ঢাকার অর্ধেক রাস্তা ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে
হাঁটতে হাঁটতে মালিবাগ রেল গেটের কাছে গেছি। যেদিনই যাই দুই একটা ট্রেন আসা যাওয়া দেখতে পাই। আজ ফিরে আসার সময় ভাবলাম, আজ একটা ট্রেনও গেল না, একটু দাঁড়াই। মুহূর্তেই ট্রেন আসার সাইরেন বাজতে শুরু করল গেটে। ওদিকে রাস্তায় রিকশার জ্যাম। রেললাইনের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো বাসের কারণে গেটম্যান গেট বন্ধ করতে পারছে না। দিশা না পেয়ে পেছনের বাস সামনের বাসের বাম্পারে ঠাস ঠাস করে মারতে লাগলো। ট্রেন মাত্র ১ মিনিটের দূরত্বে। ভাগ্যিস সামনে একটু ক্লিয়ার হওয়াতে বাসটা রেললাইন থেকে নামতে পেরেছিল।
এমনিতেই যানজটে নাকাল ঢাকা। তার উপরে রাস্তার দুইপাশ জুড়ে চলমান দোকান। ফুটপাত তো পাশের দোকানিদের দখলে। মালিবাগ রেলগেট এর কাছে অনেকগুলো এমন দোকান আছে। তবে রেললাইন ঘেঁষে থাকা কিছু ফুটপাত ব্যবসায়ীর কারণে অনেক লোক বেঁচে যায়। ট্রেন আসার সময় অনেক পথচারী এবং রিক্সাওয়ালাকে তারাই সতর্ক করে।
ফুটপাত এবং রাস্তা জুড়ে হকারদের ব্যবসা করতে দেয়া এক প্রকার জনসেবাই বটে!
হকারদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ হয়। যে কাজটি পুলিশ এবং স্থানীয় মাস্তানরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে করে থাকে! কিন্তু সমস্যা হলো, যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। রাস্তার পাশে ভ্যান দোকানের করণে রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে একজন(নিচের ছবি)।
আমাদের মহল্লার রাস্তার দুইপাশে অনেক ভাসমান দোকান আছে। এমন এক পান দোকানির ভাতিজা এসেছে গ্রাম থেকে। ১৫-১৬ বছর বয়স। লেখাপড়া করেনি কিছুই। বোম্বেটে গোছের, তাই বাপে পাঠিয়ে দিয়েছে চাচার কাছে। চাচা সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় কোন এক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ভাতিজাকে এক ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন সকালে যাত্রাবাড়ী থেকে শ'খানেক বা তার বেশি আনারস নিয়ে আসে। সিদ্ধেশ্বরী ওই স্কুলের সামনে ভ্যানের উপরে আনারস কেটে কাসন মাখিয়ে বিক্রি করে। প্রতিদিন ৫-৭০০ টাকা লাভ থাকে। বললামঃ
- ভ্যান ভাড়া কত দিতে হয়?
- "১০০ টাকা"।
- "তাহলেতো কমই খরচ"।
- "আরো খরচ আছে"।
- "আর কি খরচ"?
- "৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়"।
- "কে নেয় এই চাঁদা, স্কুল কর্তৃপক্ষ"?
- "না না, পুলিশ পরিচয়ে একজন নেয় ২০ টাকা, ফাঁড়ির কথা বলে একজন ২০ টাকা, মাস্তান পরিচয় দিয়ে একজন নেয় ১০ টাকা"।
তাহলে ফুটপাত এবং রাস্তা হকার মুক্ত হবে কিভাবে? এদিকে দিন দিন যানবাহন এর সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। পদ্মা সেতু হওয়াতে তা দ্বিগুণ হয়েছে।