গরীবের ভ্রমণ বিলাস (পর্ব-৬)

 


ব্রিটিশ আমলে কোলকাতা হাইকোর্টের প্রথম ভারতীয় বাঙালি বিচারপতি ছিলেন শম্ভুনাথ পন্ডিত। আগে কখনও তার নাম শুনেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু কোলকাতায় দেখলাম সে খুব নামকরা এবং সবার কাছে সমান সন্মানীয় ও স্মরণীয়। তারই নামানুসারে সরকারী হাসপাতাল ‘শম্ভুনাথ হাসপাতাল’।

 

মাত্র ২ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে দু’জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখালাম। একজন ভিনদেশী নাগরিক হয়েই এ সুবিধাটা পেলাম, কেউ কোনো প্রশ্নও করলোনা। কাউন্টার থেকেই একজন মেডিসিনের এবং একজন অর্থপেডিকের নামকরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম জেনে নিয়েছিলাম।

 

সাধারণতঃ হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী যে কোন রোগীকে আগে আউটডোরে দেখাতে হয়। আউটডোর থেকে যদি কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রেফার করে তবেই সে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে। কিন্তু আমি সরাসরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞের চেম্বারে চলে গেলাম। সেখানে যে নার্স সিরিয়াল মেইন্টেইন করছিলো তাকে বললাম, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, আমাকে একটু আগে দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে’। ডাক্তারকে গিয়ে বলায় তিনি অনুমতি দিলেন।

 

অতিশয় ভদ্র ও সদালাপী বয়স্ক একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ব্যক্তিগতভাবে একদম সাদামাটা বলেই মনে হলো। চেম্বারে ঢুকে আমার সমস্যাগুলো বর্ণনা করার সময় কিছুদিন আগেই ঢাকায় প্রফেসর ডঃ মবিন খানকে দেখিয়েছিলাম এবং তিনি যেসব পরিক্ষা-নিরীক্ষার উপদেশ দিয়েছিলেন সাথে করে নেয়া সেসব কাগজপত্র দেখালাম এবং বললাম, ‘আমিতো আগামীকালই দেশে চলে যাবো, কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে করাতে পারবোনা, এগুলো দেখেই একটা ব্যবস্থাপত্র দিতে হবে’। বেচারা সবকিছু জেনেশুনে অগত্যা একটা ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বললেন, ‘আপনাকে একটা দামী ওষুধ লিখে দিলাম, তবে সম্ভব হলে ১৫ দিন পরে এসে একটু দেখা করে যাবেন। আসতে না পারলে ফোন দিয়ে অবস্থাটা জানাবেন’।

 

সত্যিকথা বলতে কি, ওনার ওষুধ খেয়ে বেশ উপশম পেয়েছিলাম, কিন্তু বেচারাকে আর ফোন করা হয়নি। তবে দুই বছর পর আবার সেই উপসর্গ দেখা দিলে নিজে নিজে মাতুব্বরী করে ওনার দেয়া সেই দামী ওষুধটির বিকল্প বাংলাদেশ থেকে কিনে খেয়েছিলাম, কিন্তু তেমন ফল পাইনি।

 

দামী ওষুধটার একটা ছোট্ট বর্ণনা দেই। কোলকাতার ওষুধের নামটা মনে নেই তবে জেনেরিক নাম Clarithromycin । গ্লাক্সো কোম্পানির তৈরি একেকটা ট্যাবলেটের বাংলাদেশি টাকায় দাম নিইয়েছিল ১৩৫ টাকা। দুই বছর পর বাংলাদেশে তার বিকল্প খুজতে গিয়ে একমি’র তৈরি Claricin(জেনেরিক নাম একই) পেয়েছিলাম যার একটি ট্যবলেটের দাম মাত্র ৪৫ টাকা। কাজ হবে কি করে!

 

অনেকেই হয়তো বলবেন নিজ দেশ রেখে অন্য দেশে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আবার কিপটেমি করে সরকারী হাসপাতাল! তাদের কৌতুহল নিবারণের জন্যে বলছি। ইচ্ছে তো ছিলো প্রাইভেটভাবেই ডাক্তার দেখাবো। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে সরকারী হাসপাতালে গিয়ে মাত্র ২ টাকার টিকেটে যে সেবা পেলাম, বাংলাদেশে তা কল্পনাও করা যায়না।

 

আজ ২১ সেপ্টেম্বর’ ২০১৪। গতরাতেই স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার অর্থপেডিকের বড় ডাক্তার গ্রীন লাইফ হাসপাতালে সৈয়দ আতিকুল হকের কাছে গিয়েছিলাম। ভদ্রলোক প্রচুর পরিশ্রম করে রাত ১টা ২টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। অনেক সহকারীও আছে তার। ভিজিট নেন মাত্র(!) ১০০০ টাকা। অথচ কোলকাতার নামকরা প্রাইভেট হাসপাতাল ‘পিয়ারলেস হাসপাতাল’। পরের বছর অর্থাৎ ২০১০-এ স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। যে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখান, কাউন্টার থেকে ১০০ টাকা দিয়ে টিকেট কিনলেই হলো।......(চলবে)।

(২০১৪ সালে লেখা। ২০০৯ সালের ঘটনা)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url