বিশ্বাস vs বিজ্ঞান - ধর্মের আসল সৌন্দর্য
এখনকার সময়ে ধর্ম নিয়ে
কথা বলা প্রায় দুঃসাহসিক কাজ। কারণ এর সব দিকেই ধার। প্রথমে আস্তিক, নাস্তিক, এরুর
হিন্দু মুওসলমান, এরপর শিয়া, সুন্নী, অতঃপর আহলে হাদীস, আহলে সুন্নাহ। বিতর্ক
চলতেই থাকবে। তবে মনোযোগ দিয়ে শেষ লাইন পর্যন্ত পড়লে আপনি যেই মতাব্লম্বীই হোন, এই
লেখা পড়ে আপনার চিন্তায় একটা আমূল পরিবর্তণ আনবে এটা জোর দিয়ে বলতে পারি।
আপনি হয়তো বিনোদিত হবেন
না। কিন্তু আপনি অনেক সমৃদ্ধ হবেন। এসব আমার ব্যাক্তিগত ভাবনা বা দৃষ্টিভংগি। আমার
বোঝায় অবশ্যই ভুল থেকতে পারে, আবার আমার বক্তব্যকেও আপনি ভুল বুঝতে পারেন। তাই আপনার
ভাবনা বা মতামত কমেন্টে জানালে আমরা সবাই নিজেদের আরো সমৃদ্ধ, আরো পরিণত করার
সুযোগ পাবো। আমি কোনো ধর্ম প্রচারক নই, আমার আলোচনার উদ্দেশ্য কারো ধর্ম বিশ্বাস,
অবিশ্বাসকে প্রভাবিত করা নয়। বরং আমাদের সামগ্রিক আচার, আচরণে ধর্মের প্রভাব বা
ধর্মীয় ব্যাখ্যার ভুমিকা বিশ্লেষণ করা।
এই ভিডিওতে জবাব পাবেন,
ধর্মের মৌলিক শিক্ষা কি, কোর বিউটি কি, সেটাই এই লেখার মূল বক্তব্য।
ধর্ম বিষয়ক কোনো বক্তব্য
আমরা বৈজ্ঞানিক না অবৈজ্ঞানিক হিসাবে নেবো এটা প্রাথমিকভাবে নির্ভর করে আমাদের
প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাস বা মানসিকতার উপর। সব মানুষের কাছেই এমনকি নাস্তিকদের
কাছেও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস বিজ্ঞানভিত্তিক সার্বজনিন সত্য। কিন্তু বিজ্ঞান মানে
যেটা আমরা বিশেষভাবে জানি। যে সম্পর্কে আমাদের কাছে প্রমান আছে। আর বিশ্বাস হচ্ছে,
যেটা জানিনা, কিন্তু বিশ্বাস করি।
যেমন, আপনার দুটো হাত আছে
এবং আপনি এটা জানেন। আপনি নিশ্চয়ই বলবেন না যে, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমার দুটি হাত
আছে’। কারণ, আপনি এটা জানেন। আল্লাহ, আসমানী কিতাব, পরকাল, ফেরেশতা, এসবকে কি
জানতে বলা হয়েছে, না বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে? বিশ্বাস। আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ
করতে হলে সেটা আল্লাহই সবচেয়ে ভালো করতে পারতেন। তিনি সরাসরি মানব জাতির উদ্দেশ্যে
ভাষণ দিতে পারতেন। যারা শ্রষ্টায় বিশ্বাস করেন না, সেই অবিস্বাসও কিন্তু বিশ্বাস,
বিজ্ঞান নয়।
“Absence of evidence is
not the evidence of absence”!
আমেরিকা আবিস্ক্বরের আগেও
আমেরিকা হিলো। শুধু তখনকার মূলধারার বিশ্ব জানতো না।
এখন ধর্ম কেনো বিশ্বাস
ভিত্তিক, প্রমাণ বা বিজ্ঞান ভিত্তিক নয়? কারণ, “Faith is a stronger than fact”,
“Myth is a stronger than History”, “Imagination is better than knowledge”. “সকল
দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি”। We know that, this is not fact. এটা আমার
বিশ্বাস, আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা। It’s faith. এই দেশের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসার
টানেই মানুষ জীবন বিলিয়ে দেয়। এই যুক্তি, প্রমাণ, বিচার, বিশ্লেষণের উর্ধে যে
ভালোবাসা তারচেয়ে শক্তিশালী আর কিছুই নাই। একই কারণে ধর্মকে যুক্তিতর্কের উর্ধে
রাখাই শ্রেয়। সবার ধর্ম বিশ্বাসকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শণ করতে হবে। পৃথিবীর সব
সভ্য দেশেই মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে বিনা বিতর্কে সম্মান করা হয়। কারণ, দিনশেষে
“লাকুম দ্বীনকুম ওয়ালিয়া দ্বীন”।
নিউইয়র্কে নামাজের সময়
মসজিদ এরিয়ায় ডবল পার্ক করে মানুষ নামাজ পড়ে। কোনো পার্কিং টিকেটও লাগে না। অন্য
সময় ডবল পার্ক করে চলে গেলে শুধু টিকেট না, গাড়িই টেনে নিয়ে যাবে।
আপনি আরেকজনের ধর্ম
বিশ্বাসকে সম্মান করলে বিপরীতে নিজের ধর্ম বিশ্বাসের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।
বিপরীতটাও সত্যি। যাইহোক, ধর্মীয় সত্যতা নির্ণয়ের মাপকাঠি এখন বিজ্ঞান বেশ জনপ্রিয়। এ বিজ্ঞান বলতে আসলে কি বোঝায়? এবং এসব তথাকথিত
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আসলে কতোখানি প্রয়োজনীয় বা প্রাসংগিক…? আমার পর্যবেক্ষণ বলছে,
এসব যুক্তিতর্ক ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ায়। প্রথমে কথা কাটকাটি, এরপর গালাগালি, তারপর
হাতাহাতি, কোপাকুপি – ব্যাস, ময়দান গরম হয়ে গেলো। আর কেউ একজন এসে বন্ধুক ধরিয়ে
দিয়ে বলবে, আহা, খালি হাতে কেনো?
হোলী আর্টিজানে যারা
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলা চালায়, এই হোলী আর্টিজানের ঘটনায়
কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে! আলেম ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, ধর্ম-কর্মে আগ্রহী,
সবাই কি পরিমান হয়রানীর শিকার হয়েছেন ভাবতে পারেন?
এই যে “রয়াডিক্যাল” ইসলাম
বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ট্র্যাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছে, মোদী দ্বিতীয়বারও
নির্বাচিত হয়েছে। সারা পৃথিবীতে হেট ক্রাইম বাড়ছে,- এসব হচ্ছে ধর্ম প্রচারে চরম
পন্থার কাউন্টার ইফেক্ট। ইসলামের নামে যারা টুইন টাওয়ারে হামলা করে তারা
মুসলমানদের জন্য কতোবড় সর্বনাশ ডেকে এনেছেন,ভাবতে পারেন? টুইন টাওয়ারে নিহতদের
প্রতিবছর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সাথেই স্মরণ করা হয়। কিন্তু টুইন টাওয়ার হামলার
কাউন্টার ইফেক্ট হিসাবে সারা দুনিয়ায় কতো মিলিয়ন মুসলমান নির্বিচারে মরে? আমেরিকায়
বসবাসরত মুসলমানরা কি অবর্ণনীয় পরিস্থিতির শিকার হয়।
জনৈক ব্যাক্তি রোজার
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিলেন যে, জাপানের বিজ্ঞানীরা উপোস থাকা বা অটোফ্যাজি নিয়ে
গবেষনা করেছেন। উপোস থাকলে পাকস্থলির শক্তি বাড়ে, ক্যান্সারের ঝুকি কমে, ইত্যাদি,
ইত্যাদি। এসব ব্যাখ্যা ফেসবুকে ভাইরাল। কিন্তু এসব ত অটোফ্যাজির ফজিলত, রোজার
ফজিলত নয়। উপোস থাকা আর রোজ এক নয় জনাব। আমি সকাল ১০টা রাত ১০টা পর্যন্ত উপোস
থাকলে অটফ্যাজি হবে, রোজা কি হবে? কিংবা রমজানের পরিবর্তে রবিউল আউয়াল মাসে রোজা
রাখলে কি ফরজ আদায় হবে? শেষ পর্যন্ত আপনাকে আসল জায়গায়ই আসতে হবে। আমার গন্তব্য
যখন নির্ধারিত যে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবো, তো সোজা রাস্তা ধরি। খামাখা দিল্লী,
আগ্রা, কাঠমুন্ডু ঘুর যাওয়ার মানে কি? যাদের ধর্ম বিশ্বাসে লিকেজ আছে, হাওয়া থাকে
না, তাদের এসব অখাদ্য যুক্তির দরকার হয়। এসব আপনাকে তর্ক করার রসদ জোগাবে, ভালো
বিতার্কিক বানাবে। যুক্তি ফুরিয়ে গেলেও গালিগালাজ, ছুরি, চাপাতি ব্যবহার করে হলেও
আপনি জিতবেন।
ইসলাম ধর্মের একজন ছাত্র
হিসাবে আমার মূল্যায়ন এ তর্কবাগিশরা হচ্ছে আউল-বাউল লালনের দেশে মাইকেল জ্যাকশন।
মি ব্যাক্তিগতভাবে অনেক বিজ্ঞ আলেম গবেষককে চিনি যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল
হওয়ার কৌশল না জানার কারণে কিংবা এসবে ব্যক্তিগত অনাগ্রহের কারণে টেলিভিশন,
ফেসবুক, ইউটিউবে জনপ্রিয় না হলেও সত্যিকারের ধর্মীয় জ্ঞান অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কিন্তু
তথাকথিত ধর্মবেত্তা এসব এট্টেনশন ইঞ্জিনিয়ারদের কারণে প্রকৃত আলেমদের খুঁজে পাওয়া
এবং ধর্মের যে মূল সৌন্দর্য তা অনুধাবন কর হয় না। খোদ মার্কিন যুক্ত্ররাস্ট্রে
যেখানে পপুলার এবং বেষ্ট সেলিং কবি আল্লামা জালালুদ্দিন রুমী। যেখানে পৃথিবীর
ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ১০০ বইয়ের তালিকায় আছে আল্লামা শেখ সাদীর ‘বোঁস্তা’,
সেখানে আমরা দলবেঁধে ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ পড়ি। ইমাম গাজ্জালী, ইবনে খালদুন,
ইবনে রুশদ, এদের চিন্তা দর্শনে আমাদের পোষায় না। আর কোরান তো জাস্ট মুখস্থ করার
জন্য।
এসব অপ্রাসংগিক যুক্তি,
প্রমাণ আমাদের যে কারণে দরকার, তা হচ্ছে আমাদের ধর্ম বিশ্বাস এখন শুধু অনুভুতি
সর্বস্ব। আমরা যারা ধর্মের আগে পিচে নাই, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, সীরাতের কোনো খবর
নাই, তারাই অনুভুতির পাল তুলে বসে আছি। কেউ কিছু বললেই সেটা নিজ দায়িত্বে
অনুভুতিতে লাগাতে হবে। আমাদের এখন শ্রষ্টায় বিশ্বাস বা কোরান অনুসরণের চেয়ে নবীর
অবমাননাকারী, কোরান অসম্মানকারী অমুসলিম বা ধর্ম বিদ্বেসী বর্নবাদী নাস্তিকদের
সাথে অশ্লীল, অস্রাব্য তর্কের লড়াইয়ে জেতা জরুরী। গালিগালাজের প্রতযোগিতায়
চ্যাম্পিয়ন হওয়া চাই। শুয়োরের সাথে কুস্তি লড়তে গিয়ে আমাদের ময়লায় নেমে পড়তে হবে।
নিজের গায়ের গন্ধে যেন শুয়োর পালায় সে কৌশল নিতে হবে।
যুগে যুগে দেশে দেশে যারা
ধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা চরম আত্মত্যাগ, পরম ধৈর্য, আর সর্বত্তম আচরণ
দ্বারা মানুষকে ধর্মে আকৃষ্ট করেছেন। “আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যে বা আমি বাঁধি তার
ঘর, আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর”।
কিন্তু ধর্ম প্রতিষ্ঠার পর
কিছু সুবিধাভোগী ধর্ম ব্যবসায়ী ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মের আড়ালে নিজেদের
স্বার্থ হাসিলে অত্যাচারী, বিলাসী ‘রাজা’ হয়ে ওঠে। তখনই সম্রাজ্য পতনের মতো মানুষ
ধর্মবিমুখ হতে শুরু করে। যারা লাইনে লাইনে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে এই হবে না,
ওই হবে না বলছেন, তারা কি মুসলিমরা যে দেশে সংখ্যালঘু তাদের কথা একবারও ভাবেন?
চীন, ভারত, আমেরিকা, ইউরোপে তো মুসলমানরা সংখ্যালঘু।
কয়েকজনের কথা জানলাম
আমেরিকায় বসেই ফসবুকের মাধ্যমে দেশে ইসলাম কায়েম করে, বিধর্মীদের কাছ থেকে জিজিয়া
কর আদায় করে। এমন একজনকে বলা হলো, এখানে তো মুসলিমরা সংখ্যালঘু। তো এরা যদি
মুসলমানদের কাছে জিজিয়া কর দাবি করে? বলে, “নাহ, এটাতো মানবাধিকারের দেশ”!
দেখুন, আমরা ধার্মিক, কারণ
তাতে সবদিক থেকেই আমাদের স্বার্থ রক্ষা হয়। ধর্মের নামে যেসব বর্বরতা, নিষ্ঠূরতা
আমরা দেখি, এদেরকে ধার্মিক বললে কেনো মানুষ ধর্মে অনাগ্রহী হবে না? মসজিদ ভাংগে
ধার্মিকেরা, মন্দির ভাংগে ধার্মিকেরা, তবুও তারা দাবি করে তারা ধার্মিক। ফেসবুকে
আস্তিক নাস্তিক বিতর্কের যেসব গ্রুপ আছে সেখানে মস্তবড় সব কুস্তিগীরদের কমেন্ট পড়ে
নিজেকে একটু জিজ্ঞেস করুন, এসব কি একজন ধার্মিকের ভাষা হতে পারে?
আপনি আরেকজনের ধর্মকে গালি
দিচ্ছেন, তো সে গালি জানে না? নাস্তিকের তো কোনো ধর্ম নাই, ধর্মগ্রন্থ নাই, নবী বা
আদর্শ নাই। কিন্তু আমি আমার ধর্ম থেকে কি শিখলাম? প্রতিটা ধর্মের, এমনকি
ধর্মনিরপেক্ষতার মৌলিক শিক্ষা প্রায় একই। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্ম অবমাননা নয়।
কিন্তু মন্দ লোকগুলোই এখন
ধর্মের মালিকা বা প্রতিনিধি সেজে ধর্মের নামে বা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে অসহিষ্ণুতা,
সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিহিংসা ছড়াচ্ছে।
মর্গ্যান ফ্রিম্যান খুব
চমৎকার বলেছেন, “There is no bad religion, there are only bad people”
কোনো অসভ্য ধার্মিক,
অধার্মিকের সাথে লড়তে গেলে আপনাকে তো আরো বেশি অসভ্য হতে হবে। Please simply ignor
them. এরা কোনো ধর্ম বা মতবাদের প্রতিনিধি নয়।
শেখ সাদী (রঃ) এর কবিতা
নিশ্চয়ই মনে আছে। “কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তা বলে কুকুরে
কামড়ানো কিরে মানুষের শোভা পায়”?
আমাদের কি আদৌ এসব
বিতর্কের প্রয়োজন আছে? এসব বিতর্কের আউটকাম কি? এসব বিতর্কে জড়িয়ে আমরা বিরোধী
মতকে প্রমোট করছি। একজন অখ্যত হিন্দু মহিলা ট্র্যাম্পের কাছে গিয়ে কি বলেছে, সেটা
হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটে গিয়ে আমাদের কতোজন দেখেছেন বা দেখতেন, শখানেক। ইউরোপ
আমেরিকায় যারা সে ভিডিও দেখলে দেশের ভাবমূর্তি ধংশ হয়ে যেতো, তাদের কতোজন
বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড মনে করেন, বা কতোজন তার এই ইংরেজি বুঝতো, বা তার সে
বক্তব্যকে আমলে নিতো? কিন্তু তার সে বক্তব্য অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে সকলের কাছে
পৌঁছে দেয়ার ইমানী দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। সমালচনার নামে আমরা নেগটিভিটি প্রমোট করি।
এজন্যেই বলা হয়, “বোকা বন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমান শত্রু উত্তম”।
শেরে বাংলা ফজলুল হক একবার
বক্তৃতা করার সময় শ্রোতাদের মধ্য থেকে কেউ তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছুঁড়ে মারলে, উনি
তাৎক্ষণিক বলা শুরু করলেন, “আমি আজ সত্যি খুব আনন্দিত, গর্বিত যে, একজন মানুষকে
অপমান করতে হলে যে তাকে ডিম মারতে হয়, এটুকু অন্ততঃ আমার বাংগালি বুঝেছে।
ফিজিক্স, কেমিষ্ট্রি, মহাকাশ
বিজ্ঞান, ডারউইন, কোপারনিকাস ছেড়ে নিজেদেরকে আমরা বেশ জ্ঞানী প্রমাণ করতে গিয়ে
আমরা নিজেদেরকে মুর্খ প্রমাণ করছি।
আগেই বলেছি, বিজ্ঞান মানে
বিশেষ জ্ঞান, আর বিশেষজ্ঞ মানে কোনো একটা বিশেষ বিষয়ে যিনি বিজ্ঞ বা যার
গবেষণালব্ধ জ্ঞান আছে। ধর্মকে যখন বিশেষভাবে অধ্যায়ন করা হয় তখন সেটাও বিজ্ঞান।
বিজ্ঞানের বিপরীতার্থক শব্দ কি হতে পারে? খুব সম্ভবত মিথ বা সুনির্দিষ্ট তথ্য
প্রমাণহীন লোকগাঁথা। কিন্তু এই মিথ নিয়ে যখন গবেষণা করা হয় তখন আবার তা মিথলজী।
এখন, একজন মানুষ তো
দুনিয়ার সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে পারে ন। আপনি সবার থিওরী ভুল প্রমাণ করেন বা
নাস্তিকরা এসব থিওরীর আলোকে ধর্মকে ভুল প্রমাণ করে। তো আপনার ডিসিপ্লিন কোনটা?
কিন্তু এসব থিওরী ভুল প্রমাণ করার কি দায় আমার? আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ এই
বিশ্বব্রহ্মান্ডের শ্রষ্টা, আর কোরান তার বাণী। আবার ডারউইনের এক কথায় আমার
ডায়েরিয়া শুরু হয়ে যায়। আমাকে ডাক্তার সাহেবের কাছে দৌড়াতে হয়। তো এ আবার কেমন
বিশ্বাস!
ডারউইন ছিলেন একজন
বায়োলজিষ্ট। তিনি প্রাণের বিবর্তণ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার সমসাময়িককালে এবং
পরবর্তিতে আরো অনেকেই এ বিষয়ে গবেষণা করেন। রাসেল ওয়ালেসও একই সময়ে একই সিদ্ধান্তে
পৌছেন। একই আথে তাদের দুইজনের বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু ডারউইন গে থেকেই বেশ বিখ্যাত
ছিলেন, তার ফ্যান, ফলোয়ার, সাবস্ক্রাইবার বেশি ছিলো। তাই ডারউইন পাইওনিয়ার হিসাবে
পরিচিতি পায়। কিন্তু রাসেল ওয়ালেস শুধু আস্তিকই ছিলেন না, বেশ ধার্মিকও ছিলেন।
আমেরিকারা বড় বড় চার্চ,
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটর ধর্মতত্বের অধ্যাপকরা ডারউইনের তত্বকে বাইবেলের সাথে
সাংগর্ষিক বলেনি। বরং অনেক ধর্মতাত্বিক ডারউইনের তত্বকে স্বাগত জানিয়েছে যে,
বিবর্তনের যে প্রক্রিয়া ডারউইন ব্যাখ্যা করেছেন “This is the natural way, how god
creates live”.
কিন্তু পরবর্তিতে থমাস
হাক্সলি বানরের বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের আকৃতির যে ক্যারিকেচার তৈরি করেন, তা
হয়ে যায় বিবর্তণবাদের প্রতীক। আর ডারউইনিজম মানে দাড়ালো, মানুষ বানর ছিলো।
ধরেন, ডারউইন বলেছে,
“দাদখানি চাল, মশুরের
ডাল, চিনিপাতা দই।
দুটি পাকা বেল, সরিষার তেল,
ডিম ভরা কৈ”।
কিন্তু এটা ডাক্তার,
মোক্তার, কবিরাজ, ইউটিউব মুহাদ্দেস, বা ফেসবুকারবার্গ – বিভিন্নজনের তরজমা,
তাফসিরের মধ্য দিয়ে যখন আম পাবলিকের কাছে পৌঁছায়, তখন এটা হয়ে গেলোঃ
“দাদখানি বেল, মশুরীর
তেল, সরিষার কৈ।
চিনিপাতা চাল, দুটি পাকা
ডাল, ডিমভরা দৈ”।
কারণ, আমি ডারউইনিজমের
কিছু বুঝেছি, কিছু উলটা বুঝেছি। কিছু বুঝি নাই, কিছু কি যে বুঝিনাই – তাও বুঝিনাই।
এবার আমি এ তত্ব ব্যাখ্যা করতে গেলে পাঠকদের অবস্থা কি হবে?
উইকিপিডিয়ায় দুইলাইন পড়ে
একটু ইলেট্রন, প্রোটন বলতে পারলেই আমি পদার্থবিদ নই, এটা যতো তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবো
ততোই তা আমাদের জন্য উত্তম।
কট্টর খৃষ্টানরা হঠাৎ করে
বিবর্তণবাদকে বাইবেলের বিরোধী বলে দাবি তোলে। আমেরিকায়ও এই বিবর্তণবাদ পাঠ্যবইয়ে
অন্ত্ররভূক্ত করতে আদালতের হস্তক্ষেপ দরকার হয়েছিলো। আবার যারা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক
তত্বের ভিত্তিতে ধর্মকে চ্যালেঞ্জ করেন তাদের জন্য সোজা উত্তর।
ডারউইন যাইই বলেছে তা তার
জন্য এবং সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের যারা ছাত্র, শিক্ষক বা গবেষক তাদের জন্য বিজ্ঞান,
কারণ সে বিষয়ে তাদের বিস্তর গবেষণালব্ধ বিশেষ জ্ঞান আছে। কিন্তু আমার জন্য তো তা
বিজ্ঞান নয়। কারণ সে বিষোয়ে বিশেষ জ্ঞান তো দূরে থাকুক, কোনো জ্ঞানই তো আমার নাই।
আচ্ছা বহুত চেষ্টা তদবির
করে নাহয় বিবর্তনবাদ বুঝলাম। কালকে আবার আরেক বিজ্ঞানী আবর্তনবাদের থিওরী দেবে।
তা, আমি মানুষ একজন, কয়টা বুঝবো?
এখন কোনো ব্যক্তিগত বিচার
বিশ্লেষণ ছাড়া নাসা, হকিংস, ডারউইন, কোপারনিকাসের নিঃশর্ত বিশ্বাস স্থাপন কি
বৈজ্ঞানিক? আমাদের আম জনতার জন্য এসব বৈজ্ঞানিক তত্বে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসও তো
হাওয়ার উপরেই বিশ্বাস। আমরা এসব বড় বড় বিজ্ঞানীদের তত্ব নির্দিধায় বিশ্বাস করি,
কারণ এখন বিজ্ঞানের পাল্লা ভারি। এদিকে হাওয়া বেশ জোড়ালো।
মেডিকেল সাইন্স তো
নির্ভেজাল বিজ্ঞান। কিন্তু সে বিজ্ঞানের আমি আপনি কি বুঝি? আমরা যে ডাক্তার
হাসপাতালের নামডাক শুনি সেখানেই ছুটে যাই। ডাক্তার কি পরীক্ষা নিরীক্ষা করলো, কি
ওষুধ দিলো, কেনো দিলো তার আমি কি বুঝবো? ডাক্তার বিষ প্রেস্ক্রাইব করলে তো আমি বিষ
খেয়ে মারা যাবো।
সুওতরাং ডাক্তারকে
বিশ্বাস করা আমার জন্য, জ্যোতিষিকে বিশ্বাস করার মতোই। কারণ আমি অন্ধ। আমার তো
দিনরাত সবই সমান। বিজ্ঞান, অজ্ঞান আমার কাছে একই। আশেপাশের ১০ জন যদি বলে এটা
ফুলবাগান, আমিও বলবো বাহ, কি সুগন্ধ।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির
সামাজিক মনোবিজ্ঞানী সলোমন আসচ মানুষের কোনোকিছু বিশ্বাস করার প্রক্রিয়া নিয়ে ১৯৫২
সালে তার বিখ্যাত কনফার্মিটি এক্সপেরিমেন্ট চালান। তিনি বেশকিছু মানুষকে একটা
হলরুমে আমন্ত্রণ জানালেন এবং কটা বোর্ডে লম্বালম্বি কয়েকটা রেখা আঁকলেন, যাতে ১ ও
৩ নং রেখা বেশ স্পষ্টতই সমান। বকিগুলো পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিলো অসমান। ইন্টারেষ্টিং
বিষয় হচ্ছে, ওই হলরুমে বেশিরভাগ অতিথি ছিলো পেইড এয়াক্টর বা ট্রেইন্ড বলেন্টিয়ার।
এবার সলোমন আয়াসচ পেইড একটরদের এক এক করে জিজ্ঞেস করলেন, কোন দুটি রেখা সমান। তারা
যথারীতি ভুল উত্তর দেয়। যেমন, ৩ এবং ৫ সমান। যদিও পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিলো, ৩ এবং ৫
নং রেখা মোটেও সমান নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে হলে বাকি যে কয়জন নতুন অতিথি ছিলেন
তারাও বেশ কনফিডেন্টলি ভুল উত্তর দেয়।
সুতরাং আমাদের চারপাশের
পেইড আনপেইড একটররা যেটাকে বিজ্ঞান বলবে, আমার কাছে সেটাই বিজ্ঞান। দিনশেষে আমরা
বেশিরভাগ কিছুই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসই করছি।
আমরা অনেকেই ভুতে বিশ্বাস
করি না। তবে সেটা দিনের বেলায়। আপনাকে যদি অন্ধকার রাতে কবরস্থান কিংবা শ্মশান,
এমন নির্জন স্থানে রেখে আসা হয়, তখন দেখবেন আপনার বেশ জোরেশোরেই বিশ্বাস হয়।
আমার এক বন্ধু অক্সফোর্ড
ইউনিভার্সিটিতে পপুলেশন এজিং নিয়ে গবেষণা করছে তার পিএইচডির অংশ হিসাবে। তার
ফেসবুক স্ট্যাটাসে কিছুদিন আগে পপুলার সাইন্স সম্পর্কে লেখে। অক্সফোর্ড সহ পৃথিবীর
বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটিতেই পপুলার সাইন্স এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। পপুলার সাইন্স হচ্ছে
বিজ্ঞানের জটিল তত্বগুলো সহজ সরল উদাহরণ দিয়ে সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে উপস্থাপন
করা।
আইনস্টাইন, নিউটন, হকিংস,
ডারউইন, এসব সেলিব্রেটি সাইন্টিষ্টরা নিজেদের ডিসিপ্লিনের বাইরে পপুলার
সাইন্টিস্টও ছিলেন। তারা বিজ্ঞানের জটিল তত্বগুলোকে সহজবোধ্য করে তা সাধারণের
মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন। এ সহজ করাটা কিন্তু মোটেও সহজ নয়।
রবীন্দ্রনাথকে একবার তার
শিশ্যরা সহজ করে লিখতে বললে কবি গুরু বললেন, “সহজ কথা বলতে আমায় কহো যে, সহজ কথা
যায় না বলা সহজে। “The most omplicated skill is very simple”.
পৃথিবীর সব
বিশ্ববিদ্যালয়েই ধর্ম বিষয়ক একাধিক বিভাগ আছে। ধর্ম নিয়ে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও
আছে, যেখানে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আছেন। দক্টরাল, পোষ্ট ডক্টরাল গবষক আছেন। মংগল গ্রহ
নিয়ে যারা গবেষণা করেন শুধু তারাই বিজ্ঞানী নয়। ফহর্ম নিয়ে যারা গবষণা করে তারাও
বিজ্ঞানী।
এবার সত্যিকারের
ধর্মবেত্তাদের, ধর্ম বিশারদদের পপুলার সাইন্সে মনোযোগ দিতে হবে। অপ্রয়োজনীয়,
অপ্রাসংগিক, গুরুত্বহীন বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে ধর্মের মৌলিক শিক্ষা সাধারণ মানুষের
জন্য সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করা সময়ের দাবি। লিষ্ট ইম্পর্ট্যান্ট এজেন্ডাগুলো টপ
প্রায়োরিটি লিষ্টে থাকলে মোষ্ট ইম্পর্ট্যান্ট এজেন্ডা আলোওনার বাইরে চলে যাবে।
আগেই বলেছি এই সহজ করাটা
সহজ নয়। টেলিভিশনে বিভিন্ন ইসলসামী অনুষ্ঠানে যারা বিখ্যাত আলোচক ওয়ায়েজীন আছেন,
অনেকের সাথেই আমার ব্যক্তিগত সখ্যতা আছে। অনেকেই একমত যে, আমরা অতি নগন্য বিষয়গুলো
নিয়েই বেশি সময় নষ্ট করছি। কিন্তু কিছু করার নাই। দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী বাদ দিলে
আমার ওয়াজ আর কেউ শুনবে না। আমার পিছনে কেউ নামাজ পড়বে না।
প্রশ্নোত্তর পর্বে মানুষ
আরো গুরুত্বহীন প্রশ্ন করে। যেমন; চামচ দিয়ে খাওয়া যাবে কিনা? গরম পানি দিয়ে গোসল
কর শরীয় সম্মত কিনা? এসব উত্তর না দিলে তো আমার ইমামতীই থাকে না। বলবে, ‘হুজুর
কিছু জানেনা। কিন্তু এগুলো নেহায়েতই কমন সেন্স। আপনি হাত দিয়ে, চামচ দিয়ে, টগবি
দিয়ে যেমনে খুশি অমনে খান। এগুলো কি আল্লাহ ঠিক করে দেবে নাকি!
কবি নির্মলেন্দু গুণকে
একবার পুলিশ চেকপোষ্টে থামায়। তো পুলিশ ওনাকে চিনতে পারে নাই। একজন হঠাৎ বলে উঠলো,
‘এই তোমার মৌছ এতো বড় কেনো? তো কবি হেসে বললেন, ‘কার মৌছ কতোবড় হবে, এটাও কি সরকার
ঠিক করে দেবে?
একইভাবে, আমি ঠান্ডা পানি
দিয়ে গোসল করবো নাকি গরম পানি দিয়ে গোসল করবো, এটাও আল্লাহর ঠিক করে দিতে হবে,
আমার আক্কেল নাই?
দেখুন, আমি ওয়াজও করিনা,
ইমামতীও করিনা। তাই আমি যতো সহজে একথাগুলো বলতে পারি, অন্যান্যরা চাইলেও সেটা পারেন
না।
আমর কোনো কোম্পানির
এসিভিকে সাধারণতঃ জীপ বলি। কারণ জীপ এসিভি ছাড়া অন্য কোনো ধরণের গাড়ি বানায় না।
এটাই ব্রয়ান্ডিং। আর একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান বলতে আমরা কি বুঝি? ‘তিনি জীবন
মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও নামাজ ক্বাজা করবেন না, যতো দীর্ঘ, যতো গরমের দিনই হোক- রোজ ভাংবেন
না, লাখ টাকা দিলেও শুকরের মাংস, মদ বা সূদ খাবেন না, সামর্থ থাকলে একাধিকবার
হজ্জ্ব করবেন, ওমরাহ করবন, রাত জেগে তসবী, তাহলীল, করান তেলায়াত করবেন। দাড়ি,
টুপি, পাঞ্জাবী, হিজাব তো অবশ্যই। মসজিদের জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন’। হ্যাঁ,
অসংখ্য ধর্মপ্রাণ ম্নুষ আছ যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই লোকচক্ষুর
অন্তরালেই এসব করেন।
কিন্তু আমাদের
নামাজ, রোজায়, পোষাক, পর্দায় অন্য আরেকজন মানুষের উল্লেখযোগ্য কিছুই যায় আসে না।
এগুলো হচ্ছে মূলতঃ আত্ন উন্নয়নের রেসিপি, আত্ন নিয়ন্ত্রণের ফর্মুলা। “Process to
purify oneself”. কিন্তু দিনশেষে আমরা দেখতে চাই, আউটকাম কি? আপনার বিরিয়ানী যদি
মুখেই দেয়া না যায়, তো আপনি কেকা ফেরদৌসি হলেও কারো কিছু যায় আসে না।
Now imagine a different
image. যে, একজন মুসলমান মাত্রই সে জীবন্মৃত্যুর মাঝখানেও মিথ্যা কথা বলে না, না
খেয়ে মারা গেলেও চুরি করে না, প্রতারণা করে না, আমানতের খেয়ানত করে না। কোনো
অবস্থাতেই প্রতশ্রুতি ভংগ করে না, মানুষের অনুপস্থিতিতে তার দোষত্রুটি নিয়ে কথা
বলে না, কারো নামে মিথ্যাচার করে না, কথায়, আচরণে কাউকে কষ্ট দেয় না, কারো সাথে
দুর্ব্যবহার করে না, চাকরিতে, পেশায় কোনো অসদুপায় অবলম্বন করে না, ব্যবসায় অনিয়ম
করে না। অহংকার, হিংসা, লোভমুক্ত। যা আছে তাতেই সন্তষ্ট। অসহায় বিপদ্গ্রস্থ কেউ
কোনো মুসলমানের কাছে গেলে খালি হতে ফিরবে না। চরম শত্রুরও অমংগল কামনা করে না।
জ্বী হ্যাঁ এসবই ধর্মের
মৌলিক শিক্ষা। এটাই একজন প্রকৃত মুসলমানের বৈশিষ্ট। এই বৈশিষ্ট না থাকলে যতোবড়
মসজিদের পেশ ইমামই হোক, সে গুলিস্তানের নকল আইফোনের মতোই ফেক মুসলমান। তারে
মুসলমান মনে করছেন তো ঠকছেন।
বলেন এসব যদি হয় সকল
মুসলমানের চরিত্র বৈশিষ্ট ব ধর্ম, তাহলে কি ইসলাম ধর্ম আপনাকে প্রচার করতে হবে?
না, রোলস রয়েসের বিজ্ঞাপন দেয়া লাগেনা। বিজ্ঞাপন দেয়া লাগে ফেয়ার এন্ড লাভলীর।
কারণ, এটা কোনো কাজ করে ন। Believe me, I tried that shit.
মুসলমানরা যদি সত্যি
সত্যি মুসলম্ন হতো, তবে কোনো মুসলিম দেশে থানা, পুলিশ, কোর্ট-কাছারী কিছুই লাগতো
না। সেদেশের জিডিপি জি আইপি যাই হোক, সে দেশ পৃথিবীর স্বর্গ।
“প্রীতি ও প্রেমের পূর্ণ
বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দঁড়ায়
তখনই আমাদেরই কুঁড়েঘরে”।
আমার একটি ভিডিওতে একজন
কমেন্ট করেছেন যে, একবিংশ শতাব্দিতে ধর্মের প্রয়োজন নাই। With all due respect, I
beg to deffer”. ধর্মের চেয়ে শক্তিশালী আর কি আছে?
রোজায় একজন মুসলমান
ক্ষুদায়, তৃষ্ণায় কাহিল, তবুও একটু খাবার বা পানি খাচ্ছে না যে, কেউ না দেখলেও
আল্লাহ দেখছেন।
স্বর্গের আশায় মানুষ
আত্মঘাতী হামলা চালায়। নিজে মরছে, নিরীহ, নিরপরাধ মানুষ মারছে, নিজের
পরিবার-পরিজনদের আজীবনের জন্য অপরাধী বানিয়ে যাচ্ছে। কারণ, কেউ না কেউ তাকে বোঝতে
পেরেছে যে, এটাই ধর্ম! স্বর্গ লাভের সহজ পথ।
এবার আই মানুষটাকে যদি
বোঝানো যায় যে, তুমি মিথ্যা বললে, চুরি করলে, গীবত করলে,- হিংসা, দম্ভ, প্রতারণা
করলে আর কেউ না জানলেও আল্লাহ তো জানবে। তুমি নিশ্চিত নরকে যাবে। তাকে যদি বুঝিয়ে
দেয়া যায় যে; “ধুসর মরুর উষর বুকে বিরাট যদি শহর গড়ো, একটি জীবন রক্ষা করা তার
চেয়েও অনেক বড়”।
সব ধর্মাবলম্বীদের বেলায়ই
একথাগুলো প্রযোজ্য। আমি অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানিনা বিধায় ইসলাম
ধর্মের উদাহরণ দিচ্ছি। এভাবেই ধর্মের সঠিক করণীয়, বর্জনীয় বিষয়গুলো একজন মানুষের
মধ্যে ‘ইন্সটল’ করে দিতে পারলে সে মানুষটা তো কোহিনুরের চেয়েও দামি। কোনো পুলিশ,
গোয়েন্দা, সিসি ক্যামেরা ছাড়াই সে ভালো কাজ করে। কেউ না দেখলেও সে মন্দ কাজ করে
না। কারণ শ্রষ্টা তো দেখছেন।
আমেরিকাকে বলা হয়
“ল্যান্ড অব ল”। এটা সেখনে খুব ভালো ভালো আইন সে কারণে নয়। বরং এখনে মানুষ আইন
মেনে চলে। এ আইন মেনে চলায়ই সবাই অভ্যস্ত। এটা সব সময় বন্দুকের ভয়ে নয়। বরং ওই যে
সলোমন আসচের কফার্মেটিভ থিওরী, সবাই আইন মেনে চলে তাই আমিও মানি। আবার কেউ মানেনা
তো আমিও মানিনা। বিভিন্নভাবে নাগরিক সচেতনতা তৈরি করা হয়, আইন মেনে অলায় উদ্বুদ্ধ
করা হয়। ৯০ শতাংশ মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বকি ১০ শতাংশের জন্য পর্যাপ্ত
পুলিশি ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ৯০ শতাংশ আমেরিকান যদি প্রবল হয় যে, আইন মানবো না,
তাহলে পুরো আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভেংগে পড়বে।
সুতরাং কেউ যদি মনে কর যে
ধর্মের আর কোনো দরকার নাই, তাহলে তিনি ধর্ম বলতে দাড়ি, টুপি বা শাঁখা, সিঁদুর
বুঝেছেন, গরু বা উঁটের মুত খওয়াকে বুঝেছেন এবং এ দায় আমাদের ধর্মগুরুদের উপরেই
বর্তায়।
আমাদের নামাজ, রোজায় যদি
আমাদের আচরণে, অভ্যাসে কোনো উন্নতি না আসে, তবে এই নামাজ রোজার কোনো মূল্যই
আল্লাহর কাছে নাই। নিশ্চই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে।
সুতরাং যার নামাজ তাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে ফিরাতে পারে না তার নামাজ নামাজই
না।
আমি বেশ কঞ্জার্ভেটিভ
মাদ্রসায় পড়েছি, যেখানে নামাজ না পড়লে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলতো। মাইরের হাত থেকে
বাঁচার জন্য আমরা অবশ্যই মিথ্যা বলতাম। কিন্তু দোষী সাবাস্ত হওয়ার পর শাস্তি পেতাম
নামাজ না পড়ার জন্য, মিথ্যা বলার জন্য নয়। তো আমি কি শিখলাম? টেলিভিশন দেখা গোনাহ,
কিন্তু মিথ্যা বলা কোনো গোনাহর কাজ না!
বিল ক্লিন্টনকে
ইম্পিচমেন্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো মিথ্যা বলার জন্য, মণিকার সাথে যৌনসম্পর্কের
জন্য নয়।
আমি ১৯৯৭ সালে মাদ্রাসা
বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিক সমমানের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেই। আমাদের ব্যাচে সারা
বাংলাদেশে যতোজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রায় সবার জন্মতারিখ
০১-০৩-১৯৮৩। কিভাবে সম্ভব! এই তারিখ থেকে হিসাব করলে মেট্রিক পরীক্ষার ন্যুনতম বয়স
হয়। কিন্তু এটাতো আমার জন্মতারিখ না। সারাজীবনে কতোবার জন্মতারিখ বলার সময়, লেখার সময়
আমাদের মিথ্যা বলতে হয়েছে বা হচ্ছে। এই মিথ্যার উপর ভিত্তি করে চাকরি নিচ্ছি,
ইমিগ্রেশন সুবিধা নিচ্ছি, এটা কি নৈতিক? এ মিথ্যা জন্মতারিখ দেয়া পাসপোর্ট নিয়ে
হজ্জ্বে যাচ্ছি। এতো বড় বড় মাদ্রাসার এতো বড় বড় আলেমদের মাথায়ই এটা আসেনি। যে
মুসলমান প্রাণ বাঁচাতেও “জয় শ্রীরাম” বলবে না, সে মুসুলমান অবলীলায় মিথ্যা কথা
বলে।
রেজিস্ট্রেশনের সময়
অনেকের নাম পরিবর্তণ করে দেয় মাদ্রাসা কতৃপক্ষ যে, তোমার হিন্দু নাম! নামের আবার
হিন্দু মুসলমান কি? আব্দুল্লাহ, আমেনা, খাদিজা, আবু বক্কর, উমর, ওসমান, আলী(রাঃ) –
ওনাদের এ নামগুলো তো ইসলাম গ্রহণের আগে থেকেই। ইদসলাম গ্রহণের পর কারোরই নাম পরিবর্তণ
হয়নি। সুতরাং বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা।
আমি জানি, এই মর্মে আপনি
কয়েকটা হাদীসের স্ক্রিনশট দিতে পারবেন। কিন্তু ওই যে বললাম, প্র্যোরিটি এবং
পরিনিতি। খাবারে লবন দিতে হবে, কিন্তু ১ কেজি মাংসে ৩ কেজি লবন দিলে তো খাবারটাই
বরবাদ।
আত্মোন্নয়নের জন্য এখন
সারাবিশ্বে মানুষ মেডিটেশন বা ধ্যানযোগে “Law of attraction” চর্চা করে। এখানে খুব
সেন্সিটিভ বিষয় হচ্ছে আপনি কি আউটকাম অর্জন করছেন, পজিটিভ না নেগেটিভ? নিজের মধ্যে
যে রকম পরিবর্তণ চাইবেন তাই স্থায়ী হবে। একারণেই আগে ইতিবাচক পরিবর্তণের
লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। নইলে নেগেটিভটাই স্থায়ী হবে।
নামাজে দাঁড়ানোর
উদ্দেশ্যই যদি হয় লোক দেখানো বা লোক ঠকানো, তবে ঠকবাজীই তার চরিত্রে পারমানেন্ট
হবে। লম্বা দাড়ি, টুপির পারপাস যদি হয় পকেট ভারি করা, তবে এই প্রতারণা বা ভন্ডামী
থেকে সে আর বেরুতে পারবেনা।
আলেম ওলামাদের প্রধান কাজ
হওয়া উচিৎ, এই আউটকাম কি হবে তার উপরে জোর দেয়া। রমজানে কোন দোয়া পড়লে কতো নেকী
হাসিল হবে, এরচেয়ে জরুরী এটা বোঝা যে, রোজাটা আসলে কেনো রাখছি। এই সংযমের উদ্দেশ্য
আসলে কি পরিবর্তণ আনা।
নবীজী নূরের তৈরি, না
মাটির তৈরি। রওজায় জীবিত, না মৃত এসব আল্লাহই ভালো জানেন। আমাদের তো এসব নিয়ে মাথা
ঘামানোর কোনো দরকারই নাই। নবীর সীরাতের শিক্ষা নিতে হবে।
কমান্ডো ইউনিফর্ম পরলেই
সে কমান্ডো নয়। নবীর পোষাক পরলেই সে নবীর উম্মত নয়। কারণ একই পোষাক নবীর দুশমনরাও
পরতেন। এই প্রায়োরিটি না বোঝার কারণেই আমরা গুরুত্বহীন বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি।
একজন হয়তো হুমহাম করে
বলবেন, আল্লাহ কোরনে ৮২বার নামাজের কথা বলেছে। দাড়ির কথা কোরানে নাই, কিন্তু
হাদীসে আছে। বুখারীতে নাই তো বায়হাকীতে আছে, ফাজায়েলে আমলে আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
হ্যাঁ ভাই, কিন্তু কোরানে
আরো ৬ হাজারেরও বেশি আয়াত আছে। অন্ধকে হাতী দেখানোর মতো সবাই যার যার সুবিধামতো
কোরানের ২০-২৫টা আয়াত, গোটা পঞ্চাশেক হাদীস, আর কিছু গল্পসল্প নিয়ে দোকান খুলে
বসেছে। এই দোকানদাররা কেউ আপনাকে হাতীর লেজ ধরিয়ে দিয়ে বলবে, ‘এই দেখেন, হাতী
হচ্ছে সাপের মতো’। কেউ কান ধরিয়ে দিয়ে বলবে, ‘হাতী হচ্ছে আসলে কুলার মতো’। আরেকজন
বলবে ধুর, ‘হাতী হচ্ছে গাছের মতো’ – এই বলে আপনার হাতীর পা ধরিয়ে দেবে।
কয়েকজন নাস্তিককেও দেখছি,
তাদের খদ্দেরের চাহিদানুযায়ী শ’খানেক আয়াত বা হাদীস জোগার করেছে। সেগুলকে নিজেদের
মতো পরিবেশন করছে। তারাও এখন ডাক্তার নায়েকের মতো সুরা নিসার অতো নম্বর আয়াত, আবু
দাউদ শরীফের অতো নম্বর হাদীস, এভাবে রেফারেন্স দিয়ে দিয়ে কথা বলে নিজেদের McBook
Pro প্রমাণ করতে চায়। সবাই নিজ নিজ দোকানে ভিড় বাড়ানোর চেষ্টায় আছে। আর দোকানে
দানবাক্স তো আছেই।
মানুষের দানের টাকায়
প্রাসাদোপম মসজিদ মন্দির তৈরি হয়। তাতে মানুষের অধিকারই উপেক্ষিত। স্বর্ণখচিত
স্বেতপাথরের মসজিদ বানাই আল্লাহকে খুশি করতে? আল্লাহ কি আমাদের এ স্বররণ আর
স্বেতপাথরের কাংগাল? বড় কোনো স্কলারকে জিজ্ঞেস করবেন, মসজিদের আসল পারপাস কি?
গুলশান এভেনিউয়ে হাজার কোটি টাকার প্রোপার্টিতে একটা মসজিদ কি শুধুই শুক্রুবারের
দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য? না। মসজিদে অসহায় মুসাফির যার হোটেলে থাকার সামর্থ নাই
সে রাতে ঘুমাবে। মসজিদে মানুষ দান করে, সে দানের টকায় অভুক্ত মানুষ খাবে। মসজিদের
টয়লেট সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। নামাজের সময়ের বাইরে মসজিদ হবে কমিউনিটি সেন্টার।
বয়স্ক শিক্ষা, শিশু শিক্ষা, পাবলিক লাইব্রেরী। এক কথায় যতোরকম ভ্লো কাজে এর
ব্যবহার করা যায়। অথচ মসজিদে বড় করে লেখা থাকে, ‘মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম।
নামাজের পর মসজিদে তালা লাগিয়ে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা হয়।
কাজী নজরুল ইসলাম ৭ দিন
না খাওয়া এক ভুখারীকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন, যাকে মসজিদ, মন্দির থেকে খাবার না দিয়ে
তাড়িয়ে দেয়া হয়। কারণ সে নামাজ পড়ে না, পুজা করে না, আল্লাহকে ডাকে না। কবির
বর্ণনায়ঃ
“ভুখারি ফিরিয়া
চলে, চলিতে চলিত বলে,
আশিটা বছর কেটে গেলো আমি
ডকিনি তোমায় কভু
আমার ক্ষুদার অন্ন তা বলে
বন্ধ করোনি প্রভু।
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু
নাই মানুষের দাবি
মোল্লা, পুরুত লাগায়েছে
তার সকল দূয়ারে চাবি”।
আল্লাহর ঘর আল্লাহর
সৃষ্টির সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। কিন্তু আমেরিকাতেও হানাফী, সালাফী, আহলে
হাদীস, লা-মাযহাবী সবার আলাদা আলাদা মসজিদ। হানাফী মসজিদে সালাফীদের প্রবেশ নিষেধ।
কবি তাই বলেছেনঃ
“খোদার ঘরে কে কপাট
লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা,
সব দ্বার এর খোলা রবে চালা
হাতুরী শাবল চালা”।
মানুষের যেমন মানুষ হতে
হয়, মুসলমানকে তেমন মুসলমান হতে হয়। নবীজী শিখিয়েছেন, কিভাবে সত্যিকারের মুসলমান
হতে হয়। অনন্য মানুষ হতে হয়। পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার তো “Some of the worst
crime”.
নবীজী বলেছেন যে, ৩ জন
মানুষ এক জায়গায় থাকলে ২ জন ফিশ ফিশ করে কোনো কথা বলবে না। কারণ তাতে তৃতীয়জন
বিব্রত হয়। নবীজীকে এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, মুসলমানদের মধ্যে শ্রেষ্ট মুসলমান
কে? যে মানুষের সাথে সর্বোত্তম আচরণ করে। মানুষের সাথে সর্বোত্তম আচরণ করাই
শ্রষ্টার সাথে সর্বোত্তম আচরণ।
আমাদের নবী বলেছেন,
“হাসরের দিন বলিবেন খোদা
হে আদম সন্তান,
আমি চেয়েছিনু ক্ষুদায়
অন্ন তুমি করোনাই দান।
মানুষ বলিবে, তুমি জগতের
প্রভু,
আমরা কেমনে খাওয়াবো
তোমারে সেকাজ কি হয় কভু?
বলিবেন খোদা, ক্ষুদিত
বান্দা গিয়েছিলো তব দ্বারে,
মোর কাছে তুমি ফিরে পেতে
তাহা, যদি খাওয়াইতে তারে”।
দেখুন, শুধু নামাজ, রোজা,
তাওয়াফ, তেলাওয়াতের জন্য তো মানুষকে দুনিয়েয়াতে পাঠানোর দরকার ছিলো না। দুনিয়া
আখেরাতের আদর্শ পরীক্ষাগার, কারণ এখানে আমাদের শত রকমের দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা,
অভাব, অনটন, রোগ-শোক, ব্যবসা-বানিজ্য, দেশ-জাতি, কতোরকমের স্বার্থের দ্বন্দ্ব।
এসবের ভিতর দিয়ে আমরা কতোখানি ধর্মের প্রকৃত আদর্শে অটল থাকি, সেটাই আমাদের
পরীক্ষা। যে মানুষ শতভাগ ধর্মীয় মূল্যবোধে শক্তিমান আখেরাতের কথা বাদ দিলাম, সে
মানুষ দুনিয়াতেই অবিসংবাদিত, অনুকরণীয় আদর্শ। ধন্যবাদ।
(সজল রোশনের ভিডিও
অবলম্বনে)