বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার হুনজা (Hunza) সম্প্রদায়
পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার
নারীদের সৌন্দর্য বিশ্বে অতুলনীয়। সাদা চামড়া এবং নীল চোখ আর বাদামী চুলের অধিকারী
হুনজাই নারীরা যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
ভারত ও পাকিস্তানের
নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালতিস্তানের পাহাড়ে অবস্থিত
হুনজা উপত্যকায় হুনজা সম্প্রদায়ের বসবাস। এই উপত্যকাটি তারুন্যের মরুদ্যান নামেও পরিচিত।
এখানকার বাসিন্দারা শুধু সুদর্শন ও সুন্দরই
নন, একইসাথে দীর্ঘায়ুরও অধিকারী। এখানকার
গড় আয়ূ ১১০-১২০ বছর।
হুনজা সম্প্রদায়ের পুরুষ
ও নারীরা যেমন সুন্দর তেমনি খুব শক্তিশালী হয়ে থাকে। ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সে হুনজাই সম্প্রদায়ের
নারীদের মা হওয়া এখানে স্বাভাবিক বিষয়। এমনকি একজন ৯০ বছরের পুরুষও সেখানে বাবা হওয়ার
ক্ষমতা রাখেন। যদি আপনি কখনো পাকিস্তানে ভ্রমণ করতে যান তাহলে অন্তত একবার হলেও হুঞ্জাই
উপত্যকা ঘুরে দেখবেন।
হুনজা উপত্যকার নারীদের
নিয়ে পাকিস্তানে একটা কথা প্রচলিত আছে, হুনজা সম্প্রদায়ের নারীরা চিরযৌবনা। এদের গায়ের
চামড়ায় কখনো বয়সের ছাপ পড়ে না।
রাস্তা দিয়ে হাঁটার
সময় আপনি যদি কখনো হুনজা সম্প্রদায়ের মা এবং মেয়েকে একসাথে রাস্তায় দেখেন তাহলে আপনি
নিশ্চিত বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেন। কারণ মা ও মেয়ের বয়সের পার্থক্য আপনি ধরতেই পারবেন
না।
হুনজা উপত্যকায় একজন
৭০ বছরে বৃদ্ধাকেও এখনো ১৬ বছরের টগবগে তরুণী মনে হবে। পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার
সৌণদর্য অতুলনীয়। হুনজা ভ্যালি যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীর কাছে লোভনীয়।
পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার
মানুষের এতো বছর বয়সের মূল রহস্য খুঁজতে ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি গবেষণা
চালিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীদের গবেষ্ণায় হুনজা উপজাতির মানুষদের বেশি বছর বাঁচার
বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রহস্য তারা উদ্ঘাটন করেছেন।
পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার
মানুষকে ‘আলেজান্ডার দ্য গ্রেট’ এর বংশধর মনে করা হয়। আজ থেকে প্রায় ২ হাজার বছর আগে
গ্রীক সম্রাট ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’এর সৈন্যরা পাকিস্তানের সিন্ধু নদীর তীরে অভিযান
চালায়। তখন এসব সৈন্যদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ পাকিস্তানে থেকে যায়। তাদেরকেই বর্তমানে
হুনজা সম্প্রদায় বলা হয়ে থাকে।
হুনজা উপজাতি কোনোকিছু
নিয়েই দুশ্চিন্তা করে না। মানসিক অবসাদ বা বিষন্নতা এদের তাদের সহজাত প্রবৃত্তিতে নেই
বললেই চলে। সব বয়সের নারী পুরুষই সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পরিশ্রম করেন।
একজন ৮০ বছরের হুনজাই
বৃদ্ধের কাছে প্রতিদিন ১০-১৫ কিলোমিটার পাহাড়ী পথে হাঁটা তাদের কাছে ব্যাপারই না। ৪০
ওজনের শস্যভর্তি বস্তা অনায়াসেই তারা ক্ষেত থেকে বহন করে ঘরে ফেরেন।
হুনজারা সারাদিনে মাত্র
দুবার খাবার খান। সূর্য ওঠার পরে একটা ভারী প্রাতঃকালিন খাবার, সূর্য ডোবার পরে রাতের
খাবার, এই শেষ। এর মাঝে হুনজারা আর কোনো খাবার গ্রহণ করেন না।
হুনজা উপজাতিদের ৯৫
ভাগ জনগনই মুসলিম। তারা সব ধরণের ইসলামী রীতি-নীতি মেনে জীবন পরিচালনা করেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার
হলো হুনজা উপজাতির মধ্যে শিক্ষার হার ৯০ শতাংশ। আমাদের শরাঞ্চলের শিক্ষার হার যেখানে
৭০-৭২ শতাংশেরও নিচে, তাই আপনি যদি এদের ব্যাকডেটেড মনে করে থাকেন তাহলে ভুল করবেন।
শিশুকাল থেকেই এই সম্প্রদায়ের
মেয়েদের সৌণদর্য বিকশিত হতে শুরু করে। একটি কথা প্রচলিত আছে যে কাশ্মীরের মেয়েরা এই
উপমহাদেশের সবচেয়ে সুন্দরী। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, কাশ্মীরী নাড়িদের সাথে আপনি হুনজা
স্মপ্রদায়ের নারীদের তুলনা করলে আপনি বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেন যে কারা আসলে বেশি সুন্দরী।
এখানকার মেয়েরা খুবই
লাজুক। অপরিচিত পুরুষ কিংবা ক্যামেরার সামনে তারা আসতে চায় না।
হুনজাই নারীরাও কাশ্মীরীদের
মতো মাথায় একপ্রকার টুপি পরে। হুনজারা নিজেদের ভিতরে বিবাহের মাধ্যমে বংশধারা অব্যাহত
রেখেছে। হুনজা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা পাকিস্তানের পাঞ্জাব, বেলুচ কিংবা অন্য সম্প্রদায়ের
কোনো নারী-পুরুষ বা অন্য কোনো জাতির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় না। যার কারণে হুনজা
সম্প্রদায়ের জিনগত বৈশিষ্ট এখনো অটুট রয়েছে।
হুনজারা সব সময় প্রাকৃতিক
খাবার খেয়ে থাকেন। তাদের খাদ্য তালিকায় রাখেন প্রচুর পরিমানে শুকনা এপ্রিকট, লেবু জাতীয়
ফল, বাদাম, সীম, ভুট্টা, বার্লি ও বাজরার মতো শস্য। এছাড়াও তুমুরু নামে এন্টি অক্সিডেন্ট
ভরপুর এক প্রকার উদ্ভিদের পাতা ফুটিয়ে চায়ের মতো পান করেন হুনজারা। প্রয়োজনীয় খাদ্য
ও সবজী হুনজারা নিজেরাই উৎপাদন করেন।।
দুর্গমস্থানে বাস করার
কারণে এবং বিভিন্ন কাজে প্রতিদিনই হুনজাদের প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়।
হুনজারা সব কথাতেই হাসেন।
হাসি-ঠাট্টা, তামাশা তাদের জীবনের অন্যতম অভ্যাস। গোমরা মুখের মানুষ হুনজা সম্প্রদায়ে
দেখতে পাওয়া বিরল।
বিভিন্ন উৎসবে হুনজারা ঐতিহ্যবাহী পোষাক পড়ে নাচ-গান করে। এখানকার প্রধান উৎসব হচ্ছে ইদুল ফিতর, ইদুল আযহা, ইদে মিলাদুন্নবীর মতো বিভিন্ন ইসলামী উৎসব।