রোগীর ছেলে বন্ধক! ডা: রবি কান্নান এর পদ্মশ্রী পাওয়ার নেপথ্য কাহিনী
"ছেলে বন্ধক রেখে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন ধর্মনগরের এক ক্যানসার রোগী। বরাক উপত্যকার ক্যানসার বিশেষজ্ঞ রবি কান্নানের পদ্মশ্রী প্রাপ্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেই ঘটনা।
কান্নানের কথায়, ‘‘ছোটখাটো ঘটনা মনে হতে পারে। কিন্তু ওই পরিস্থিতিগুলির মুখে না-পড়লে জীবনটাকে জানতে পারতাম না। সাধারণ চিকিৎসক হয়েই থাকতাম।
"ক্যানসার ধরা পড়েছিল ধর্মনগরের রমেশ নমঃশূদ্রের (নাম পরিবর্তিত)। কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ধর্মনগর থেকে বারবার শিলচর আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। ২০০৮ সালে শেষ ডোজটি নেওয়া হয়ে গেলে চিকিৎসক কান্নান যখন পরবর্তী তারিখটা লিখতে যাবেন, রমেশ কাঁদতে থাকেন। হাতজোড় করে বলেন, আর তারিখ দেবেন না। চোখে জল তার স্ত্রীরও।
কান্নান জানতে চান, সমস্যাটা কী? ৪৫ বছর বয়সী দিনমজুর রমেশ বলেন, ‘‘এবারই আসতে চাইছিলাম না। কী করে আসব। কাজকর্ম বন্ধ কত দিন!
"সব বিক্রি করে চিকিৎসা করাচ্ছেন রমেশ। এখন বাকি শুধু বসতবাড়িটা। খদ্দের মেলেনি। তাই এলাকারই এক জনের কাছে ৭ বছরের ছেলেকে বন্ধক রেখে ৫ হাজার টাকা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন এবার। ফিরে গিয়ে বাড়ি বিক্রি করে ছেলেকে মুক্ত করবেন।
কথাটা শুনে স্থির থাকতে পারেননি কান্নানও। চশমা খুলে রুমালে চোখ মোছেন। ডেকে পাঠান হাসপাতালের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার কল্যাণ চক্রবর্তীকে। ৫ হাজার টাকা রমেশকে দিতে বলেন। সঙ্গে জানান, তার পুরো চিকিৎসা বিনা খরচে হবে। কিন্তু সমস্যা হল, কাজের মরসুমে টাকা পেলেই কি ছেলেকে ছেড়ে দেবে! কিছু দিন তো খাটাবেই।
কান্নান ফোন করেন ধর্মনগরের তখনকার বিধায়ক অমিতাভ দত্তকে। তাঁর মধ্যস্থতায় ছেলেকে মুক্ত করান রমেশ।
কান্নান সেদিন বুঝতে পারেন, শুধু ওষুধ লিখে দিলেই হয় না। কিনে খাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কি না, তা-ও ডাক্তারকে জানতে হবে। না-থাকলে ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে।
রমেশের ঘটনা সোসাইটি পরিচালিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। শুরুতে রোগীর তথ্যপঞ্জি লিপিবদ্ধ করা হয়। সঙ্গে নিজের বা পরিচিত জনের ফোন নম্বর। নির্ধারিত দিনে না এলেই হাসপাতাল থেকে ফোন যায়, কেন এলেন না? কী সমস্যা? দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে রোগীকে নিয়ে আসার দায়িত্ব নেয় হাসপাতাল।
শিলচরের মানুষ সোসাইটি বানিয়ে চাঁদা তুলে গড়ে তুলেছেন কাছাড় "ক্যানসার হসপিটাল সোসাইটি"। ২০০৬ সালে কান্নান চেন্নাই থেকে এখানে আসেন। এখন তিনিই ডিরেক্টর। সঠিক হিসেব জানা না গেলেও অনেকেই বলছেন, ৭ হাজারের বেশি ক্যানসার রোগীর জটিল অস্ত্রোপচার করেছেন কান্নান। একটি টাকাও নেননি রোগীর কাছ থেকে। সে জন্যই বাছাই করা হয়েছে তাঁকে।
অনেকে বলেন, এখনও তিনি সোসাইটি থেকে যে বেতন নেন, তা রাজ্য সরকারের একজন এমবিবিএস ডাক্তারের থেকে বেশি নয়।
কান্নান মনে করেন, পদ্মশ্রী এনে দিয়েছেন ওই রমেশই।
-সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
======================
"আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?"
কবি কুসুম কুমারী দাশের স্বপ্ন বাঙাল মুল্লুকে অবাস্তবই রয়ে গেলো!😭