কুস্বপ্ন!

কুস্বপ্ন!
এমনিতেই রাতে ঘুম হয় না। ঘুমের বড়ি খেয়েও কাজ হয় না। রোজার মাসে নিদ্রার দুর্ভিক্ষ আরো বেড়ে গেছে। প্রায়ই সেহরি খেয়ে, ফজরের নামাজ পড়ার পরও ঘুমাতে আরো ঘন্টাখানেক লেগে যায়।
সেই ঘুমের সমাপ্তি ঘটে দুপুর গড়িয়ে।
সেদিন এমনই এক গভীর ঘুমে একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। স্বপ্নটা প্রথমে ভালো লাগলেও, সমাপ্তি ভালো ছিল না।

দেখা গেলো, ঢাকা ও এর আশেপাশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর রিক্সাচালকদের নিয়ে একটা সমুদ্রবিলাস পার্টি দিতে যাচ্ছে কোনো এক গায়েবি প্রতিষ্ঠান।

বলা হয়েছে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের যতো রিক্সা আছে সবাই গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে। তার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। সে কারণে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব রকমের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরেও যান চলাচল বন্ধ থাকবে যাতে রিকশাগুলো নির্বিঘ্নে বন্দরে পৌঁছতে পারে। বন্দরে রিকশা চালকদের জন্য অপেক্ষায় থাকবে একটা বহুতলবিশিষ্ট বিলাসবহুল জাহাজ। যাতে করেই শুরু হবে সমুদ্রবিলাস ভ্রমণ।

যে কথা সেই কাজ। বন্দর এলাকা থেকে পার্কিং করতে করতে পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট পর্যন্ত রিক্সার ডাম্প হয়ে গেলো।

রিকশাচালকরা একে একে জাহাজে গিয়ে উঠলো। জাহাজ যখন মাঝ সমুদ্রে, সবাই আনন্দ উল্লাসে মশগুল। হঠাৎ এক গায়েবী আওয়াজ এল, তোরা আর কেউ এখান থেকে কুলে ভিড়তে পারবি না! তোদের জাহাজ এখানেই ডুবিয়ে দেয়া হবে!

স্বপ্নে দেখলাম সত্যি সত্যি ডুবে যাচ্ছে জাহাজ, আর জাহাজের আরোহীরা কুলে ফেরার জন্য সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কিন্তু প্রবল ঢেউ ভেঙে কারো পক্ষে আর কুলে ভেড়া সম্ভব হলো না। জাহাজটাও গুরপাক খেতে খেতে এক সময় উধাও হয়ে গেলো।

এখন চট্টগ্রামে ডাম্প করা রিক্সার কি হবে? সিটি কর্পোরেশন পড়লো বিপাকে। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো, রিক্ষাগুলো সব BSRM কে দিয়ে দেয়া হবে। সেখান থেকে যা টাকা পাওয়া যায় তার সাথে আরো কিছু যোগ করে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে দেয়া হবে। মানুষ তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না, "আল্লাহর মাল আল্লাহয় নিয়ে গেছে"!

পরদিন ঢাকা শহরে একটা রিকশাও নাই। সিদ্ধান্ত হলো, ঢাকা শহরে আর কোনো রিকশা চলবে না। তিন চাকার ইজিবাইকের পারমিশন দেয়া হবে, যাতে সংখ্যায় রিকশার চেয়ে কিছু কম হয়। বেশি প্যাসেঞ্জার বহন করা যায়। ফলে যানজট যদি কিছু কমে।

ঢাকা এখন সম্পূর্ণরূপে রিক্সামুক্ত! স্বপ্ন
দেখেই যাচ্ছি, হঠাৎ পুনঃপুনঃ উড়োজাহাজের শব্দে ঘুম অর্ধেক ভেঙে গেলো। বাকি অর্ধেক ভাঙ্গলো ময়নাপাখির(নাতনি) ডাকে। আমার ঘুমের সুযোগে সে বালিশের পাশে রাখা মোবাইল নিয়ে কার্টুন দেখছিল। এ কাজটি সে নিয়মিতই করে।

বাসার সাহায্যকারী মেয়েটি নাতনির খেলার সাথী হিসেবেও ভূমিকা রাখে। তার ইন্ধনে বারান্দায় গিয়ে হেলিকপ্টার দেখে এসে নাতনি উচ্চস্বরে ডেকে তুললো। ভয়ঙ্কর স্বপ্নটাও কেটে গেলো।
পরে জানা গেলো, বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর!

এ জন্যেই কি এই ভয়াবহ বিদঘুটে অলুক্ষণে স্বপ্নটা দেখছিলাম? আল্লাহ সহায় হোন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url