ফেসবুকের গল্প - বিপ্লব কুমার দে

 সুমন একটা গল্প লিখেছে গতকাল। ফেসবুকের প্রাইম টাইমে পোস্ট করেছিল, মানে সন্ধ্যা ৮: ৩০-৯:৩০। আলোড়ন ফেলেছে ফেসবুকে। দুই হাজার লাইক,পাঁচ'শ ছাড়িয়েছে কমেন্ট। কয়েকটি গ্রুপে শেয়ার মেলালে সংখ্যাটা অনেক বেশি। 

 

মন্তব্যের প্রত্যুত্তর আর ইমো দিতে গিয়ে কাল অনেক রাতে ঘুমোতে গেছে। কয়েকটি পত্রিকা গল্পটা চেয়েছে ছাপবে বলে। ইনবক্স উপচে পড়ছে।

 

ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে। মিলি'কে তাড়াতাড়ি ভাত রেডি করতে বলেই বাথরুমে ঢোকে সুমন। অফিসে বেরোয় সঠিক সময়েই। বুকটা অহংকারে ভরে আছে। 

 

হালকা নোটিফিকেশনে দেখেছে এখনও ৬৯ টা কমেন্ট দেখা তার বাকি। পথে বেরিয়ে গুনগুন গান ধরে। "সূর্যের মুখে হাসির ঝিলিক, গাছের পাতায় খুশির দোলা, ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে মৌমাছি পাখির দল"। রাস্তার কালো পিচ- সবার মুখে একটাই কথা- "সুমন তুই অসাধারণ।"

 

বাসে উঠে একটা সিট মিলে যায়, ভিড় নেই তেমন। কিন্তু সুমন উঠলে সবাই সুমনের দিকে তাকায়; "দুর্দান্ত দাদা, অকল্পনীয়, দারুণ, তোমার হাত সোনা মোড়া, ফেসবুকে আমার পড়া সেরা গল্প"-- কমেন্টগুলো সুমনের চারপাশে উড়ছে। 

 

 বাসের হাওয়ায় বাতাস হেঁকে যায়, সুমনের ব্যতিক্রমী গল্প। এক অদ্ভুত আবেশ সুমনকে ঘিরে রাখে। সব কাজই করে, কিন্তু মন যেন কেমন উদাসী, ওই গল্প।

 

বাসের সিটে বসেই পাশের যাত্রীর মোবাইলে চোখ রাখে, ফেসবুক খোলা। উৎসাহী চোখ রাখে তাঁর স্ক্রিনে, "আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে কি? কি নাম?"- উত্তর খুঁজতে থাকে সুমন। যাত্রী মোবাইল স্ক্রল করে যায়, আর পটাপট লাইক মেরে যায় সব পোস্টে। একটা হরিলুটের বাতাসা সুমনের কপালেও জুটল।

 

'ফেরারী' গ্রুপে এসে সুমনের গল্পের কাছে থামলেন এই বাসযাত্রী। একবার চোখে চেয়ে দেখেই কমেন্ট সেকসনে লিখলেন "অসম্ভব সুন্দর লিখেছেন"। কয়েকটা পোস্টে লিখলেন "ভাল লাগল", "দারুণ" ইত্যাদি।

 

গেটের কাছে এসে দাঁড়ায় সে, সামনেই স্টপেজ। একটা ইনবক্স চোখে পড়ে, একজনকে লিখছেন "দাদা, আমাদের পুজো সংখ্যায় একটা গল্প চাই", তারপরই কপি পেস্ট, একের পর এক। সুমনের ইনবক্স পিং করে উঠল।

 

অফিসের দুলাল'দা' সুমনের গল্পের বড় ফ্যান। কাল কমেন্টও করেছে "সুমন, তোমার সোনার হাত হোক"। ঢুকতেই দুলালদা' উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়বে "কি দারুণ লিখেছো ভায়া", সারা অফিস তারপর মেতে উঠবে সুমনের গল্প নিয়ে।

 

নাঃ, কিছুই হল না, দুলালদা' হেসে জিজ্ঞাসা করলো "আজ একটু লেট কেন ভায়া, বৌমা কি রাত জাগিয়েছে?" হাসির রোল ওঠে অফিসে। কিন্তু গল্প নিয়ে গুঞ্জন ওঠে না।

 

অফিস থেকে ফেরার পথে পথের পাশে দেখে অসংখ্য ভিক্ষুক, কেউ হাত পেতে, কেউ থালা, কেউ বাটি পেতে। সুমনেরও নিজেকে ভিখারী বলে মনে হয়, "প্রশংসা ভিখারী"!

 

বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে নেমে সুমন বোঝে ফেসবুক জগতটা খুবই ছোট, তার মধ্যে বন্ধুবৃত্তটা আরোই ক্ষুদ্র, আর সাহিত্য সমঝদারের সংখ্যা আঙুলে গোনা। চারপাশ অনেক অনেক বেশি সত্যি।---

- #বিপ্লব কুমার দে

 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url