উম্মুল মুমিনুল হযরত খাদিজা(রাঃ) ছিলেন তৎকালিন আরবের one
of the biggest Export-Import কোম্পানির CEO.
যাইহোক; ইসলামে নারী, পুরুষ উভয়ের পোশাকের যে গাইডলাইন তা জেনারেল
এডভাইস বা সাধারণ সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে দেয়া হয়েছে।
৩১ নং আয়াতে অতরিক্ত হিসাবে মহিলাদের বুক ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে which
is very reasonable & considerable for their private part.
‘এবং তারা যেনো স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় তাছাড়া তাদের বিশেষ সৌদর্য
প্রদর্শন না করে এবং তাদের খিমার বা ওড়না দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে’।
খিমার মানে piece of cloth. এক টুকরা কাপড় বা ওড়না। এই ওড়না দিয়ে
মাথা, মুখ, চোখ ঢেকে রাখার বহু রকমের ব্যাখ্যা দেয়া যায়। কিন্তু আল্লাহ বুক ঢেকে
রাখতে বলেছেন। আমরা এই হাদিস, ওই তাফসির বিভিন্ন ফতোয়ার কিতাব জোড়া দিয়ে বলছি,
মহিলাদের চোখও ঢেকে রাখতে হবে, মুখও ঢেকে রাখতে হবে।
এটাই যদি আল্লাহর নির্দেশ হতো, আল্লাহ এককথায় বলে দিতে পারতেন যে,
‘মহিলারা পরপুরুষের সামনে আপাদমস্তক ঢেকে রাখবে’। কিন্তু এই আয়াতে নিকটাত্মীয় ছাড়া
অন্য পুরুষদের কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
পোশাকী এ বিধান কেনো দেয়া হয়েছে তার উদ্দেশ্য অপর আয়াত থেকে বেশ
পরিস্কার।
“সুরা আহযাব”এর ৫৯ নং আয়াত;
“হে নবীঃ আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও ইমানদার নারীদের বলুনঃ তারা
যেনো তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে
তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না”-(৩৩:৫৯)।
এই জিলবাব বা খিমারের মাপজোখ বা তা দিয়ে কি কি ঢেকে রাখতে হবে তাই
নিয়ে দিনভর বিতর্ক। কিন্তু এই নির্দেশনা আল্লাহ কেনো দিয়েছেন? যাতে তাদের চেনা যায়
যে, তারা অভিজাত এবং স্বাধীন মহিলা। তাতে তারা উত্যক্ত বা বৈষম্যের স্বীকার হবে
না।
এই আয়াতে আল্লাহ নবীজীকে তার স্ত্রী, কন্যা ও ইমানদার নারীদের বলতে
বলেছেন।
সুতরাং নবীজী কি বলেছেন তা কোরআনে well documented. এখন দাড়ি আল্লাহর
ইচ্ছা হলে তিনি কোরআনে এমন একটি আয়াত যুক্ত করতেন যে, ‘হে নবীঃ ইমানদার পুরুষদের বলুনঃ
তারা যেনো দাড়ি বড় করে গোঁফ ছোট করে’! কিন্তু অননুমোদিত কেউ নবীজী বলেছেন বললেই
সেটা নবীজীর বাণী হিসাবে আমলযোগ্য নয়।
তৎকালিন আরবে দরিদ্র, নিম্নশ্রেণী বা কৃতদাসীরা যৎসামান্য কাপড় পরতো।
তাই তাদের বিভিন্ন রকমের টিজিং বা সামাজিক বৈষম্যের স্বীকার হতে হতো।
ওড়না বা চাদর ছিলো আভিজাত্য। তাই সেসব মহিলাদের আলাদাভাবে সমীহ করতো।
এমনকি পুরুষদেরও হেডস্কার্ফস, আউটার গার্মেন্টস, স্যুটস আউটফিট আভিজাত্য হিসেবেই
বিবেচিত হয়।
সেলস প্রতিষ্ঠানে আমরা ড্রেসস কোড বা বিজনেস এটেয়ার প্রমোট করি।
ডিফেন্স অফিসারদের ইউনিফরম তাদের মর্যাদা বা গর্বের উপলক্ষ।
“সুরা আরাফ, আয়াত-২৬;
“হে বনী আদম! আমি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার ও বেশভূষার জন্য
তোমাদের পোশাক পরিচ্ছদের উপকরণ অবতীর্ণ করেছি। (বেশ-ভূষার তুলনায়) আল্লাহভীতির
পরিচ্ছদই হচ্ছে সর্বোত্তম পরিচ্ছদ। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম নিদর্শন,
সম্ভবতঃ মানুষ এটা হতে উপদেশ গ্রহণ করবে”-(৭:২৬)।
“সুরা আরাফ, আয়াত ৩১;
“হে আদম সন্তান! প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণ
কর, আর খাও এবং পান কর। তবে অপব্যয় ও অমিতাচার করবেনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ
অপব্যয়কারীদের ভালবাসেননা”-(৭:৩১)।
সময়ের সাথে সাথে পোশাকের ফ্যাশন বদলায়। একটা নির্দিষ্ট পোশাক সব
সমাজে সবসময় অভিজাত বলে বিবেচিত হয় না। সুতরাং পোশাকী এ বিধান ফরজ, হারাম, পাপ,
পূণ্য হিসাবে নয়। সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে দেয়া হয়েছে।
কোরআন যেসব জিনিসকে হারাম বা ফরজ করেছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করেই বলা
আছে:
“হুররিমাত আলাইকুমুল”- তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে (৫:৩)।
“ওয়া হাররামার রিবা”- সূদকে হারাম করা হয়েছে(২:২৭৫)।
“কুতিবা আলালাইকুমুসসিয়ামু”- তোমাদের উপর রোজাকে বিধিবদ্ধ বা ফরজ করা
হয়েছে(২ঃ১৮৩)। - এমন শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
এছাড়া যেগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ যেমন; পাপকাজ, শয়তানের কাজ, শাস্তি,
দুঃসংবাদ, জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা- এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
অবশ্য সেসব আমাদের চোখে পড়ে না। কারণ, আমরা মহিলাদের চোখ খোলা রাখা
যাবে কিনা তা নিয়েই ব্যস্ত। নইলে আলোচ্য আয়াতের ঠিক আগের আয়াতে, অর্থাৎ “সুরা
আহযাব”এর ৫৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ
“ওয়াল্লাযীনা ইউযূ নাল মুমিনীনা ওয়াল মুমিনা-তি বিগাইরি
মাকতাছাবূফাকাদিহতামালূ বুহতানাওঁ ওয়া ইছমাম মুবীনা”--(৩৩:৫৮)।
অর্থাৎঃ
‘মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারী কোন অপরাধ না করলেও যারা তাদেরকে পীড়া
দেয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে’।
বলুন এই দুই আয়াতের মধ্যে কোনটা পাপ আর কোনটা সাধারণ সামাজিক
গাইডলাইন এটা বুঝতে কি আপনার আল-আযহার ইউনিভার্সিটিতে পড়া লাগবে? অথচ পর্দার ফতোয়া
নিয়ে একজন আলেম আরেকজন জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলারকে কাফের ফতোয়া দিচ্ছেন। ইহুদীর
দালাল, খৃষ্টানের এজেন্ট বলতেও দ্বিধা করছেন না।
ধর্মীয় বিতর্কে নিকৃষ্ট ভাষার ব্যবহার বা নাস্তিক, বিধর্মীদের অকথ্য
ভাষায় গালাগাল দিয়ে যারা দোজাহানের অশেষ নেকী হাসিল করছেন! তাদের সম্পর্কে কোরআন
কি বলছে তা “সামনে বা পিছে লোকের নিন্দা” শীর্ষক লেখায় পরবর্তীতে আসছে। এই লেখার
উপরের অংশে তার কিছুটা উল্লেখ করেছি।
ইসলাম কোনো লিমিটেড কোম্পানি নয় যে, আলাদা লেবেল বা লোগো থাকতে হবে।
নবীজী(সাঃ) সহ সাহাবীদের কারোরই নাম, পোশাক-আশাক নবুয়ত প্রাপ্তির পর বা ইসলাম
গ্রহনের পর পরিবর্তিত হয়নি। মুসলিম নারী-পুরুষরা সমাজে শালীন, মার্জিত হিসেবে
বিবেচিত এমন পোশাকই পরতেন। অমুসলিমরাও একই ধরণের পোশাকই পরতো।
এখনো সৌদি আরবের জেলে গেলে দেখবেন- চোর, ডাকাত, খুনী সবাই বড় বড়
জুব্বা, স্কার্ফ পরা। এটাই তাদের পোশাকী কালচার।
পোশাক দিয়ে অবশ্যই একজন মানুষের মূল্যায়ন হওয়া উচিৎ নয়। ইসলামে একজন
মানুষের মূল্যায়ন হয় তার উত্তম চরিত্র ও সৎকর্ম দিয়ে।
চরমপন্থা ও ধর্মান্ধতা নিয়ে পাকিস্তানের পুরস্কারপ্রাপ্ত মুভি “খোদা
কে লিয়ে”তে আলোচিত এক মামলায় ধর্মীয় কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে হায়কোর্ট
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় আলেমকে আমন্ত্রণ জানায়। সে মামলায় পোশাকী বাধ্য-বাধকতা নিয়ে
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সেই বিজ্ঞ আলেমের চরিত্রে শক্তিমান অভিনেতা
নাসিরুদ্দিন শাহ বলেনঃ
মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শন বা পোশাকের ব্যাপারে অতিরিক্ত সচেতনতার
পরামর্শ কেনো দেয়া হয়েছে তা বুঝতে ১৪০০ বছর আগের কোনো সময়ে যেতে হবে না। এখনকার
পৃথিবীতেও sexual harassment, rape, teasing এর যতো আইন, তা মূলতঃ মেয়েদের
সুরক্ষার দিককেই প্রাধান্য দেয়া হয়। মেয়েদের নিরাপত্তার জন্যেই এসব আইন করা হয়।
কারণ ইউরোপ, আমেরিকায়ও rape বা sexual harassment এর যতো অভিযোগ,
প্রায় ৯৯%’র ক্ষেত্রে মেয়েরাই অভিযোগকারী বা ভিক্টিম। এখনকার পৃথিবীতেও কতো শতাংশ
অঞ্চল নিউ ইয়র্ক বা মেলবোর্ন-এর মতো নিরাপত্তার চাদরে আবৃত?
চাইলেই সারা পৃথিবীতে এমন নিরাপত্তার ব্যাবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
তাই পোশাকী নিরাপত্তা হচ্ছে সর্বশেষ বা ন্যুনতম সামাজিক সুরক্ষা। কোনো দুর্গম
এলাকায় বখাটেদের নজর এড়াতে একটা মেয়ে আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ
পোশাক ছাড়া যে কোনো গ্রহনযোগ্য রুচিশীল পোশাকই ইসলামী পোশাক।
আমি রেফারেন্স দিয়েছি। আপনারা অন্যান্য অনুবাদ সহ বিস্তারিত চেক করে
দেখবেন, এই আয়াতগুলোতে ফরজ, হারাম, পাপ-পূণ্য, বেহেশত, দোজখ এমন কোনো শব্দই নাই।
আর কোরআন যা কিছুকে হারাম বা ফরজ বলেনি সেসব কিছুকে ফরজ বা হারাম বলার কোনো সুযোগ
নাই।
সুতরাং হিজাব, নিকাব, দাড়ি, টুপি, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আপনি
ফ্যাশন, personal preference হিসাবে বা সাধারণ সামাজিক গাইডলাইন হিসাবে রাখতে
পারেন, পরতে পারেন। ফরজ, ওয়াজিব হিসাবে নয়।
দেখুন, আমেরিকায় মেয়েরা যে ধরণের পোশাক পরে তাতে তো ছেলেদের
উত্তেজনায় মরে যাওয়ার কথা!
Religious mindset থেকে বের হয়ে দেখলে দেখবেন, নবীজী(সাঃ)এর পবিত্র
জন্মভূমি স্বয়ং সৌদি আরবে আমাদের মা-বোনরা কি ভয়াবহ শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের
স্বীকার।
কিন্তু আমেরিকা, ইউরোপে এসব অকল্পনীয়। এর প্রধান কারণ আইনী সুরক্ষা।
আমেরিকায়, ইউরোপেও rape হচ্ছে। কিন্তু সে রেপের কারণ বা বন্ধে করণীয় নিয়ে বিলিয়ন
ডলারের গবেষনাও হচ্ছে।
এসব গবেষনায় নারীদের পোশাক নয়, বরং ধর্ষকের মানসিক অসুস্থতাকেই দায়ী
করা হচ্ছে। এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞগণ সেটারই প্রতিকারের পরামর্শ দিচ্ছেন।
অনেকে আবার general business attire কে খৃষ্টানদের পোশাক মনে
করে। পোশাকের আবার ইহুদী খৃষ্টান কি, তা জানিনা।
আমাদের যারা দাড়ি রাখেন না বা যেসব মেয়েরা হিজাব, নিকাব পরেন না,
এটার পিছনে নাকি খৃষ্টানদের বিরাট চক্রান্ত আছে! এসব শ্রেফ বিভাজন বা
বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতা।
খৃষ্টানরা জন্মদিন পালন করে এই যুক্তিতে মুসলমানদের জন্মদিন পালন
‘হারাম’! এভাবে বেদ, বাইবেল, ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে সব বাদ দিলে কম্বলের পশম
বাছাইয়ের মতো ইসলাম ধর্মের অনেক কিছুই বাদ পড়ে যাবে। আমরাও তো আমাদের নবীজী(সা:),
হযরত ইমাম হোসেন(রা:)' র জন্ম/মৃত্যু দিবস পালন করি।
খৃষ্টানদের ক্রুশে যে যিশুর মুর্তি তাতে যিশুর দাড়ি আছে। তার মানে
দাড়ি যদি কোনো specific ধর্মের প্রতীক হয় তবে সবার আগে তা খৃষ্টধর্মের প্রতীক।
আমাদের দাড়িতে নিরুৎসাহিত করা বা আমাদের মেয়েদের ঘরের বাইরে আনা,
বেগানা পুরুষের সাথে লেখাপড়া বা চাকরিতে জড়ানোর যে চক্রান্ত খৃষ্টানরা করছে! তাকে
বিবেচনায় নেয়া যেতো যদি তারা তাদের দেশের মেয়েদের কোয়ারেন্টিনে রাখতো বা হিজাব,
নিকাব পরিয়ে রাখতো। কিন্তু আমেরিকা সহ উন্নত, উন্নয়নশীল
দেশের মেয়েরা night shift এ নির্বিঘ্নে কাজ করে। যা খুশি তাই পরিধান
করছে, যেখানে খুশি সেখানেই যাচ্ছে। তাতে তারা কোনোরূপ যৌন নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছে
না।
Pope, Father’রাও রীতি হিসেবে দাড়ি রাখেন না। কারণ তারা বাইবেল খুলে
দেখেছে- দাড়ি, টুপি, হিজাব, নিকাবের সাথে ধর্মের সম্পর্ক নাই।
আমরা আমাদের কোরআন খুলে দেখলেও তাই দেখবো। কিন্তু 'তাফসিরুল কোরআন'
মাহফিলের বিশাল ব্যানার দিয়ে কোরআনের সাথে সম্পর্কহীন সুপারহিট কিচ্ছাই
শুনি।
আল্লাহ যা সহজ করেছেন তাকে কঠিন করে আমরা ধর্মভীতি ছড়াচ্ছি।
“তোমাদের জন্য যা সহজসাধ্য আল্লাহ তাই ইচ্ছা করেন ও তোমাদের জন্য যা
দুঃসাধ্য তা ইচ্ছা করেন না”-(২:১৮৫)।
পরিশেষে এটাও বলতে চাই; হিজাব, নিকাব দিয়ে নারীদের ঢেকে দিলেন,-
বিভিন্নস্থানে, বিশেষ করে মাদ্রাসায় যে খোদ মৌলবীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত পুরুষ শিশু
যৌন নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছে, সেটা ঠেকাবেন কি দিয়ে?
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মুসলিম দেশ মিশরে স্কুলে নিকাব নিষিদ্ধ করা
হয়েছে।
আসলে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে।
সুতরাং সহজ করে ভাবুন। বাড়াবাড়ির অভ্যাস ত্যাগ করুন।
(সজল রোশনের ভিডিও অবলম্বনে)